বুধবার, ১০ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিদাত থেকে মুমিনদের দূরে থাকা কর্তব্য

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

বিদাত থেকে মুমিনদের দূরে থাকা কর্তব্য

বিদাত শব্দের আভিধানিক অর্থ নতুন কোনো বিষয় সৃষ্টি করা। শরিয়াতের পরিভাষায় দীনদারি আমল ও ইবাদতের নামে নতুন উদ্ভাবিত এমন সব কাজ যা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলে করা হয়নি, সাহাবি কিংবা তাবেয়িদের যুগে অনুসৃত হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। অতএব তা দীনদারি বা ইবাদত নয়।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর থেকেই বিদাত নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে আলোচনা-পর্যালোচনা শুরু হয়। খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলে জাকাত অস্বীকার, ভ-নবীর আবির্ভাব, ধর্মদ্রোহিতা, খারেজি ফেতনাসহ অসংখ্য বিদাতের প্রচলন হয়। এসবই তখন বিদাত হিসেবে অভিহিত হয়েছিল। কেননা, এগুলো ছিল কোরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী। কিন্তু রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলে হয়নি এমন অনেক কাজ খোলাফায়ে রাশেদিন ও তাদের পরের আমলে হয়েছে। যেমন, কোরআন মজিদ সংকলন, কোরআন মজিদে হরকত ও নুকতা সংযুক্তকরণ, জামাতসহকারে তারাবির নামাজ আদায়, জুমার ফরজ নামাজের আগে দ্বিতীয় আজান, চুরির কারণে ক্ষেত্রবিশেষ হাত কাটার হুকুম রহিতকরণ ইত্যাদি নতুন কাজ হলেও বিদাত হিসেবে অভিহিত হয়নি। কেননা এসবের একটি কাজও কোরআন-সুন্নাহর পরিপন্থী নয়। বিদাতের পরিচয় দিতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের দীনে এমন কোনো নতুন কিছু সৃষ্টি করে যা এ দীনের মধ্যে নয়; তবে তা মারদুদ বা প্রত্যাখ্যাত।’ মুসলিম। হাদিসটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে প্রতীয়মান হয়, প্রত্যেক নতুন কাজ প্রত্যাখ্যাত নয়; বরং কেবল সেই নতুন কাজই মারদুদ, দীনে যার কোনো দৃষ্টান্ত বা ভিত্তি নেই এবং সেটিকে দীনের আবশ্যক কাজ ও ইসলামী আকিদার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। সেটি দীনের মূল ভিত্তির মধ্যে সংযুক্ত হয়ে যায়। ফলে ইসলামের মৌলিক ভিত্তির মধ্যে হ্রাস-বৃদ্ধি হয়। এ ধরনের হ্রাস-বৃদ্ধি ইসলামের বিরোধিতার শামিল; এটি দীনের জন্য বড় ফিতনা। ইবনে রজব হাম্বলি (মৃত. ৭২৮ হিজরি) বলেন, ‘বিদাত দ্বারা সেই নতুন কাজ উদ্দেশ্য যে কাজের শরিয়তে কোনো ভিত্তি নেই। তবে যেসব কাজে শরিয়তে ভিত্তি রয়েছে সেগুলো বিদাত নয়, যদিও শাব্দিক অর্থে এগুলো বিদাত।’ ইবন তাইমিয়া (মৃত. ৭২৮ হিজরি) বলেন, ‘বিদাত দ্বারা এমন কাজ উদ্দেশ্য যা বিশ্বাস ও ইবাদতে কোরআন, হাদিস ও ইজমাবিরোধী হয় যেমন খারেজি, রাফেজি, কাদরিয়া, জাহমিয়ার আকিদা বিশ্বাস।’ মাজমুউল ফাতওয়া। সোজা কথায়, ইসলামী চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব কাজকে বিদাত বলা যায়; যা থেকে দূরে থাকা মুমিনদের কর্তব্য হলে বিবেচিত হওয়া উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বিদাত থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন।

 

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর