বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

ওমরাহ কেন ও কীভাবে করবেন?

মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদি

ওমরাহ কেন ও কীভাবে করবেন?

জিলহজ মাসের ৯-১৩ তারিখ হচ্ছে পবিত্র হজের নির্দিষ্ট সময়। এ সময়ের বাইরে হজ করা যায় না। আর ওমরাহর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। শুধু হজের দিনগুলো ছাড়া বছরের বাকি সময়গুলোতে ওমরাহ করা যায়। বিশেষ করে রমজানের সময় ওমরাহর ফজিলত অনেক বেশি। তারপরও বিশ্বের কোটি কোটি মুমিন মুসলমান হজের জন্য বাইতুল্লায় গেলে হজের পূর্বে ওমরাহ করে থাকেন। আবার অনেকে হজ ও ওমরাহর ইহরাম এক সঙ্গে বেঁধে আগে ওমরাহ আদায় করেন এবং সেই ইহরাম দিয়ে পবিত্র হজও সম্পাদন করেন। এ লেখায় ওমরাহর ফজিলত ও ওমরাহ করার নিয়ম তুলে ধরা হলো।

ওমরাহর ফজিলত : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, এক ওমরাহ হতে অন্য ওমরাহ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সবকিছুর গুনাহের কাফফারা। আর মাবরুর হজের প্রতিদান হলো জান্নাত (বুখারী ও মুসলিম)। অন্য হাদিস শরিফে প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা বারবার হজ ও ওমরাহ আদায় কর, কেননা এ দুটো দারিদ্র্য ও গুনাহকে সেভাবে মুছে ফেলে, যেভাবে কর্মকারের হাওয়া দেওয়ার যন্ত্র লোহার ময়লাকে দূর করে থাকে। (নাসায়ী শরিফ।)

ইহরাম বাঁধা ফরজ: পুরুষরা ইহরামের জন্য সাদা দুটি চাদর ও মহিলারা তাদের সাধারণ পোশাক পরে মিকাত ছেড়ে যাওয়ার সময় নিয়ত করে বলবেন- ‘লাব্বাইকা ওমরাতান বা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা ওমরাতান’। ওমরাহ যদি অন্যের পক্ষ থেকে হয় তবে ‘লাব্বাইকা ওমরাতান আন’-এর পরে তার নাম উচ্চারণ করতে হবে।

তালবিয়া পড়া সুন্নাত: পবিত্র কাবা ঘর দেখার আগ পর্যন্ত তালবিয়া ও অন্যান্য সব ধরনের দোয়া পড়তে হবে। তালবিয়া হলো, ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাক।’

ইহরামের নিয়ত করার পর যা নিষিদ্ধ: (১) পুরুষের জন্য সেলাই করা পোশাক পরা। (২) মাথার সঙ্গে লেগে থাকে এমন জিনিস দ্বারা মাথা ঢাকা। (৩) ইচ্ছাকৃত মাথার চুল ও শরীরের পশম কাটা বা উঠানো। (৪) হাত ও পায়ের নখ কাটা। (৫) আতর বা সুগন্ধি জাতীয় জিনিস ব্যবহার করা। (৬) স্থলচর প্রাণী শিকার করা। (৭) স্বামী-স্ত্রী মিলন করা বা এ জাতীয় বিষয়ে আলাপ আলোচনা করা। (৮) বিবাহের প্রস্তাব দেয়া বা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। (৯) মহিলাদের জন্য হাত মোজা ব্যবহার করা এবং  মুখ ঢাকা। (১০) পবিত্র মক্কা ও মদিনার হারাম সীমানার গাছপালা কাটা, ভাঙ্গা উপড়ে তোলা। (১১) পবিত্র মক্কা ও মদিনার হারাম সীমানায় পড়ে থাকা জিনিস তুলে নেওয়া। তবে তা মালিককে দেওয়ার নিয়তে উঠালে তাতে দোষ হবে না বলে ফকিহরা মন্তব্য করেছেন। (মুকাম্মাল মুদাল্লাল হজ ও উমরা, ১২০ পৃষ্ঠা।)

পবিত্র মক্কায় পৌঁছে করণীয় ৩টি

১. তাওয়াফ করা ফরজ : পবিত্র মক্কায় পৌঁছে তাওয়াফের আগে উত্তমরূপে ওজু করে নিতে হবে। কেননা তাওয়াফের জন্য ওজু শর্ত। নামাজের সময় নিকটবর্তী না হলে, মসজিদে প্রবেশ করে সরাসরি তওয়াফে যেতে হবে। তওয়াফ শুরুর আগে পুরুষদের জন্য ইজতেবা (বাম ও ডান কাঁধ খালি রাখা) করতে হবে। অর্থাৎ চাদরের মধ্যভাগ ডান কাঁধের নিচে দিয়ে নিয়ে বাম কাঁধের উপর পড়তে করতে হবে।

‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলে হাজরে আসওয়াদ চুমো বা স্পর্শ করার মাধ্যমে তাওয়াফ শুরু করতে হবে। চুমা বা স্পর্শ করার সুযোগ না হলে, হাজরে আসওয়াদ বরাবর গিয়ে শুধু ডান হাত দ্বারা হাজরে আসওয়াদের দিকে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে ইশারা করে চুমু দিয়ে তাওয়াফ শুরু করতে হবে। হাজরে আসওয়াদের আগের কোণ রুকনে ইয়ামানীতে পৌঁছা পর্যন্ত সময়ে, কোরআন তিলাওয়াত, দুরুদ শরিফ ও যে কোন ধরনের দোয়া পড়া যায়।

হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করে আবার হাজরে আসওয়াদে আসলে এক তাওয়াফ হয়। এভাবে সাত তওয়াফ বা চক্কর শেষ করে উভয় কাঁধ ঢেকে, মাকামে ইবরাহিমের পিছনে নামাজ পড়ার উপযুক্ত স্থান পেলে দু’রাকাত নামাজ পড়তে হবে। ভিড়ের কারণে সম্ভব না হলে কাবা শরিফের যে কোন স্থানে পড়লেই চলবে। (মাসায়েলে হজ ও উমরা, ১২০ পৃষ্ঠা)

(২) সায়ী করা ওয়াজিব : সাত তাওয়াফ শেষ করে সায়ী করার জন্য ছাফা মারওয়া পাহাড়ে যেতে হবে। শুধু সাফাতে আরোহণের সময় এ আয়াত ‘ইন্নাছ ছফা অল মারওয়াতা মিন শাআ ইরিল্লাহ’ পড়তে হবে। পাহাড়ে আরোহণ করে কিবলামুখী হয়ে, দোয়ার জন্য দু’হাত তুলে ৩ বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার’ বলে এই দুয়াটি পড়তে হবে-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারীকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, আনযাজা ওয়াদাহু, ওয়া নাসারা আবদাহু, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহ্দাহু।’ মাঝে মাঝে অন্যান্য দোয়াও পড়া যাবে।

এরপর মারওয়ার দিকে যেতে হবে। কিছুদূর গেলে দুটি সবুজ চিহ্ন দেখা যাবে। দু’চিহ্নের মাঝে শুধু পুরুষদের হালকা দৌড়াতে হবে। সাফা-মারওয়াতে চলতে কোরআন তেলাওয়াত, দুরুদ শরিফ, তাসবিহ ও যে কোন ধরনের দোয়া পড়া যায়। (শরহে বোকায়া, হজ অধ্যায় এবং আসান ফেকাহ, ২য় খ-, ১৮২ ও ১৮৩ পৃষ্ঠা।)

(৩) মাথার চুল খাটো বা মু-ানো ওয়াজিব : সাাফা মারওয়াতে সায়ী শেষে মাথার চুল চার ভাগের একভাগ ছোট বা মু-ন করা উভয়টিই বৈধ।

 

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন, বেতার ও টিভির ইসলামী উপস্থাপক; খতিব, মণিপুর বাইতুর রওশন জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর