মঙ্গলবার, ১৮ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

রক্তদান সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ

রক্ত মানবদেহের অবশ্য-প্রয়োজনীয় উপাদান। শরীরের অভ্যন্তরে এর অবস্থান এবং যতক্ষণ তা শরীরের ভিতরে আছে তা পবিত্র। কিন্তু যখনই তা শরীরের বাইরে আসে তখন তা অপবিত্র। এটি কোনোক্রমেই ভক্ষণযোগ্য নয়। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য হারাম (নিষিদ্ধ) করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শূকরের মাংস ও যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য উৎসর্গ করা হয়...’ (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত ১৭৩, সূরা মায়েদাহ, আয়াত ৩)।

রক্ত কেনাবেচা : উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে শরিয়ত এ বিষয়ের বিধান নির্ধারণ করেছে। সর্বসম্মতিক্রমে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে রক্ত কেনা কিংবা বেচা হারাম (অবৈধ/নিষিদ্ধ)। তিনটি কারণ এর পেছনে রয়েছে। প্রথমত মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গসহ অন্যান্য শারীরিক আনুষঙ্গিক জিনিসের পূর্ণ মালিকানা আল্লাহর। তাই এটি কেনাবেচার অধিকার স্রষ্টাকর্তৃক সংরক্ষিত। দ্বিতীয়ত এটি অপবিত্র বস্তু। শরিয়তের বিধান হলো অপবিত্র ও নিষিদ্ধ বস্তুর কেনাবেচা কিংবা ব্যবসা সবই নিষিদ্ধ/অবৈধ। এবং তৃতীয়ত জীবননাশের হুমকিস্বরূপ। এটি ফলাফলগত কারণ। ইসলামী শরিয়তের পাঁচটি মৌলিক উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথম উদ্দেশ্য হলো ‘হিফজু আন-নাফস’ বা ‘জীবনের নিরাপত্তা/সংরক্ষণ’ নিশ্চিত করা। রক্ত কেনা কিংবা বেচা উভয়ই মানবজীবন নাশের আশঙ্কা তৈরি করে।

উল্লেখ্য, রক্তদাতা যদি বিনামূল্যে রক্ত দিতে না চান তাহলে জরুরি পরিস্থিতিতে রক্ত কেনা বৈধ হবে কিন্তু বিক্রেতার পাপ হবে। (দেখুন : মুফতি মুহাম্মদ শফি, জাওয়াহিরুল ফিকহ, খ- ২, পৃষ্ঠা ৩৮)।

রক্তদান ও রক্তদাতার বিধান : শরিয়তের প্রতিটি বিধান যেহেতু মানবতার জন্য, সৃষ্টির কল্যাণের জন্য সেহেতু এ বিষয়গুলোকে লক্ষ্য রেখে প্রয়োজন ও পরিস্থিতি অনুযায়ী কোনো কোনো অবৈধ (হারাম) বিষয়কে বৈধতা দিয়েছে শর্তসাপেক্ষে। তদ্রƒপ হলো রক্ত দান করার ব্যাপারটি। এটি যদি এমন পরিস্থিতিতে হয় যে, রক্তগ্রহীতার মৃত্যুর আশঙ্কা আছে এবং রক্তদাতার বিকল্প কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই রক্ত দেওয়া বৈধ। এখানে দুটি কারণ রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। প্রথমত রক্তগ্রহীতার জীবন রক্ষার চেষ্টা করা। কোরআন সরাসরি বলেছে, ‘যে কোনো একজন ব্যক্তির জীবন রক্ষা করল সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করল।’ (সূরা মায়েদাহ, আয়াত ৩২)। দ্বিতীয়ত অনোন্যপায় হওয়া। অর্থাৎ বিকল্প কোনো কিছু না পাওয়া। (সূরা বাকারাহ, আয়াত ১৭৩)।

রক্তদান বৈধ হওয়ার ব্যাপারে শরিয়ত বিশেষজ্ঞরা যেসব যৌক্তিক কারণ রয়েছে বলে মনে করেন তা হলো- এক. শরীরের অন্য আনুষঙ্গিক বিষয়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। যেমন মায়ের দুধ। এটি শিশুর প্রয়োজনে যেমন ব্যবহারযোগ্য তেমনি রক্তও অন্যের জীবন বাঁচানোর জন্য জরুরি।

দুই. এটিতে কাটাছেঁড়ার কোনো প্রয়োজন পড়ে না বরং ইনজেকশনের মাধ্যমে ব্যথাহীনভাবে নেওয়া যায়।

লেখক : শিক্ষাবিদ, গবেষক।

সর্বশেষ খবর