শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

মানুষের জন্য দোয়া করে প্রকৃতি

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

মানুষের জন্য দোয়া করে প্রকৃতি

গ্রীষ্মের দাবদাহে পৃথিবী যখন চৌচির হয়ে যায়, প্রাণিকুলের বেঁচে থাকা যখন কষ্টকর হয়, তখন পৃথিবীকে মনে হয় শতবর্ষী বৃদ্ধ। এই তীব্র হতাশায় রহমতের ঝরনা খুলে দেন আল্লাহতায়ালা। আকাশ থেকে বৃষ্টি নামে। জমিন উর্বর হয়। মরা পৃথিবী জেগে ওঠে। প্রাণিকুলে বাঁচার আশা জাগে। তাই তো বর্ষার প্রথম বর্ষণ দেখে কবিগুরু আনন্দে বলতে থাকেন- ‘এসেছে বরষা, এসেছে নবীন বরষা, গগন ভরিয়া এসেছে ভুবনভরসা।’ পৃথিবীবাসীর জন্য বর্ষা নতুন ভরসা আনে। নতুন করে বাঁচার প্রেরণা জোগায়। খরার পরে যেমন বর্ষা এসে পৃথিবীকে নতুন সবুজ করে দেয়, তেমনি মানবাত্মা শুকিয়ে চৌচির হয়ে যাওয়ার পর কোরআনের ছোঁয়া পাওয়ামাত্রই জেগে ওঠে। সজীবতা ফিরে পায় ভিতরে-বাইরে। সে কথাই এভাবে বলছেন আল্লাহতায়ালা- ‘কসম বৃষ্টিঝরা আকাশের। কসম ফেটে চৌচির হওয়া জমিনের। এ কোরআন মানুষের আত্মায় রহমত ঝরিয়ে সজীবতা ফিরিয়ে আনে, যখন তা পাপের কারণে চৌচির হয়ে যায়। মনে রেখো! এ বাণী নিয়ে হাসি-তামাশা করা চলে না।’ সূরা তারিক, আয়াত ১১-১৪। পৃথিবীকে নতুন করে রাঙাতে নতুন করে সাজাতে বর্ষা এসেছে। প্রকৃতির যত আয়োজন সব প্রাকৃতিকভাবেই করা হচ্ছে। এ পৃথিবীর দায়িত্ব যাদের কাঁধে আল্লাহ ন্যস্ত করেছেন, ফেরেশতাদের সামনে গর্ব করে যাদের সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘নিশ্চয় আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি পাঠাচ্ছি’- সেই প্রতিনিধিদের কিছু করণীয় আছে। হায়! আমাদের কাঁধে পৃথিবী সাজানোর দায়িত্ব, পৃথিবীকে বাঁচানোর দায়িত্ব, অথচ সেই আমরাই পৃথিবীকে নষ্ট করে ফেলছি। নদী মেরে ফেলছি। গাছ কেটে ফেলছি। পাহাড় ধ্বংস করে ফেলছি। প্রাণিবৈচিত্র্য হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছি। বোধহয় এজন্যই ফেরেশতারা সেদিন বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি কি এমন প্রজম্মের হাতে পৃথিবী ছেড়ে দেবেন যারা সব নষ্ট করে ফেলবে?’ জবাবে আল্লাহ বলেছিলেন, ‘আমি যা জানি তোমরা তা জানো না।’ প্রিয় পাঠক! এ পৃথিবী আমাদের। এখানে আমরা বসবাস করছি। আমাদের প্রজম্ম এখানে বেড়ে উঠছে। আমাদের কি উচিত নয়, যে পৃথিবীকে আমরা পেয়েছি, আমাদের প্রজম্মকে এর চেয়ে সুন্দর এর চেয়ে চমৎকার পৃথিবী উপহার দেওয়া। তবেই আমরা যোগ্য পূর্বসূরি হতে পারব। নয় তো কোরআনে বলা সেই পূর্বসূরি হব যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, ‘জাহান্নামিরা পূর্ববর্তী প্রজম্মকে বলবে, তোমরাই আমাদের জন্য পৃথিবীকে বাস-অযোগ্য, ইবাদত-অযোগ্য করে রেখে গেছ, আমাদের দোষ খুব কমই ছিল।’ পৃথিবীকে সুন্দর করতে হলে, পরবর্তী প্রজম্মের কাছে দায়মুক্ত হতে চাইলে অবশ্যই প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের এই ছোট্ট মাতৃভূমিকে একসময় সবুজ-শ্যামল দেশ বলা হতো। আফসোস! এ দেশে সবুজের সমাহার দিন দিন কমে আসছে। বনভূমি উজাড় হচ্ছে। গাছপালা কাটতে কাটতে ন্যূনতম বনভূমিও এখন নেই আমাদের। কবিগুরু বলেছিলেন, ‘প্রকৃতিকে আঘাত করলে প্রকৃতি পাল্টা আঘাত করে।’ নিউটন বলেছিলেন, ‘ক্রিয়ার সমান বিপরীত ক্রিয়া হয়।’ লোভের বশে আমরা প্রকৃতি ধ্বংস করে ফেলেছি, বন উজাড় করেছি, সবুজকে হত্যা করে সুখে থাকতে চাচ্ছি। কিন্তু প্রকৃতি আমাদের সুখে থাকতে দিচ্ছে না। দেবেও না। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ গরম পড়ছে। আবার রেকর্ড পরিমাণ শীতও হচ্ছে। এমনও দেখা গেছে, দিনে তীব্র গরম, রাতে তীব্র শীত। আবহাওয়ার এই যে পরিবর্তন এতে জনজীবন তো বিপর্যস্ত হচ্ছেই, নানান রোগবালাই আমাদের কাবু করছে। চিকুনগুনিয়াসহ কত মারাত্মক রোগ যে দেশবাসীকে ভুগিয়ে যাচ্ছে এবং আরও ভোগাবে তার ধারণাও করতে পারছে না মানুষ। এটাই প্রকৃতির প্রতিশোধ। এটাই প্রকৃতির অভিশাপ। আল্লাহর শাস্তি। পূর্ববর্তী প্রজম্মের ওপর এভাবেই নেমে এসেছিল আল্লাহর গজব। প্রকৃতির আঘাত থেকে বাঁচতে চাইলে অবশ্যই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রকৃতিকে প্রকৃতির মতো বিকশিত হতে দিতে হবে। দেশে বনায়নের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সবুজের সমারোহ আবার ফিরিয়ে আনতে হবে।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি।

   www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর