বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

শিপব্রেকিং ইয়ার্ড

পরিবেশের ক্ষতি কাম্য নয়

চট্টগ্রামে সীতাকুন্ডের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের রোয়ালিকুল এলাকায় শিপব্রেকিং ইয়ার্ড স্থাপনের উদ্যোগে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ সঞ্চার করেছে। দুটি কারণে তারা ওই এলাকায় শিপব্রেকিং ইয়ার্ড স্থাপনের বিরোধিতা করছেন। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, এর ফলে উপকূলীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়বে। দ্বিতীয়ত, প্রায় ৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সুদীর্ঘ বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়বে। চট্টগ্রামের নিউ পতেঙ্গা থেকে কুমিরা পর্যন্ত এলাকা শিপব্রেকিং জোন হিসেবে নির্ধারিত। বাঁশবাড়িয়া যেহেতু ওই এলাকার মধ্যে নয়, সেহেতু সেখানে শিপব্রেকিং ইয়ার্ড স্থাপন যুক্তিযুক্ত নয়- এমন কথাও বলছেন বোদ্ধাজনেরা। স্মর্তব্য, ষাটের দশকে সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাট সাগর উপকূলে জাহাজভাঙা শিল্পের গোড়াপত্তনের পর গত অর্ধশতাব্দীতে তা কুমিরা বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী আকিলপুর পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিমি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এর ঠিক পরের অংশ বাঁশবাড়িয়ার বোয়ালিয়া মৌজার অন্তর্গত। এই অংশে প্রচুর উপকূলীয় গাছপালা ও বেশকিছু বাড়িঘর রয়েছে। গত দুই দশকে বেড়িবাঁধটি ভেঙে সাগরে বিলীন হয়ে পড়ায় জানমাল হুমকির সম্মুখীন হয়। ফলে সরকার প্রায় ৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে জানমাল রক্ষায় সোয়া ২ কিমি দীর্ঘ বাঁধ সংস্কার করে। এতে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে। সম্প্রতি এ এলাকায় কিছু কুচক্রী শিপব্রেকিং ইয়ার্ড নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আর সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি আমলে নিয়ে সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে- এমন একটি খবর ছড়িয়ে পড়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, উপকূলে শিপব্রেকিং ইয়ার্ড হলে অনেকেই তাদের বসতভিটা হারাবেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীর। এখানে যেসব কড়ই, গেওয়া, আম, জাম, নিম, নারিকেল, সুপারি গাছ আছে তা প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করে আসছে। শিপব্রেকিং ইয়ার্ড স্থাপন করা হলে পরিবেশ চরম হুমকিতে পড়বে। সরকারের উন্নয়ন নীতিমালায় পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। উপকূলের সবুজ বেষ্টনী ও বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত করে ধারেকাছে শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের বিশেষ জোন থাকা সত্ত্বেও বোয়ালিয়ায় শিপব্রেকিং ইয়ার্ড স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলে তা হবে আত্মঘাতী। আমরা আশা করব, যারা এ ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন তারা এলাকাবাসীর মতামতকে গুরুত্ব দেবেন। সরকারের পক্ষ থেকেও বোয়ালিয়া মৌজার স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা সতর্ক থাকবেন- এমনটিই প্রত্যাশিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর