রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুঃখ-শোকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে

মুহম্মাদ আশরাফ আলী

আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণের তাগিদ দিয়েছেন। সূরা বাকারায় ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ আপনজনের মৃত্যুতেও আত্মসংবরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আল কোরআন ও হাদিসে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘বান্দার কোনো সন্তান মারা গেলে আল্লাহ ফেরেশতাদের প্রশ্ন করেন তোমরা যখন আমার বান্দার সন্তানের জান কবজ করেছিলে, তখন তোমরা কি তার অন্তরের অবস্থা বুঝেছিলে? তারা বলে, হ্যাঁ। আল্লাহ বলেন সে কি কোনো অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছে? ফেরেশতারা বলেন, হ্যাঁ, সে আপনার হামদ-গুণগান করেছে এবং আপনারই সমীপে নিজের ফিরে আসার কথা মনে করেছে। আল্লাহ তখন নির্দেশ দেন আমার বান্দার জন্য বেহেশতে একটি ঘর নির্মাণ কর এবং তার নামকরণ কর বায়তুল হাম্দ (প্রশংসার ঘর)।’ তিরমিজি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ বলেছেন, ‘যখন আমার বান্দাদের প্রিয় কেউ মারা যায় এবং সে তাতে সবর এখতিয়ার করে, তখন বেহেশত ছাড়া তাকে দেওয়ার মতো আর কোনো পুরস্কার আমার হাতে থাকে না।’ বুখারি। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, আল্লাহর রায় প্রফুল্লচিত্তে মেনে নেওয়া আদমসন্তানের জন্য সৌভাগ্যজনক। আর তাতে মনঃক্ষুণœ ও অতৃপ্ত হওয়া দুর্ভাগ্যজনক।’ হজরত ওমর (রা.) কর্তৃক বর্ণিত আছে, প্রাণসংহারক ফেরেশতা ইমানদারের জান কবজ করে বিদায়কালে যখন মৃতের আত্মীয়স্বজন বুক চাপড়ায়, চুল আলুথালু করে এবং নিজের মৃত্যু ও ধ্বংস প্রার্থনা করে শোক প্রকাশ করতে লেগে যায়, তখন তিনি মুহূর্তের জন্য বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে পড়েন এবং বলেন, ‘এত অস্থির ও শোক বিলাপের কী হলো? আল্লাহর শপথ! আমি তো তোমাদের কারও আয়ু হ্রাস করিনি, কারও মুখের গ্রাস ছিনিয়ে নিইনি, কারও প্রতি সামান্য অত্যাচারও করিনি। তোমাদের অসন্তো -ষ ও খেদোক্তি যদি আমার বিরুদ্ধে হয়, তবে আল্লাহর শপথ! আমি আল্লাহর নির্দেশের অনুগত মাত্র। আর তোমাদের ক্ষুব্ধতা যদি মৃতের জন্য হয়, তবে তার সর্বনাশ! আর তোমাদের ক্ষুব্ধতা যদি তোমাদের প্রভুর ওপর হয়, তবে তোমরা কুফরি করছ। আমাকে আরও অসংখ্যবার আসতে হবে এবং একসময় দেখা যাবে, তোমাদের আর কেউ অবশিষ্ট (জীবিত) নেই।’ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! মানুষ যদি তাঁকে দেখতে এবং তাঁর এ বক্তব্য শুনতে পেত, তবে তারা তাদের মুর্দার কথা বিস্মৃত হয়ে নিজেদের জন্যই কেঁদে ব্যাকুল হতো।’ মানুষের মৃত্যু পূর্বনির্ধারিত। আল্লাহর হুকুমেই কারও মৃত্যু হতে পারে। এজন্য মাতম না করে ধৈর্যধারণ এবং নামাজ ও ইবাদতের মাধ্যমে মৃতের রুহের মাগফিরাত কামনা করা আমাদের কর্তব্য হওয়া উচিত।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

 

সর্বশেষ খবর