শনিবার, ২০ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

হজের সফরের আদব

মুফতি এহসানুল হক জিলানী পেশ ইমাম

হজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। একজন মুসলমানের জীবনে হজ নসিব হওয়া তার জন্য পরম সৌভাগ্যের বিষয়। তাই যখনই আল্লাহ কাউকে মেহেরবানি করে হজের সুযোগ দান করেন তার উচিত এ হজকে কামিয়াব করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা। কামিয়াব হজকে হাদিসে হজে মাবরুর নামে অভিহিত করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হজে মাবরুরের একমাত্র প্রতিদান হচ্ছে জান্নাত।’ নিজের হজকে হজে মাবরুর বানানোর জন্য প্রত্যেক হজকারীর কর্তব্য হলো হজের যাবতীয় বিধি-বিধান জানা এবং সে অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গরূপে আমলের চেষ্টা করা। এর মধ্যে হজের আদবগুলো পরিপূর্ণ রক্ষা করা সবার অবশ্যকর্তব্য। কারণ, হজকারীর সফর আর অন্য দশজনের সফর অবশ্যই এক নয়। হজকারী তো যাচ্ছেন আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেওয়ার জন্য, নিজের অতীত জীবনের গুনাহ থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য, আল্লাহর মহব্বতে নিমগ্ন হয়ে আল্লাহকে পাওয়ার জন্য। তাই এমন গুরুত্বপূর্ণ সফর অবশ্যই আদবপূর্ণ হওয়া চাই এবং যাবতীয় অন্যায় ও বেয়াদবিমুক্ত হওয়া চাই। নিম্নে আমরা সংক্ষেপে হজের সফরের কিছু আদব তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।

১. হজের সফরের সবচেয়ে বড় আদব হচ্ছে প্রতিটি মুহূর্ত তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয়কে অন্তরে জাগ্রত রেখে কাটানো। মনে রাখা দরকার, হজের সফরের সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ ও পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয়। এ তাকওয়া না থাকলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং হজে মাবরুর লাভ হওয়া অসম্ভব। সেজন্যই আল্লাহ রব্বুল আলামিন হজের জন্য পাথেয় সংগ্রহের যে আদেশ দিয়েছেন, তাতে তিনি এ তাকওয়ার পাথেয়র কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘তোমরা (হজের জন্য) পাথেয় সংগ্রহ কর। আর সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া বা আল্লাহভীতি।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৯৭।

এর কারণ হচ্ছে, হজের সফরে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে এমন সব পরিস্থিতিও এসে যায় যে, নিজেকে গুনাহমুক্ত রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখন যদি কোনো ব্যক্তির মধ্যে তাকওয়া না থাকে তাহলে সে সেই গুনাহে লিপ্ত হয়ে যাবে। আর এভাবে তার এ হজ আর হজে মাবরুর থাকবে না, বরং এর যাবতীয় ফজিলত নষ্ট হয়ে যাবে। ২. হজের যাবতীয় বিধি-বিধান ভালোভাবে শিখে নেওয়া। কেননা তা না হলে সঠিকভাবে হজ আদায় না হওয়ার কারণে হজে মাবরুরের ফজিলত থেকে মাহরুম হতে হবে। ৩. সফরের জন্য যাবতীয় খরচাদির ব্যবস্থা করে নেওয়া, যাতে অন্যের কাছে হাত না পাততে হয়। সম্ভব হলে নিজের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি করে নিয়ে নেওয়া, যাতে দরকার হলে সাথী ভাইদের জন্যও খরচ করা যায়। ৪. সব ধরনের অশ্লীল কথাবার্তা ও কর্মকা- এবং বিতর্ক থেকে বেঁচে থাকা। কেননা আল্লাহ এ ব্যাপারে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব, যার এ তিন মাসে হজ ফরজ হবে, সে হজ করবে, তবে অশ্লীল কথাবার্তা বলবে না, গুনাহ করবে না এবং হজের মধ্যে কারও সঙ্গে বিবাদে জড়াবে না।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৯৭।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করল আর অশ্লীল কথাবার্তা বলল না এবং গুনাহও করল না, সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল।’ বুখারি।

৫. হজের সফরে সব হাজীই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা জিয়ারত করেন। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্য লক্ষণীয় হলো, রওজা এলাকায় নিজের আওয়াজকে খুব নিচু ও সর্বোচ্চ বিনয়ের সঙ্গে চলাফেরা করা। কেননা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে সামান্য পরিমাণ গোস্তাখি একজন ব্যক্তির ধ্বংস হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এ কারণেই সাহাবায়ে কিরামের প্রতি আল্লাহর কঠোর নির্দেশ ছিল তাঁর সামনে নিচু আওয়াজে কথা বলার। আর এখন পর্যন্ত এ আদেশ বহাল রয়েছে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা তোমাদের আওয়াজকে নবীর আওয়াজের ওপর উঁচু কোরো না।’ সূরা হুজুরাত, আয়াত ২। এ ছাড়া হজের গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক মাসায়েল ও আদব রয়েছে। এখানে আমরা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আদব তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। হজকারীর উচিত হলো, হজের সফরে বের হওয়ার আগে প্রয়োজনীয় মাসায়েল ও আদব সম্পর্কে জেনে নেওয়া এবং পূর্ণ হজের সফরে একজন বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ আলেমের সাহচর্য গ্রহণ করে প্রতিটি বিধান তার থেকে বুঝে নেওয়া এবং তাকে অনুসরণ করা। কোনো হজকারী যদি এভাবে তার হজের প্রতি যত্নবান হয়, ইনশা আল্লাহ তার হজে মাবরুরের সৌভাগ্য নসিব হবে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের হজে মাবরুর করার সৌভাগ্য ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজার পাশে দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করার তাওফিক দিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর