রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

আমি বলি ফিশ ফ্যাক্টরি

শাইখ সিরাজ

আমি বলি ফিশ ফ্যাক্টরি

একটা সময় ‘গোলা ভরা ধান’, ‘গোয়াল ভরা গরু’ আর ‘পুকুর ভরা মাছ’- এ বিশেষণগুলো ব্যবহার হতো কৃষির সমৃদ্ধি বোঝাতে। দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। মাঠে মাঠে চড়ানো গবাদি পশুর দল। পুকুরের পর পুকুরে মাছ। একটা কৃষিসমৃদ্ধ এলাকার এমন চিত্রই উঠে এসেছে বলনে-লিখনে যুগের পর যুগ। যদিও বাস্তবে এ চিত্র খুব একটা দেখা যেত না। অধিক জনসংখ্যার বিপরীতে উৎপাদন ছিল কম। কিন্তু সময় পাল্টে গেছে, সঙ্গে পাল্টেছে কৃষি চিত্রও। আমাদের উৎপাদন বেড়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণে কৃষি আর মাঠজুড়ে নয়, চলে এসেছে ঘরের ভিতর- কারখানায়। ঘরোয়া পরিবেশে মাছ চাষ নতুন কিছু নয়। পাঠক, নিশ্চয়ই মনে আছে বছর দুয়েক আগে আপনাদের সায়েন্স ল্যাবরেটরি বা বিসিএসআইআরের ঘরোয়া মাছ চাষের প্রকল্প নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করেছিলাম চ্যানেল আইয়ের ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানে। সেখানে ২ হাজার বর্গফুটের একটি টিনের ঘরের মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছিল আরেকটি ঘর। যেখানে ১১টি পানির ট্যাংকে ঘরোয়া মাছ চাষের বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলছিল। একেকটি ট্যাংকে ছিল ৩ হাজার লিটার পানি; যা প্রতিনিয়ত রিসার্কুলেটেড সিস্টেমে পরিবর্তন করা হচ্ছিল। সেখানে সঠিক পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমে চাষ হচ্ছিল তেলাপিয়া, পাবদা, গুলশা, কই, মাগুর, শিং, বাইমসহ বেশ কয়েক রকমের মাছ। খুব অল্প জায়গায় ঘরোয়া পরিবেশে মাছ চাষের এ পদ্ধতিটির নাম ‘রিসার্কুলেটেড অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম’; সংক্ষেপে ‘রাস’। বিশ্বব্যাপীই পরিচিত হয়ে উঠেছে মাছ চাষের এ প্রযুক্তি। স্বল্প পানিতে পরিবেশসম্মত ঘরোয়া এই মাছ চাষ কৌশল মাছ উৎপাদনে এক বৈপ্লবিক সাফল্যের সূচনা করেছে। প্রযুক্তিটির প্রথম গোড়াপত্তন ঘটে নরওয়েতে ২০০২ সালে। বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা আরভে গ্রাভদাল প্রথম ৬০০ কিউবিক মিটারের একটি ট্যাংকের মধ্যে ২৬ হাজার সলমন মাছ উৎপাদন করে বেশ সাড়া ফেলে দেন। পরে তিনিই গড়ে তোলেন রিসার্কুলেটিং অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম কোম্পানি-নিরি। তারপর এ প্রযুক্তি দিনে দিনে ছড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী। এখন আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতেও ঘরোয়া পরিবেশে চৌবাচ্চায় এ প্রযুক্তিতে মাছ চাষ হচ্ছে। উদ্যোক্তারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি মাপের শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে রাস প্রযুক্তির মাছ চাষ প্রকল্প গড়ে তুলছেন। বাংলাদেশে এ প্রযুক্তি নিয়ে কিছু চিত্র আপনাদের সামনে ইতিমধ্যেই তুলে ধরেছি। চীন দ্রুত অল্প ব্যয়ে কারিগরি সহায়তা দিয়ে এশিয়ার দেশগুলোয় রিসার্কুলেটিং অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম প্রযুক্তি সম্প্রসারণে কাজ করছে। মাস আটেক আগে রাস প্রযুক্তি নিয়ে চীন কতটা সফল তা দেখতে গিয়েছিলাম। সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তা কাওসার পারভেজ, আমার সহকর্মী আদিত্য শাহীন ও তানভীর আশিক। চীনের জংশানে ই-ওয়াটার অ্যাকুয়াকালচার ইক্যুইপমেন্ট টেকনোলজি নামে এক প্রতিষ্ঠান বেশ অল্প খরচে তৈরি করছে রাস পদ্ধতির উপকরণসমূহ। এক রৌদ্রোজ্জ্বল সুন্দর সকালে কাওসার আমাদের নিয়ে গেলেন ডংঝেন এ টর্চ ডেভেলপমেন্ট এরিয়ায় সেই প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা প্রধান লিও হি এবং ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী আরপি আমাদের স্বাগত জানালেন। বহুতল ভবনের একটি ফ্লোরে লিও হির কারখানা ঘুরে দেখলাম। নানান যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। পানির অক্সিজেন নিয়ন্ত্রণ করার যন্ত্র, কার্বন শুদ্ধিকরণ যন্ত্র, ওজন পরিমাপের যন্ত্র, পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র। লিও হির কারখানাটি বেশ বড়।

একদিকে চলছে যন্ত্রপাতি নির্মাণের কাজ, অন্যদিকে গবেষণা। এখান থেকেই লিও মাছ চাষের আধুনিক প্রযুক্তি রাসের ইক্যুইপমেন্ট তৈরি ও বাজারজাত করেন। একই সঙ্গে তার মাছ চাষ ছাড়াও বিভিন্ন উৎপাদনমুখী যন্ত্রপাতি প্রস্তুত করার ব্যবস্থা রয়েছে। একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে লিও অ্যাকুয়াকালচার প্রযুক্তি বিষয়ে বেশ দক্ষ। কত কম ব্যয়ে মাছ চাষের আধুনিক প্রকল্প স্থাপন করা যায় এবং কত সহজে তা থেকে লাভ বের করা যায় এমন হিসাবটি তিনি অত্যন্ত চুলচেরা-ভাবেই করেছেন। লিও আমাদের তার অফিসকক্ষে নিয়ে গিয়ে প্রজেক্টরে ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে ‘রাস’ প্রকল্পটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন। তুলনামূলক কম খরচে, কম বিদ্যুতে, একই পানি ব্যবহার করে বছরের পর বছর ঘরের ভিতর মাছ চাষের বিস্তারিত দেখে অভিভূত হলাম। আগ্রহ জন্মাল প্রজেক্টরের পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেনটেশনে নয়, বাস্তব কোনো মাছ ফ্যাক্টরি দেখার। আগ্রহের কথা জানালাম লিওকে। তিনি বললেন, বছর তিনেক আগে পাগোবা নামক এক স্থানে একটি ফ্যাক্টরি তারা তৈরি করেছেন। জংশান থেকে ঘণ্টা দুয়েকের পথ। বেশি হলে তিন ঘণ্টা লাগবে। রাজি হয়ে গেলাম। লিওর গাড়িতে আমরা ছুটলাম সেই ফ্যাক্টরি দেখার উদ্দেশে।

চীনের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনটা এত দ্রুত হচ্ছে যে, এক বছর আগের দেখা চীন পরের বছরই নতুন মনে হচ্ছে। চকচকে সুন্দর সব রাস্তাঘাট, ছিমছাম সাজানো গোছানো। দুই রাস্তার ডিভাইডারে নানান রঙের ফুল গাছ। আমাদের দেশে ঢাকা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা যেতেই দুই-আড়াই ঘণ্টা লাগে যানজটের কারণে। চীনে দুই ঘণ্টার পথ মনে হলো রাজ্যের দূরত্ব। চলছি তো চলছিই। নদীর তীর ছুঁয়ে, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে, এমনকি পাহাড় কেটে তৈরি দীর্ঘ টানেল পেরিয়ে পৌঁছলাম পাগোবায় মাছের ফ্যাক্টরিতে। তিন তলা একটি বড় বাড়ি। বাইরে থেকে দেখে মনেই হয়নি সেখানে মাছ চাষ হচ্ছে। মনে হয়েছে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি বা অন্য কোনো কারখানা। কিন্তু প্রাচীরঘেরা চৌহদ্দির ভিতরই রাস পদ্ধতির চাষাবাদ ব্যবস্থা। ছোটবড় অসংখ্য ট্যাংকে ভরা প্রতিটি ফ্লোর। প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল কারখানার ব্লু প্রিন্ট দেয়ালে সাঁটা। নিচতলাটিতে রেণু পোনা তৈরি করা হয়। ছোট ছোট অসংখ্য ট্যাংক অর্থাৎ চৌবাচ্চা। বিশাল কারখানায় কোনো মানুষজন নেই। নেই তেমন শব্দ। মাত্র একজনই বিশাল এ কারখানাটি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। সবই হচ্ছে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে। লিও হি নিয়ে গেলেন প্রকল্পের ওপরতলার একটি কক্ষে। সেখানেই বড় বড় হাউজে চলছে পরিকল্পিত মাছ চাষ। একটি হাউজের সামনে দাঁড়িয়ে লিওর কাছে জানতে চাইলাম, কী মাছ চাষ হচ্ছে এখানে? তিনি জানলেন, সাবা ফিশ নামক একটি মাছের চাষ হচ্ছে। রেণু পোনা থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত এখানে মাছগুলোকে বড় করা হয়। ছয় মাসে মাছের যে আকার আসে, তা বিক্রয়-উপযোগী। লিও জানালেন, ট্যাংকগুলোর প্রতিটিতে মাছ চাষ করা যায় আড়াই টন করে। প্রতিটি ট্যাংক থেকে বছরে দুবার তারা মাছ উৎপাদন করতে পারেন। অর্থাৎ প্রতি ট্যাংকে বছরে ৫ টন মাছ চাষ করছে; যা সম-আকারের একটি পুকুর থেকে উৎপাদিত মাছের পরিমাণের ৩০ গুণ। খাবারের ক্ষেত্রেও বেশ সাশ্রয়ী। প্রতি কেজি মাছের জন্য খাবার খরচ হচ্ছে প্রায় সোয়া কেজি। বিদ্যুৎ খরচও একেবারেই কম। ১ হর্স পাওয়ারের দুটি পাম্পেই বিশাল আটটি ট্যাংকে মাছ চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। পানিও পাল্টাতে হয় না। বছরের পর বছর একই পানিতে মাছ চাষ করা যায়। উদ্যোক্তারা পরিকল্পিতভাবেই সাজিয়েছেন মাছ চাষের কারখানাটি। একেকটি ফ্লোরে একেক আয়োজন। নিচের ফ্লোরে রেণু পোনা তৈরি করা হয়। দ্বিতীয় ফ্লোরটিতে পুরোদমে মাছ চাষ। আর তৃতীয় ফ্লোরে চলছে রীতিমতো গবেষণা। শুধু খাবার মাছই নয়, অর্নমেন্টাল ফিশ, অর্থাৎ রঙিন মাছ থেকে শুরু করে কাছিম পর্যন্ত চাষ হচ্ছে এ কারখানায়।

কৃষির বহুমুখী বিবর্তন ঘটছে। মাছ চাষও পিছিয়ে নেই। মাছ চাষের ক্ষেত্রে আধুনিক এ প্রযুক্তিও নানামুখী ভাঙাগড়া ও সংযোজন-বিয়োজনের মধ্য দিয়ে আরও আধুনিক হয়ে উঠছে। উদ্যোক্তারা চাইছেন, সবচেয়ে কম জায়গায় একটি ছোট্ট ঘরের মতো জায়গায় কীভাবে বছরব্যাপী উৎপাদন চালু রাখা যায়। প্রতিনিয়ত চলছে উৎপাদনের ঘনত্ব ও অন্যান্য দিক নিয়ে নানামুখী চিন্তাভাবনা। একজন নতুন উদ্যোক্তা যেভাবে স্বপ্ন দেখছেন এমন প্রকল্পের যারা উপকরণ সরবরাহকারী, তারা ঠিক সেভাবেই উপকরণ জোগান দেওয়ার কাজটি করে চলেছেন। যেমন আমাদের দেশের উদ্যোক্তা পারভেজ চিন্তা করছেন ২০ হাজার বর্গফুট, মানে দেড় বিঘা জায়গার ওপর তিনি গড়ে তুলবেন তার প্রকল্প। এতে তার ব্যয় হবে ২ কোটি টাকা। চীনা কোম্পানির হিসাবে প্রথম বছরেই তার বিনিয়োগ করা টাকা উঠে আসবে।

কোম্পানি থেকে বেরিয়ে আমরা নতুন এক স্থানীয় উদ্যোক্তার সন্ধান পেয়েছি, যিনি প্রচলিত পদ্ধতির মাছ চাষ থেকে এই রাস প্রযুক্তির একটি প্রকল্প গড়ে তুলতে চাইছেন। জায়গাটি শিনশিং কাউন্টির এক গহিন গ্রাম। একেবারে কৃষি -প্রধান এলাকা। কৃষি উদ্যোক্তা ফ-এর খামার দেখতে গিয়ে একেবারে আমাদের দেশের মতো ছোট ছোট আইলের কৃষি খেত চোখে পড়ল। বোঝা যায়, এখানে বেশির ভাগই প্রান্তিক কৃষকের বাস। রাস্তার দুই পাশে ফসলের খেত। সোনালি রং নিয়ে ধান পেকে আছে। আছে সবজিবাগান। পালংশাকের চাষ করছে কেউ। কেউ বা শর্ষে শাক কিংবা গাজর। খেতে যেসব কৃষককে চোখে পড়ছে তারা একেবারেই বৃদ্ধ। পুরুষ আর নারী বলে ভেদাভেদ নেই। একই কাজ নারী-পুরুষ মিলেমিশেই করছে। বয়স কারও ষাট থেকে সত্তরের কম নয়। কারণ চীনের তরুণরা এখন আর ট্র্যাডিশনাল পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করে না। তারা শৈল্পিক বা বাণিজ্যিক কৃষির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তাদের একেকটি কৃষি ক্ষেত্র মানে কৃষি কারখানা। শুধু গুটিকয় বয়স্ক কৃষক তাদের কৃষির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলারও চেষ্টা করেছি। দেখেছি ঐতিহ্যগত কৃষি তাদের জীবনীশক্তি। সেই চিরচেনা চীনা কৃষকের রূপ তারা এখনো ধরে রেখেছেন। মাথায় মাথাল আর কাঁধে কাঠের ভারে সেচের পানি নিয়ে খেতের আল ধরে হেঁটে আসছেন একজন। সামনে এগোতেই চোখে পড়ল পুরনো একটি বাড়ি। এখানেই এই একখ- জমিতে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি রাসের প্রকল্প গড়ে তুলতে চান উদ্যেক্তা ফ। এ নিয়ে তিনি প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করলেন লিওর কাছ থেকে। লিও জানালেন দুই মাসের মধ্যেই ফ-এর মাছের কারখানাটি চালু হয়ে যাবে। তবে ফ পিভিসি ট্যাংকের পরিবর্তে ব্যবহার করবেন সিমেন্টের ট্যাংক। ১৬টি ট্যাংক বসবে ফ-এর কারখানাটিতে। এভাবেই ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে কৃষি।

মাঠ থেকে চলে আসছে কারখানায়। নির্ভুল হিসাব-নিকাশের নিশ্চিত লাভের কৃষি। মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি নিয়ে সারা দিন কাজ করে রাতে যখন জানসানের একটি খোলা রেস্তোরাঁয় আমরা কজন খাবার খেতে গেলাম; সেখানে রয়েছে জীবিত মাছ তাৎক্ষণিক রান্না ও পরিবেশনের ব্যবস্থা। একটা জাতের মাছ দেখতে পেলাম যার মুখের অংশটি হাঁসের ঠোঁটের মতো লম্বা আর শক্ত। মাছটার নাম ডাকহেড। এসব মাছ চাষ হয় সাধারণত রাস পদ্ধতিতে। মাছের হাউজের মধ্যে সংরক্ষিত এ মাছই অর্ডার করলাম আমরা। মাত্র ১৫ মিনিটেই মাছ রান্না প্রস্তুত হয়ে সামনে এসে গেল। বেশ স্বাদের মাছ। যা হোক, প্রাণিজ আমিষের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ যথেষ্টই সাফল্যের দৃষ্টান্ত গড়েছে। উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় আমাদের এ সাফল্য আরও বহুদূর এগিয়ে যেতে পারে।

লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।

[email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর