শনিবার, ৮ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইসলামের কয়েকটি মৌলিক শিষ্টাচার

ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ

হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেছেন, ‘যার মধ্যে শিষ্টাচার নেই তার মধ্যে কোনো জ্ঞান নেই।’ মুহাম্মদ ইবনে উমার নববি, নাসাইহুল ইবাদ ফি বায়ানিল আলফাজ। কথাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তা ছাড়া বলা হয়, ‘একজন মানুষ কথা বলতে শেখে দুই বছরে আর কখন কোন কথা বলতে হয় তা শিখতে লাগে সারাটি জীবন।’ এ শিষ্টাচার প্রশিক্ষণে ইসলাম সবচেয়ে আধুনিক, অগ্রগামী। সভ্যতার ইতিহাসে ইসলামী শিষ্টাচারের বৈশিষ্ট্য অনন্য। কারণ এটি আমাদের সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ জীবনবিধান। সূরা মায়েদাহ, আয়াত ৩। এখানে দুনিয়া ও পরকালের শান্তির জন্য যে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তার কোনো বিকল্প নেই এবং হবেও না। এ নিবন্ধে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কয়েকটি মৌলিক শিষ্টাচার তুলে ধরা হলো যার বাস্তবায়নে আমাদের ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে একে অন্যের মাঝে সম্প্রীতি বৃদ্ধির পাশাপাশি শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।  ১. যে কোনো কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা। আমরা বৈধ যে কাজই করি না কেন তার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ (আল্লাহর নামে শুরু করছি) বলাটা ইসলামের অন্যতম শিষ্টাচার। এর মাধ্যমে প্রতিটি কাজের শুরুতেই আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। সুতরাং সেখানে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করার সম্ভাবনা কমে যায় আর আল্লাহর নাম নেওয়ার কারণে, তাকে স্মরণ করার কারণে সে কাজে বরকত বাড়িয়ে দেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে কোনো কাজ যার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হয়নি তা (আল্লাহর রহমত থেকে) বিচ্ছিন্ন।’ সুনানে আহমদ, খন্ড ১৪। বাস্তবিকভাবেও বিশেষ বিশেষ কাজের শুরুতে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবিদের নির্দেশ দিয়েছেন ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে। আমরা একটি হাদিসে পাই, হজরত ওমর বিন আবি সালামাহ বলেন, ‘আমি যখন ছোট ছিলাম তখন খাওয়ার সময় পাত্রের (প্লেটের) এদিক-সেদিক থেকে গ্রহণ করতাম। তখন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে নির্দেশ দিলেন, “হে বৎস! আল্লাহর নাম নিয়ে খাবার শুরু কর, ডান হাত দিয়ে খাও এবং পাত্র থেকে তোমার নিকটবর্তী স্থান থেকে খাবার গ্রহণ কর।” এর পর থেকে খাবারের সময় তাঁর নির্দেশনাই পালন করে চলি।’ বুখারি। ২. সম্বোধনের শুরু হবে ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বলে: সালাম দিয়েই আমাদের একে অন্যের মাঝে কথাবার্তা শুরু হবে। ইসলামের একটি সুন্দরতম শিষ্টাচার হলো যখন মুমিন, মুসলিম একে অন্যের সাক্ষাৎ হয় তখন শুরুতেই একে অন্যের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করে।

৩. খাদ্য ও পানাহার ডান হাত দিয়ে গ্রহণ করা : কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া একজন মুসলিমের জন্য বাঁ হাত দিয়ে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা বৈধ নয়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যখন কেউ খাদ্য গ্রহণ করে সে যেন ডান হাত দিয়ে খায় আর যখন পানীয় পান করে, সে যেন ডান হাত দিয়ে পান করে। কারণ, শয়তান বাঁ হাত দিয়ে খায় এবং পান করে।’ মুসলিম। এটাও অন্যতম সুন্নাহ যে, খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ (সংক্ষেপে ‘বিসমিল্লাহ’) বলা। আবু দাউদ ও তিরমিজি। খাওয়া শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আত’আমানা, ওয়া সাকানা, ওয়া জা’আলানা মিনাল মুসলিমিন’ সংক্ষেপে আলহামদুলিল্লাহও বলা যেতে পারে। আবু দাউদ ও তিরমিজি।

৫. উপকারীর উপকার স্বীকার করা এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ : প্রকৃতিগতভাবে মানুষ প্রশংসা পছন্দ করে। যখন কেউ কোনো ভালো ও কল্যাণকর কাজ করে তখন ওই ব্যক্তিকে তার কাজের জন্য প্রশংসা করলে সে আনন্দিত হবে এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো ও কল্যাণকর কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই প্রশংসা করার শিষ্টাচার সম্পর্কে অবহিত করেছে ইসলাম। কেউ কাউকে যে কোনো ধরনের উপকার করলেই সঙ্গে সঙ্গে তার কৃতজ্ঞতায় বলা উচিত ‘জাজাকাল্লাহু খায়রান’ (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন)। এ ক্ষেত্রে আমরা পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুকরণে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বা ‘ধন্যবাদ’ না বলে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো পরিভাষা ব্যবহার করলে সুন্নত পুনরুজ্জীবিতকরণের সওয়াব পাব। ইনশা আল্লাহ।

সর্বশেষ খবর