সমাজের প্রাণ হলো মসজিদ। আর মসজিদের প্রাণ হলেন ইমাম। ইমাম সাহেবের প্রাণ হলেন মুসল্লি। মুসল্লির প্রাণ হলো ইবাদত। ইবাদতের প্রাণ হলো আল্লাহকে পাওয়া। কারণ, যে ইবাদতে আল্লাহকে পাওয়া যায়নি, তা ইবাদত নয়। আর ইবাদতের পরিবেশ তৈরির জন্য প্রয়োজন একজন যোগ্য ও পরহেজগার ইমাম। কারণ, একজন সৎ, সাহসী, আল্লাহভীরু ইমামই পারেন সমাজকে আলোকিত করতে। সুন্দর ও শান্তির পরিবেশ গড়ে তুলতে। একটি সমাজ কখন সুন্দর হয়? কখন শান্তি বিরাজ করে? যখন সমাজ থেকে শিরক, বিদাত, সুদ, ঘুষ, হারাম, অন্যায়, জুলুম, ব্যভিচার, কুৎসা, হিংসা, মিথ্যাচার, নিন্দা, মাদক ইত্যাদি দূর হয়। এটি সম্ভব হয় তখন যখন একজন যোগ্য ইমাম তার মুসল্লিদের মাঝে এর ক্ষতিকরর দিকগুলো প্রচার করবেন। মিহরাবে বয়ান করবেন। আর মুসল্লিদের নিয়ে সমাজ থেকে এগুলো দূর করার চেষ্টা চালাবেন। এ দায়িত্ব পালন করা ইমামের এখতিয়ার নয়, বরং কর্তব্য। যেমন সূরা লোকমানের ১৭ নম্বর আয়াতে ‘সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে নিষেধ’-এর তাগিদ দেওয়া হয়েছে এবং সমাজে কীভাবে ইসলাম প্রচার করবে, কোন পন্থায় মানুষকে বুঝিয়ে উত্তমরূপে দীনের পথে আহ্বান করা হবে তাও সূরা নাহলের ১২৫ নম্বর আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আপনি আপনার পালনকর্তার পথের প্রতি আহ্বান করুন, হিকমত দ্বারা এবং উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে।’ সমাজে সামাজিক অপরাধগুলো বীভৎস রূপ ধারণ করছে। যেমন নির্মম হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, নিষ্ঠুর আচরণ এবং মানুষের মস্তিষ্কে নেতিবাচক চিন্তাধারা ইত্যাদি। এর দায় যেমন রাষ্ট্র এড়াতে পারে না, পাশাপাশি সমাজের মসজিদের ইমামও এ দায় থেকে মুক্ত নন। ধর্মীয় অনেক কাজ আছে যা সামাজিকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ কাজগুলোর বয়ান ইমামরা খুব কমই করেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ঝামেলা কিংবা হয়রানিতে পড়ার ভয়ে নীরব ভূমিকা পালন এবং চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে কমিটির মোসাহেবি করেন। ফলে সমাজে অপরাধ ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ে। অথচ সত্য-ন্যায়ের কথা বলতে গিয়ে, ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে যারা প্রতিপক্ষের রোষানলে পড়বে, কোরআন তাদের ধৈর্য ও সান্ত্বনার বাণী শোনাচ্ছে, ‘আপনি সবর করবেন, আপনার সবর শুধু আল্লাহর জন্য। তাদের জন্য দুঃখ করবেন না এবং তাদের চক্রান্তের কারণে মন ছোট করবেন না।’ সূরা নাহল। ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন, যারা পরহেজগার ও সৎ কর্ম করে।’ আল কোরআন। সমাজকে সুস্থধারায় ফিরিয়ে আনতে হলে ইমামদের ভূমিকার বিকল্প নেই। তাই আসুন আমরা ইমামগণ সমাজটাকে সুন্দর করি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
লেখক : পরিচালক, মাদ্রাসাতু ইকরা ও হাফসা (রা.) মহিলা মাদ্রাসা, মৌচাক, গাজীপুর।