মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইসলামের দৃষ্টিতে গিবত বা কুৎসা রটনা

মাওলানা মেরাজুল ইসলাম চাঁদপুরী

গিবতের শাব্দিক অর্থ হলো কুৎসা, পরনিন্দা বা পরোক্ষ নিন্দা। পরিভাষায় গিবত বলা হয়, কারও অনুপস্থিতিতে এমন কিছু বর্ণনা করা বা সমালোচনা করা যা সে শুনলে মনে কষ্ট পাবে। আল কোরআনে সূরা হুজুরাতের ১২ নম্বর আয়াতে মানুষের দোষ অনুসন্ধান করা মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এ ছাড়া গিবত সম্পর্কে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মুসলমানের গিবত কোরো না এবং তাদের দোষ অনুসন্ধান কোরো না। কেননা, যে ব্যক্তি মুসলমানের দোষ অনুসন্ধান করে, আল্লাহ তার দোষ অনুসন্ধান করেন। আল্লাহ যার দোষ অনুসন্ধান করেন, তাকে নিজের ঘরেও লাঞ্ছিত করেন।’ কুরতুবি।  সূরা নূরের ৪ থেকে ২০ নম্বর আয়াত পর্যন্ত মিথ্যা অপবাদ রটানো, ব্যভিচার ও গিবত বা সমালোচনাকারীদের শাস্তি সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে এবং ১১ নম্বর আয়াতের শেষে বলা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের জন্য ততটুকু রয়েছে, যতটুকু সে (অপবাদ রটানোর) গুনাহ করেছে এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্য রয়েছে বিরাট শাস্তি। যদিও এ আয়াতগুলো ষষ্ঠ হিজরিতে বনি মুসতালিক নামান্তরে মুরায়সি যুদ্ধের সময় হজরত আয়শা (রা.)-এর পবিত্রতা সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ রটনাকারী মুনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ও তার সঙ্গীদের সম্পর্কে নাজিল হয়েছে। কিন্তু কোরআনের বিধান তো কিয়ামত পর্যন্ত চলবে, তাই যারা এ ধরনের কাজে, গিবত বা সমালোচনায় ও মিথ্যা অপবাদে জড়িয়ে পড়বে তারা সবাই এই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে। তাফসিরে মায়ারেফুল কোরআনে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি এ খবর (মিথ্যা অপবাদ, গিবত বা সমালোচনা) রচনা করেছে বা করবে সে সর্বাধিক আজাব ভোগ করবে।  আর যে খবর শুনে সমর্থন করেছে, সে তদপেক্ষা কম শাস্তি ভোগ করবে। আর যে শুনে নিশ্চুপ রয়েছে (প্রতিবাদ করেনি) সে আরও কম শাস্তি ভোগ করবে।’ গিবতের ভয়াবহতা সম্পর্কে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘গিবত জেনা থেকেও মারাত্মক।’ মিশকাত। যখন এ হাদিস রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন, তখন সাহাবায়ে কিরাম আরজ করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! এটি কীরূপে? তখন তিনি বললেন, ‘এক ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তওবা করলে তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু যে গিবত করে, তার গুনাহ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মাফ না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।’ তাফসিরে মাজহারি। এ ছাড়া শবেমেরাজের হাদিসে একদল গিবতকারী তাদের মুখম-ল ও দেহের গোশত আঁচড়াচ্ছিল বলে বর্ণনা পাওয়া যায়।

গিবত, মিথ্যা অপবাদ, কুৎসা রটানো কিংবা কারও সমালোচনাÑ এই গর্হিত কাজগুলো সমাজকে নষ্ট করে, কলুষিত করে এবং পরিবেশ দূষিত করে। আর গিবতের মধ্যে মিথ্যার আশ্রয় বেশি থাকে এবং গিবতের প্রধান উৎস হলো হিংসা।

হিংসা সম্পর্কে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা হিংসা থেকে দূরে থাকো, কেননা হিংসা নেকি ধ্বংস করে দেয়, যেমন আগুন শুকনো কাঠ ধ্বংস করে (জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাই করে)।’ আবু দাউদ।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে গিবত, কুৎসা, হিংসা, মিথ্যা অপবাদ ও সমালোচনা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন।

লেখক : পরিচালক, মাদ্রাসাতু ইকরা ও হাফসা (রা.) মহিলা মাদ্রাসা, মৌচাক, গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর