রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

নফল রোজা

যুবায়ের আহমাদ

নফল রোজা

ফরজ ও ওয়াজিব ইবাদত ছাড়া অন্য ইবাদতই নফল। নফল ইবাদত করার ব্যাপারে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কিরামকে উৎসাহ দিয়েছেন। কিয়ামতের দিন নফল ইবাদতের দ্বারা ফরজের ঘাটতি পূরণ করা হবে বলেও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের বাইরে যেমন রয়েছে নফল নামাজ তেমনি রমজানের ফরজ রোজার বাইরেও রয়েছে বিভিন্ন প্রকার নফল রোজা। নফল রোজাগুলো বাধ্যতামূলক নয়, তবে এগুলো আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভের অনন্য উপায়। হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি রোজা রাখবে, আল্লাহ তার মুখম-ল দোজখের আগুন থেকে সত্তর বছরের রাস্তা দূরত্বে সরিয়ে দেবেন।’ বুখারি, মুসলিম। তাই আমাদের উচিত রমজান ছাড়া অন্য ১১ মাসে মাঝেমধ্যে অন্তত নফল রোজা রেখে রমজানের চর্চা সারা বছরই ধরে রাখা। বিভিন্ন ধরনের নফল রোজার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজা : সপ্তাহে দুই দিন অর্থাৎ সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা সুন্নত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুই দিন রোজা রাখতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার (আল্লাহর কাছে) আমল উপস্থাপন করা হয়। তাই আমার আমল উপস্থাপন করার সময় রোজারত থাকাকে পছন্দ করছি।’ তিরমিজি। আইয়ামে বিজের রোজা : প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজাই আইয়ামে বিজের রোজা। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রোজাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে রাখতেন। যেহেতু প্রত্যেক ভালো কাজের সওয়াব ১০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাই যে ব্যক্তি প্রতি মাসে এ তিনটি রোজা রাখবে সে সারা মাস রোজার সওয়াব পাবে। আর এভাবে যে ব্যক্তি প্রতি মাসেই তিন দিন রোজা রাখবে সে সারা বছরই রোজা রাখার সওয়াব পাবে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘... তোমার জন্য প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখাই যথেষ্ট হবে। এভাবে সারা জীবনভর রোজা রাখার সওয়াব পাবে। কারণ প্রতিটি ভালো কাজের বিপরীতে এর ১০ গুণ সওয়াব দেওয়া হয়।’ নাসায়ি। আশুরার রোজা : আশুরা অর্থ দশমী। ইসলামের পরিভাষায় হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস মহররমের দশম দিনটিই আশুরা। আশুরার রোজার পুরস্কার হিসেবে আগের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি আশা করি, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহর কাফফারা করবেন।’ মুসলিম। ইহুদিদের ব্যতিক্রম করতে আশুরার সঙ্গে এর আগে অথবা পরে এক দিনের রোজা যুক্ত করা সুন্নত। শাবানের রোজা : শাবান মাসে (রমজানের আগের মাস) রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি রোজা রাখতেন। এ মাসের রোজাও বিশেষ ফজিলতের। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান ছাড়া কোনো মাস পূর্ণ রোজা পালন করেননি এবং শাবান অপেক্ষা বেশি নফল রোজা অন্য কোনো মাসে রাখেননি।’ মুসলিম। শাওয়ালের ছয় রোজা : এ রোজাগুলো রাখলে সারা বছরের রোজার সওয়াব লাভ করা যায়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল অতঃপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ মুসলিম।

লেখক : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কারি ও খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ, বোর্ড বাজার, গাজীপুর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর