শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ওমরাহ কেন ও কীভাবে করবেন?

মুফতি মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

ওমরাহ কেন ও কীভাবে করবেন?

জিলহজ মাসের ৯ থেকে ১৩ তারিখ হচ্ছে পবিত্র হজের নির্দিষ্ট সময়। এই সময়ের বাইরে হজ করা যায় না। আর ওমরাহর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। শুধু হজের দিনগুলো ছাড়া বছরের বাকি সময়গুলোয় ওমরাহ করা যায়। বিশেষ করে রমজানের সময় ওমরাহর ফজিলত অনেক বেশি। তার পরও বিশ্বের মুমিন মুসলিম হজের জন্য বায়তুল্লায় আগে গেলে হজের আগে ওমরাহ করেন। আবার অনেকে হজ ও ওমরাহর ইহরাম একসঙ্গে বেঁধে উল্লিখিত সময়ের আগেই ওমরাহ আদায় করেন এবং সেই ইহরাম দিয়ে ফরজ হজও সম্পাদন করেন। এখানে ওমরাহর ফজিলত ও ওমরাহ করার নিয়ম তুলে ধরা হলো।

ওমরাহর ফজিলত : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘এক ওমরাহ থেকে অন্য ওমরাহ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সবকিছুর গুনাহর কাফফারা। আর মাবরুর হজের প্রতিদান হলো জান্নাত।’ বুখারি, মুসলিম। অন্য হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা বার বার হজ ও ওমরাহ আদায় কর, কেননা এ দুটো দরিদ্রতা ও গুনাহকে সেভাবে মুছে ফেলে, যেভাবে কর্মকারের হাওয়া দেওয়ার যন্ত্র লোহার ময়লাকে দূর করে দেয়।’ নাসায়ি।

ইহরাম বাঁধা ফরজ : পুরুষরা ইহরামের জন্য প্রস্তুত সাদা দুটি চাদর ও মহিলারা তাদের সাধারণ পোশাক পরে মিকাত ছেড়ে যাওয়ার সময় নিয়তের সঙ্গে বলবেন, ‘লাব্বাইকা ওমরাতান’ বা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা ওমরাতান’। ওমরাহ যদি অন্যের পক্ষ থেকে হয় তবে অন্তরের নিয়তের সঙ্গে ‘লাব্বাইকা ওমরাতান আন’-এর পরে তার নাম উচ্চারণ করতে হবে। কাবাঘর দেখার আগ পর্যন্ত তালবিয়া ও অন্য সব ধরনের দোয়া পড়তে হবে। তালবিয়া হলো, ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাক।’

ইহরামের নিয়ত করার পর যা নিষিদ্ধ : ১. পুরুষের জন্য সেলাই করা পোশাক পরা। ২. মাথার সঙ্গে লেগে থাকে এমন জিনিস দ্বারা মাথা ঢাকা। ৩ ইচ্ছাকৃত -ভাবে মাথার চুল ও শরীরের পশম কাটা বা ওঠানো। ৪. হাত-পায়ের নখ কাটা। ৫. আতর বা সুগন্ধিজাতীয় জিনিস ব্যবহার করা। ৬. স্থলচর প্রাণী শিকার করা। ৭. স্বামী-স্ত্রী মিলন বা এ-জাতীয় বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করা। ৮. বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া বা বিয়ে করা। ৯. মহিলাদের জন্য হাতমোজা ব্যবহার করা ও  মুখ ঢাকা । (১০) মক্কা ও মদিনার হারাম সীমানার গাছগাছালি, কাটা, ভাঙা, ওপড়ানো। ১১. মক্কা ও মদিনার হারাম সীমানায় পড়ে থাকা জিনিস নেওয়া। তবে তা মালিককে দেওয়ার জন্য ওঠানো যাবে। ‘মুকাম্মাল মুদাল্লাল হজ ও উমরা’।

মক্কায় পৌঁছার পর করণীয় : ১. তাওয়াফ ফরজ : মক্কায় পৌঁছে তাওয়াফে যাওয়ার আগে অজুু করে নিতে হবে। কেননা তাওয়াফের জন্য অজু শর্ত। নামাজের সময় নিকটবর্তী না হলে, মসজিদে প্রবেশ করে সরাসরি তাওয়াফে যেতে হবে। তাওয়াফ শুরুর আগে পুরুষের জন্য ইজতেবা বাম ডান কাঁধ খালি করতে হবে। অর্থাৎ চাদরের মধ্যভাগ ডান কাঁধের নিচে দিয়ে নিয়ে বাম কাঁধের ওপর পরতে হবে। ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলে হাজরে আসওয়াদ চুমো বা স্পর্শ করার মাধ্যমে তাওয়াফ শুরু করতে হবে। চুমা বা স্পর্শ করার সুযোগ না হলে, হাজরে আসওয়াদ বরাবর গিয়ে শুধু ডান হাত দ্বারা হাজরে আসওয়াদের দিকে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে ইশারা করে চুমু দিয়ে তাওয়াফ শুরু করতে হবে। হাজরে আসওয়াদের আগের কোনো রুকনে ইয়ামানিতে পৌঁছা পর্যন্ত সময়ে, কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ ও যে কোনো ধরনের দোয়া পড়া যায়। হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করে আবার হাজরে আসওয়াদে এলে এক তাওয়াফ হয়। এভাবে সাত তাওয়াফ বা চক্কর শেষ করে উভয় কাঁধ ঢেকে, মাকামে ইবরাহিমের পেছনে নামাজ পড়ার উপযুক্ত স্থান পেলে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হবে। ভিড়ের কারণে সম্ভব না হলে কাবার  যে কোনো স্থানে পড়লেই চলবে। ‘মাসায়েলে হজ ও উমরা’।

২. সায়ি ওয়াজিব : এখন সায়ি করার জন্য সাফা মারওয়া পাহাড়ে যেতে হবে। শুধু সাফায় আরোহণের সময় এ আয়াত ‘ইন্নাস সফা অল মারওয়াতা মিন শাআ ইরিল্লাহ’ পড়তে হবে। পাহাড়ে আরোহণ করে কিবলামুখী হয়ে দোয়ার জন্য দুই হাত তুলে তিনবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার’ বলে এ দোয়াটি পড়তে হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, আনজাজা ওয়াদাহু, ওয়া নাসারা আবদাহু, ওয়া হাজামাল আহজাবা ওয়াহদাহু’। মাঝে মাঝে অন্য দোয়াও পড়া যাবে। এখন মারওয়ার দিকে যেতে হবে। কিছু দূর গেলে দুটি সবুজ চিহ্ন দেখা যাবে। দুই চিহ্নের মধ্যে শুধু পুরুষদের হালকা দৌড়াতে হবে। সাফা ও মারওয়ায় চলতে কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ, তাসবিহ ও যে কোনো ধরনের দোয়া পড়া যায়। ‘শরহে  বেকায়া’, ‘আসান ফিকাহ’।

৩. মাথার চুল খাটো বা মুন্ডানো ওয়াজিব : সাাফা মারওয়ায় সায়ি শেষে মাথার চুল চার ভাগের এক ভাগ ছোট বা মু-ন করা উভয়টিই বৈধ। তবে মু-ন করাই উত্তম। কেননা মু-নকারীর জন্য প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার দোয়া করেছেন। আর মহিলারা মাথার চুলের মাথা থেকে আঙ্গুলের এক গিরা পরিমাণ ছোট করবেন। এখন আপনার ওমরাহ হয়ে গেল। ‘আসান ফিকাহ’। আল্লাহতায়ালা আমাদের ওমরাহ করার তাওফিক দিন ও কবুল করুন।

 

লেখক : এমফিল গবেষক মুফাসসিরে কোরআন, বেতার ও টিভির ইসলামবিষয়ক উপস্থাপক; খতিব, মণিপুর বাইতুর রওশন (মাইকওয়ালা) জামে  মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর