শনিবার, ১৫ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

দীনি শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত

মুফতি মিজানুর রহমান : সিনিয়র পেশ ইমাম

সকল প্রশংসা রব্বুল আলামিনের জন্য যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আর শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। সালাত ও সালাম অন্ধকারাচ্ছন্ন পৃথিবীর আলোর দিশারি মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি, যিনি বলেছেন, ‘আমি শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি।’ আল্লাহ রব্বুল আলামিন এই পৃথিবীর বুকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এক মহান উদ্দেশ্য সামনে রেখে, আর তা হলোÑ একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা এবং গাইরুল্লাহর ইবাদতকে বর্জন করা। আল্লাহর ও গাইরুল্লাহর ইবাদতের মাঝে পার্থক্য জানতে হলে, অন্ধকার থেকে আলোকে পার্থক্য করতে হলে, হক ও বাতিলকে চিনতে হলে, হেদায়াত ও গোমরাহির মাঝে দূরত্ব বুঝতে হলে দীনি ইলম অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মহান আল্লাহ কর্তৃক তাঁর রসুলের প্রতি প্রথম পাঠ হলো-  ‘পড়, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপি- থেকে।’ (সূরা আলাক-১-২)। মানুষ ইলম (জ্ঞান) অর্জন করবে, সে অনুযায়ী আমল করবে এবং নিজেদের মাঝে ইলম প্রচার করবে এটাই আল্লাহর দাবি। আর এজন্যই আল্লাহ জ্ঞানার্জনের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। ‘সুতরাং এমন কেন হয় না যে, তাদের প্রতিটি বড় দল থেকে এক একটি ছোট দল বের হবে যাতে তারা দীনি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আর যাতে তারা নিজ কওমকে ভয় প্রদর্শন করতে পারে যখন তারা ওদের কাছে প্রত্যাবর্তন করে, যেন তারা সতর্ক হয়।’ (সূরা তওবা, আয়াত ১২২)। মানুষ অজ্ঞ-মূর্খ হয়ে পৃথিবীতে আসে। আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছি, যা সে জানত না।’ (সূরা আলাক, আয়াত ৫)। ইলম বা জ্ঞান দ্বারা ভালো-মন্দ নির্ণয় করা যায়। এর দ্বারা অন্যায়ের প্রতিরোধ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব। সুতরাং আল্লাহ যার মঙ্গল চান এবং যার দ্বারা হকের বাস্তবায়ন সম্ভব তাকেই মহামূল্যবান জ্ঞান দান করেন। যেহেতু জ্ঞানের মালিক আল্লাহ, তাই এই জ্ঞান আল্লাহ যাকে চান তাকে দান করেন। তিনি বলেন, তিনি যাকে ইচ্ছা হিকমত দান করেন এবং যাকে হিকমত দান করা হয় তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয় এবং কেবল বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরাই শিক্ষা গ্রহণ করে।’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত ২৬৯)। এ সম্পর্কে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দীনের জ্ঞান দান করেন।’ ইলম আল্লাহ-প্রদত্ত এক অফুরন্ত নিয়ামত; যা জ্ঞানী ও মূর্খদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। আল্লাহ বলেন, ‘বলুন! যারা জানে এবং যারা জানে না তার কি সমান?’ (সূরা জুমার, আয়াত ৯)। তিনি অন্যত্র বলেন, ‘বলুন! অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? আলো ও অন্ধকার কি এক হতে পারে?’ (সূরা রাদ, আয়াত ১৬)।

মহান আল্লাহ সম্পর্কে যারা সঠিক ধারণা রাখে এবং তার শরয়ি বিধি-বিধান পরিপূর্ণভাবে জানে এবং মেনে চলে তারাই প্রকৃত জ্ঞানী। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে মূলত আলেমরাই তাঁকে ভয় করে।’ (সূরা ফাতির)। ইলম অর্জনের মর্যাদা অত্যধিক। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং আল্লাহ যাদের জ্ঞান দান করেছেন তাদের উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করবেন। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত।’ (সূরা মুজাদালাহ, আয়াত ১১)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইলম হাসিল করার উদ্দেশ্যে পথ চলবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেবেন।’ বর্তমান সমাজ প্রকৃত শিক্ষাকে ভুলে কুশিক্ষার দিকে ধাবমান। সন্তান পিতা-মাতাকে, পিতা-মাতা সন্তানকে, ছোট ভাই বড় ভাইকে, এক মুসলিম অন্য মুসলিমকে অপমান-অপদস্থ করতে সামান্য দ্বিধাবোধ করে না। মুসলিমরা পৃথিবীর আনাচ-কানাচে প্রতিটি জায়গায় নিপীড়নের শিকার। পৃথিবীতে অশান্তির দাবানল দাউ দাউ করে জ্বলছে। এর প্রকৃত কারণ প্রকৃত শিক্ষা ভুলে যাওয়া। তাই বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে যদি প্রকৃত শিক্ষা কোরআন ও সহি সুন্নাহর আলোকে সমন্বয় করা হয় তাহলে অল্প সময়ের মধ্যে গোটা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তাই আসুন! অভ্রান্ত সত্যের চূড়ান্ত উৎস আল কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা গ্রহণ করে দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করি এবং আখেরাতের পাথেয় সঞ্চয় করি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

সর্বশেষ খবর