শনিবার, ৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

আল্লাহর রহমত ও স্নেহের ছায়া খুঁজে নিন

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আল্লাহর রহমত ও স্নেহের ছায়া খুঁজে নিন

সকালের সোনাঝরা চিকচিকে রোদ দেখে বাইরে খেলতে বেরিয়েছে শিশু। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তেজও বাড়তে লাগল। গরমে ঘামে নেয়ে একাকার অবুঝ সন্তান। মা ডাকছেন একটু পরপর। ‘কইরে! ঘরে ফিরে আয়। শরীর খারাপ করবে তো।’ খেলায় মত্ত শিশু কি আর মায়েক ডাক শোনে? দিব্যি খেলে যাচ্ছে আপন মনে। হঠাৎ ঝকঝকে আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা। মুহূর্তেই বদলে গেল পরিস্থিতি। চারদিক আঁধারে ছেয়ে গেল। তুমুল বাতাসে সবকিছু উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তখনো শিশু বুঝতে পারছে না সামনে কী অপেক্ষা করছে তার জন্য। আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানি আর মেঘের গুড়ুম গুড়ুম আওয়াজে এবার কিছুটা কাঁপন ধরেছে অবুঝ শিশুর বুকে। সে বুঝতে পেরেছে, আরও আগেই মায়ের কোলে ফেরা উচিত ছিল। ততক্ষণে খুব দেরি হয়ে গেছে।

প্রিয় পাঠক! উপরের শিশুর সঙ্গে নিজেকে তুলনা করুন। মমতাময়ী মায়ের সঙ্গে ভাবুন প্রেমময় প্রভুর কথা। দুনিয়ার চাকচিক্যে আমরা মায়ের আঁচল ছেড়ে বেরিয়ে পড়ি লালনীল জগতে। দুনিয়ার প্রতিযোগিতায় আমরা এমনই মগ্ন হয়ে যাই, প্রভু বলেন, আলহাকু মুত্তাকাসুর। দুনিয়ার খেলতামাশা তোমাদের প্রভুর কথা ভুলিয়ে রেখেছে। হাত্তা জুরতুমুল মাকাবির। এভাবেই একদিন তোমরা কবরে চলে যাও। তখন আর কিছুই করার থাকে না। কারণ তখন তো আজাব তোমাদের ঘিরে ফেলে। সবকিছু অন্ধকারে ছেয়ে যায়। এর আগে কিন্তু আল্লাহতায়ালা বারবার ডেকে বলেছেন বান্দা! আমার রহমতের ঘরে আসো। নিজেও বাঁচো। অন্যকেও বাঁচাও। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বান্দা ডুবে থাকে দুনিয়ার রং-তামাশায়।

আল্লাহতায়ালা কত চমৎকারভাবে বান্দাকে ডাকছেন, হে আমার আদরের বান্দা! আল্লাহর রহমত থেকে কখনই নিরাশ হয়ো না। মনে রেখ, একমাত্র কাফেররাই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যায়।’ (সূরা ইউসুফ, আয়াত : ৮৭।) খেলায় মত্ত বান্দা যখন কখনো-সখনো চোখ তুলে বিবেক খুলে তাকাবে, তখন দেখবে খেলতে খেলতে বেলা অনেক পেরিয়ে গেছে। তুমুল তুফানের আভাস আকাশে দেখা যাচ্ছে। তখন শয়তান এসে বান্দাকে বলে, জীবনটাই কাটিয়ে দিলি আল্লাহর নাফরমানিতে। এখন আর ফিরে কী লাভ হবে। প্রভু কি ক্ষমা করবেন তোর এত এত গোনাহ? বান্দা যখন বলে, না না, এত গোনাহ তো আল্লাহ ক্ষমা করতে পারবেন না, তখন কিন্তু আল্লাহর অসীম শক্তিকে খাটো করা হয়। কারণ, আল্লাহর পক্ষে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। ইন্নাল্লাহা আলা কুল্লি শাইইন কাদির। অবশ্যই আল্লাহ সবকিছু করতে পারেন। তো বান্দা যখন ভাবে, আল্লাহ ক্ষমা করতে পারবে না- তখন কিন্তু সে ‘আল্লাহ সব করতে পারেন’ এই আয়াতকে অস্বীকার করল। আল্লাহর শক্তিকে খাটো করেন। আর সে জন্য বলা হয়ছে, শুধু কাফেররাই আল্লাহর শক্তি-ক্ষমতা এবং ক্ষমা পাওয়া থেকে হতাশ হয়ে পড়ে। শয়তান যখন বান্দার মনে গেঁথে দিল, আল্লাহ এত গোনাহ ক্ষমা করবে না, তখনো কিন্তু আল্লাহ হাল ছেড়ে দেন না। যেমন হাল ছাড়ে না অবুঝ শিশুকে ডাকতে থাকা মমতাময়ী মা। আল্লাহ আবার ডাক দেন, ‘ওগো আমার আদরের বান্দারা! তোমরা যারা দুনিয়ার রং-তামাশায় ডুবে থেকে নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, পাপের সাগরে ডুবে আছ, তোমরা আমার দয়া থেকে নিরাশ হয়ো না। আমি অবশ্যই দয়া করে মায়া করে তোমাদের সব গোনাহ ক্ষমা করে দিবো। (সূরা জুমার, আয়াত : ৫৩)। হায় আফসোস! এভাবে ডাকার পরও বান্দা খোদার কোলে ফিরে আসে না। তখন আল্লাহতায়ালা অনেকটা অভিমানের সুরেই বলেন, ‘ইয়া আইয়্যুহাল ইনসানু মা গাররাকা বিরাব্বিকাল কারিম। হে মানুষ! তোমার এমন দয়ালু প্রভু সম্পর্কে কে তোমাকে ধোঁকায় ফেলল?’ বান্দা যখন আজাবের খুব কাছাকাছি চলে যায়, যখন ঝড় শুরুর আর বেশি বাকি থাকে না, তখনো দয়াময় প্রেমময় প্রভু ডেকে বলেন, হে বান্দা! তোমার প্রভুর কোলে ফিরে এসো, তার কাছে নিজেকে সোপর্দ করো। ফিরে এসো শাস্তি আসার আগেই।’ (সূরা জুমার : ৫৪)। হে দরদী পাঠক! রমজান মাস প্রভুর কোলে ফিরে যাওয়ার মাস। প্রভুতে আত্মা সোপর্দ করার মাস। আসুন! অল্পদিনের দুনিয়ায় মোহে না থেকে আমরা আমাদের পরম প্রভুতে ফিরে যাই। প্রভুর বলে দেওয়া নিয়মে আমাদের জীবন সাজাই। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের তাওফিক দিন। আপনার রহমতের কোলে স্নেহের ছায়ায় আমাদের স্থান দিন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি,

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর