রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

তালবিয়া পাঠের ফজিলত

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

তালবিয়া পাঠের ফজিলত

লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা- শারিকা লাক। অর্থ : ‘আমি হাজির হে আল্লাহ!, আমি হাজির! তোমার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির। নিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা ও নিয়ামত তোমার এবং রাজত্বও, তোমার কোনো শরিক নেই।’ বুখারি। বুখারির অন্য বর্ণনায় এসেছে, উপর্যুক্ত তালবিয়াটিই হজরত ইবনে ওমর (রা.) রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ শব্দগুলোর সঙ্গে অন্য কোনো শব্দ যোগ করতেন না।’ আবার তাঁর থেকেই অন্য একটি বর্ণনা পাওয় যায়, যাতে তিনি বলেছেন, (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা ওয়া সা’দাইক, ওয়াল খাইরু বিইয়াদাইক, লাব্বাইকা ওয়ার রগবাউ ইলাইকা ওয়াল আমল।) ‘আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি হাজির! আমি হাজির একমাত্র তোমারই সন্তুষ্টিকল্পে। কল্যাণ তোমার হাতে, আমল ও প্রেরণা তোমারই কাছে সমর্পিত।’

উপরোক্ত তালবিয়াগুলো পাঠ করায় কোনো সমস্যা নেই। তবে খেয়াল রাখতে হবে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবিদের (রা.) ব্যবহৃত শব্দমালার বাইরে অন্য কোনো শব্দ উচ্চারণ করার কোনো সুযোগ নেই। এখন আমাদের জানতে হবে তালবিয়া পাঠের নিয়ম কী? ইহরাম বাঁধার সময় ও পরে উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করবেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার কাছে জিবরাইল আলাইহিসসালাম এসে আদেশ দিলেন। আমি যেন আমার সাথীদের তালবিয়া দ্বারা তাদের কণ্ঠস্বর উঁচু করতে নির্দেশ দিই।’ বুখারি।

পুরুষ-মহিলা সবার ক্ষেত্রেই তালবিয়া পাঠের গুরুত্ব সমান। পার্থক্য এটুকু, মহিলারা পুরুষের মতো উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করবে না। নিজে শুনতে পারে এতটুকু আওয়াজে মহিলারা  তালবিয়া পাঠ করবে। হজরত ইবনে আবদুল বার (রহ.) বলেন, ‘আলিমরা এ ব্যাপারে একমত যে, মহিলাদের ক্ষেত্রে কণ্ঠস্বর উঁচু না করাই সুন্নত। মহিলারা এমনভাবে তালবিয়া পাঠ করবে যেন তারা শুধু নিজেরাই শুনতে পায়। তাদের আওয়াজে ফিতনার আশঙ্কা আছে বিধায় তাদের স্বর উঁচু করার ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।’ হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘মহিলারা স্বর উচ্চ করে তালবিয়া পাঠ করবে না।’

তালবিয়া যেমনিভাবে ওমরাহকারী পাঠ করবে অনুরূপ হজ পালনকারীরাও পাঠ করবে। হজ আদায়কারীরা হজের কোরবানির দিন জামারাতুল আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপের আগমুহূর্ত পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করবে। হজরত ফজল ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামারাতুল আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ না করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতেন।’ প্রিয় পাঠক! এই তালবিয়া পাঠের অনেক ফজিলত। আসুন আমরা জেনে নিই এর ফজিলত কী। ১. তালবিয়া পাঠের মাধ্যমে হাজী হজ ও ওমরায় প্রবেশের ঘোষণা দেয়। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তালবিয়ায় স্বর উঁচু করার জন্য জিবরাইল আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ এটি হজের বিশেষ এলান।’ ইবনে মাজাহ।

তাবারানির একটি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, হজরত জায়েদ ইবনে খালিদ জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জিবরাইল আমার কাছে এলেন অতঃপর বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন, যেন আপনি আপনার সাথীদের নির্দেশ প্রদান করেন, তারা যেন তালবিয়া দ্বারা স্বর উঁচু করে। কারণ এটি হজের এলান।’ ২. তালবিয়া পাঠ হজ-ওমরাহর শোভা বৃদ্ধি করে। মুসনাদে আহমাদে এসেছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অমুকের ওপর আল্লাহর অভিশাপ! তারা ইচ্ছা করে হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনের শোভা মিটিয়ে দিল। আর নিশ্চয় হজের শোভা হলো তালবিয়া।’ ৩. যে হজে উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করা হয় সেটি সর্বোত্তম হজ। হজরত আবুবকর (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন হজটি সবচেয়ে উত্তম? অন্য বর্ণনায় এসেছে, তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলো, হজের মধ্যে কোন আমলটি সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেন, ‘উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ এবং পশুর রক্ত প্রবাহিত করা।’ তিরমিজি।

৪. তালবিয়া পাঠকারীর সঙ্গে পৃথিবীর জড়বস্তুগুলোও তালবিয়া পাঠ করতে থাকে। হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তি যে তালবিয়া পড়ে তার সঙ্গে তার ডানে-বাঁয়ের গাছ-পাথর থেকে নিয়ে সবকিছুই তালবিয়া পাঠ করতে থাকে। যতক্ষণ না ভূপৃষ্ঠ এদিক থেকে ওদিক থেকে অর্থাৎ ডান থেকে এবং বাঁ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।’ তিরমিজি।

প্রিয় পাঠক! দেখুন তালবিয়া পাঠের কত উত্তম ফজিলত রয়েছে। তাই এ বছর যারা পবিত্র হজ পালন করতে যাচ্ছেন, তাদের বলব, হজ জীবনে বার বার আসে না। রব্বুল আলামিন যেহেতু হজে যাওয়ার তাওফিক দান করেছেন তাই মেহেরবানি করে হজের গুরুত্বপূর্ণ আমল তালবিয়া পাঠ যেন শুদ্ধ হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখুন। যাদের পাঠ শুদ্ধ আছে আলহামদুলিল্লাহ। আর যাদের পাঠে সমস্যা আছে তারা অবশ্যই তালবিয়া পাঠ শুদ্ধ করে নেবেন।

রব্বুল আলামিন আমাদের সব হাজীকে বিশুদ্ধভাবে তালবিয়া পাঠের তাওফিক দান করুন।

                লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির, খতিব ও টিভি উপস্থাপক

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর