সোমবার, ১০ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

রমজান-পরবর্তী আমল

যুবায়ের আহমাদ

রমজান-পরবর্তী আমল

বিদায় নিল মাহে রমজান। রমজানে মুসলমানরা অন্যায়, অপরাধ ও গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। রমজানের সে প্রশিক্ষণ জীবনভর ধরে রেখে সব ধরনের গুনাহের কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারলেই সে প্রশিক্ষণ হবে সার্থক। রমজানে অনেক আমলের মাঝে ব্যস্ত ছিল মুমিনরা। রমজান চলে গেলেও কিছু আমলের মাধ্যমে রমজানের প্রশিক্ষণ ধরে রাখা দরকার। সেগুলো হলো :  ১. নেককাজগুলো চলমান রাখা। রমজানে যেসব অতিরিক্ত নফল আমল আমরা শুরু করেছিলাম, সেগুলো যেন রমজানের পর বন্ধ না হয়ে যায় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি যেসব গুনাহের কাজ ও বদভ্যাস রমজানে আমরা ত্যাগ করেছিলাম সেগুলো যে রমজানের পর আবার চালু না হয়ে যায় সেদিকেও গুরুত্বের সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে। চাইলেই যে আমরা বদভ্যাস ছেড়ে দিতে পারি এর অনন্য এক প্রমাণ ছিল রোজা। যেমন একজন ধূমপায়ী কিন্তু রোজা রাখতে গিয়ে রোজার দিনে ধূমপান করেননি। তার মানে তিনি চাইলেই ধূমপান ছেড়ে দিতে পারেন। তাই রমজান-পরবর্তী আমাদের উচিত নেককাজগুলো চালিয়ে যাওয়া এবং গুনাহের কাজগুলো থেকে দূরে থাকা। ২. ছুটে যাওয়া রোজাগুলোর কাজা আদায় করা। কাজা হলো বকেয়া আদায়। অসুস্থ ব্যক্তি ও মুসাফিরের জন্য রমজানের রোজা ছাড়ার অনুমতি আছে। মুসাফির এবং অসুস্থ ব্যক্তির মতো হায়েজ ও নেফাসগ্রস্ত নারীর জন্যও রোজা ছাড়ার অনুমতি আছে। তেমনি নিজের অথবা সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীরও রোজা ছাড়ার অনুমতি আছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটিতে (রমজানে) উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে ব্যক্তি অসুস্থ বা মুসাফির হয়, সে অন্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে, আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজটাই চান, কঠিন করতে চান না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)। এসব কারণে যারা রমজানের রোজা ছেড়েছেন তাদের সেই ছুটে যাওয়া রোজাগুলো আদায় করে নেওয়ার সবচেয়ে উপযোগী সময় হলো রমজান-পরবর্তী শাওয়াল মাস। বিলম্বে আদায় জায়েজ হলেও যত সম্ভব তাড়াতাড়ি আদায় করে নেওয়া উচিত। ৩. রমজানের কাফফারা আদায় করা। কাফফারা হলো জরিমানা। মুসাফির এবং অসুস্থ ব্যক্তির মতো যাদের ইসলাম রোজা ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে, তারা ব্যতীত অন্য কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার বা স্ত্রী সম্ভোগের মাধ্যমে একটি রোজাও ছাড়েন তাহলে এর জন্য কাজা ও কাফফারা উভয়ই আদায় করতে হয়। রোজা কাফফারা হলো বিরতিহীনভাবে ৬০টি রোজা রাখা। ৬০টি রোজা যেমন শর্ত তেমনি তা লাগাতার হওয়াও শর্ত। তাই যদি কেউ কাফফারা আদায় করতে গিয়ে ৬০তম দিনেও অসুস্থ হয়ে সে রোজা ভেঙে ফেলে তবে তাকে আবার প্রথম  থেকে কাফফারা আদায় শুরু করতে হবে। রোজা রাখতে অক্ষম হলে ৬০ জন মিসকিনকে দুবেলা খানা খাওয়াতে হবে। অথবা প্রতি মিসকিনকে এক ফিতরা পরিমাণ খাদ্য বা অর্থ দিয়েও কাফফারা আদায় করা যাবে। কাজা ও কাফফারা আদায় রমজান-পরবর্তী শাওয়াল মাসেই অবিলম্বে শুরু করা উচিত।

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ, বোর্ড বাজার (আ. গনি রোড), গাজীপুর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর