বুধবার, ৩ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

সামর্থ্যবানদের জন্য হজ বাধ্যতামূলক

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

সামর্থ্যবানদের জন্য হজ বাধ্যতামূলক

হজ আরবি শব্দ। যার আভিধানিক অর্থ অভিপ্রায় বা সংকল্প করা, কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা করা। শরিয়তের পরিভাষায় নির্দিষ্ট মাসের নির্দিষ্ট তারিখে কাবাঘর ও সংলগ্ন কয়েকটি স্থানে নির্দিষ্ট নিয়মে অবস্থান করা বা জেয়ারত করাকে হজ বলে। সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের জন্য হজ একটি ফরজ ইবাদত। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ না করা গুনাহের শামিল। এটি এমন এক ইবাদত যা বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্ববোধকে শক্তিশালী করে। প্রতি বছর হজের সময় সারা দুনিয়া থেকে মুসলমানরা সমবেত হয় আরাফাতের ময়দানে। একে অপরের সঙ্গে মেশার সুযোগ পায় তারা। মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য এবং পরস্পরের প্রতি মহব্বত সৃষ্টিতে হজের অবদান অনস্বীকার্য। পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা  হয়েছে : ‘আল্লাহ মানুষের জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ করেছেন, যে সেথায় যাওয়ার সামর্থ্য রাখে।’ সূরা আলে  ইমরান-৯৭। হজ সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য অবশ্য পালনীয়। গরিব মানুষের জন্য এটি বাধ্য করা হয়নি। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোনো ধনী মুসলমান যদি হজ না করে তবে তা নিন্দনীয়। মহানবী (সা.)-এর হাদিসের দিকে দৃষ্টি দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। নবী পাক (সা.) বলেন : ‘বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে হজ সম্পাদনের প্রয়োজনীয় সওয়ার (পরিবহন খরচ) ও পাথেয় (অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ) যার আছে, সে যদি হজ আদায় না করে, তবে সে ইহুদি কিংবা খ্রিস্টান হয়ে মরে মরুক, তাতে আল্লাহপাকের কিছু যায় আসে না। কেননা আল্লাহপাক ঘোষণা           দিয়েছেন : ‘আল্লাহ মানুষের জন্য বায়তুল্লাহর হজ ফরজ করেছেন, যদি সে তথায় যাওয়ায় সামর্থ্য রাখে।’

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ পালন না করাকে গুরুতর অন্যায় বলে ভেবেছেন মহানবী (সা.)-এর ঘনিষ্ঠ সাহাবিরা। এ সম্পর্কে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন : ‘আমার ইচ্ছা হয়, লোক পাঠিয়ে দেখি, কে সামর্থ্য থাকতেও হজ সম্পাদন করে না, তাদের ওপর জিযিয়া করের হুকুম জারি করি। কারণ তারা মুসলমান নয়।’ Ñতাফসিরে ইবনে কাসির। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : ‘সামর্থ্যবান হয়েও যে ব্যক্তি জাকাত ও হজ আদায় করে না, মৃত্যুর সময় সে তার হায়াত বৃদ্ধির জন্য আক্ষেপ করবে। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, এ ধরনের আক্ষেপ তো অবিশ্বাসীদের করার কথা। তিনি জবাব দিলেন : না, বিশ্বাসীদের জন্যও এটা প্রযোজ্য। কোরআনপাকই এর প্রমাণ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে : ‘আমি তোমাদের যে সম্পদ দিয়েছি, মৃত্যু আসার আগেই তা থেকে দান কর। অন্যথায় অন্তিম মুহূর্তে মৃত্যুপথযাত্রী বলবে : যে প্রভু! আমাকে আরও কিছু সময় অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি দান-সদকা করতাম এবং সৎ কর্মশীলদের দলভুক্ত হতাম। - সূরা আল মুনাফিকুন-১০। হজ পালন যেহেতু প্রতিটি সম্পন্ন মুসলমানের জন্য ফরজ সেহেতু এ ইবাদতের তৌফিক যাতে আল্লাহ আমাদের দেন তেমনটিই কাম্য।  আমিন।

                লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর