সোমবার, ৮ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

হু হু করে বাড়ছে জনসংখ্যা

বিরাটাকার পৃথিবীর এক  ক্ষুদ্র অংশের নাম বাংলাদেশ। এর আয়তন মাত্র ৫৬ হাজার বর্গমাইল। জনসংখ্যা ১৬ কোটির মতো। দেশটির প্রধান সমস্যাই জনসংখ্যা। বর্তমান হারে জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে ২০২০ সালে এদেশে মোট জনসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ২০ কোটিতে। এ বিরাট জনগোষ্ঠীর জন্য বিরাটাকার সমস্যা হবে ভাত, কাপড়, বাসস্থান ও কর্মসংস্থান।

পৃথিবীর যেসব দেশ উন্নত তাদের জনসংখ্যা সীমিত। এমনকি কোনো কোনো উন্নত দেশে জন্ম-মৃত্যুর হার সমান। এদিকে তাদের দেশে খাদ্য উৎপাদন দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত মানের সার ও প্রযুক্তি তারা তাদের খেতে-খামারে ব্যবহার করে থাকে। তাছাড়া অনাবাদি জমি আবাদ করে তাতে কৃষি কাজ করতে শুরু করেছে।

এদিকে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে হু হু করে মানুষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত বিশ্বের উদ্ধৃত খাদ্যশস্য দিয়ে আপাতত বিশ্বের খাদ্য সমস্যার সমাধান হলেও ভবিষ্যতে তা সম্ভব হবে না। তবে বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশ কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের অব্যাহত প্রয়াসে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধকল্পে চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা তাদের জনসংখ্যা একটা সীমার মধ্যে রেখে খাদ্য আমদানি হ্রাস করছে। আমদানি করা প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি-ব্যবহার করছে খেতে, খামারে। ফলে খাদ্য উৎপাদনও বাড়ছে। খাদ্যশস্য উৎপাদনে এশিয়া মহাদেশের এ অঞ্চল যে খুব পিছিয়ে এমন নয় যেমন মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, জাপান, পাকিস্তান, কোরিয়া- এসব দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়। জনসংখ্যার অনুপাতে খাদ্য উৎপাদিত হয় বেশি। কিন্তু তাদের আবার পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশগুলোতে উদ্ধৃত খাদ্যশস্য রপ্তানি করতে হয়। প্রতিবেশী দেশের জনগণের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা না থাকলে তাদের দেশে অশান্তি দেখা দেবে, প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে নিজ দেশে। তাই তাদের নিজ স্বার্থেই খাদ্যশস্য দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে সাহায্য করতে হয়। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে সর্বত্রই খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবে আর মাত্র ৮/৯ বছর পর অর্থাৎ ২০২০ সালে। এ ঘাটতি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে জনসংখ্যা বিশারদ ও বিজ্ঞানীরা মতামত ব্যক্ত করেছেন। অনুন্নত বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ আমাদের বাংলাদেশ। এ দেশটির বড় সমস্যাই জনসংখ্যা বিস্ফোরণ। ১৯৪৭ সালে এ অঞ্চলের লোকসংখ্যা ছিল মাত্র সাড়ে চার কোটি। তখন দেশে যে পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদিত হতো তাতে দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণ হতো। ঘাটতি ছিল না। দেখা যায় গত  কয়েক দশকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪ গুণ। এদিকে দেশে জায়গা জমি বৃদ্ধি পায়নি। ১৯৪৭ সালে যা ছিল বর্তমানেও তাই। সরকার জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে তৎপর এবং জনসংখ্যা সমস্যাকে দেশের ১নং সমস্যা হিসেবে চিহ্নিতও করেছেন। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও তৎপরতা সত্ত্বেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। জনসংখ্যার নিদারুণ বিস্ফোরণে আমাদের সব উৎপাদন যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। আমরা ব্যর্থ হচ্ছি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে।

জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের নির্বাহী কর্মকর্তা কদিন পূর্বে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। তিনি জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে আমাদের আরও তৎপর হয়ে জন্মহার বৃদ্ধি দেড় শতাংশে সীমিত রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে এগিয়ে না এলে ২০২০ সালে আমাদের দেশের মানুষের জন্য ভাত, কাপড়, খাদ্য, শিক্ষা, বাসস্থান সংকুলান হবে কঠিন যা বলাই বাহুল্য। 

আফতাব চৌধুরী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর