শিরোনাম
বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

উন্নত নৈতিক শিক্ষা দীক্ষা দেয় ইসলাম

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

উন্নত নৈতিক শিক্ষা দীক্ষা দেয় ইসলাম

নৈতিকতা মানবজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। এ সম্পদ মানুষের মতো মানুষ হতে উদ্বুদ্ধ করে। অন্যায়, অসত্য ও অসুন্দর থেকে দূরে থাকার প্রেরণা জোগায়। ইসলাম আদর্শ মানুষ গড়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের নৈতিক দিকগুলো উন্নত করার শিক্ষা দিয়েছেন। বিশেষত তাঁর অনুসারীরা যাতে আত্মসংযমী হয় তিনি তেমনটি চেয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কুস্তিতে পরাক্রমশালী ব্যক্তি প্রকৃত বীর নয়; বরং ক্রোধের সময় যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে সে-ই প্রকৃত বীর।’ বুখারি, মুসলিম, মুয়াত্তা, মুসনাদে আহমাদ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন, ক্রোধান্বিত হয়ো না। লোকটি কয়েকবার কথাটি পুনরাবৃত্তি করলে তিনি প্রতিবারই বলেন, ক্রোধান্বিত হয়ো না।’ বুখারি থেকে মিশকাতে। ইসলামবিষয়ক গবেষকদের মতে মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যে দুর্বলতায় ভোগে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিকেই দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। মনে হয় এ ব্যক্তি ক্রোধের বশবর্তী হয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলতেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে এ দুর্বলতা থেকে বাঁচার জন্য বার বার তাগিদ দেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তিনটি জিনিস ইমানি বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত- ১. ইমানদার ব্যক্তি ক্রোধান্বিত হলে সে ক্রোধ তাকে বাতিলের পঙ্কে নিক্ষেপ করতে পারে না ২. আনন্দিত হলে সে আনন্দ তাকে সত্য পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে না এবং ৩. ক্ষমতা লাভ করলে সে ক্ষমতাবলে এমন কোনো জিনিস ভোগদখল করে না যার ওপর তার কোনো অধিকার নেই।’ তাবারানির আল-মুজামুস সাগির। আলোচ্য হাদিসে ইমানি চরিত্র কথার অর্থ এই যে, উল্লিখিত তিনটি জিনিস ইমানের মৌলিক দাবিসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর অনুপস্থিতিতে ইমানের আসল সৌন্দর্যই অবশিষ্ট থাকে না। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আত্মসংযমের পাশাপাশি অনুসারীদের প্রতিশোধপরায়ণতা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কোনো ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। কিন্তু আল্লাহর হুরমাতসমূহ (আল্লাহ নির্দেশ বা নির্ধারিত সীমা) পদদলিত হতে দেখলে তিনি আল্লাহর উদ্দেশে প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন।’ বুখারি ও মুসলিম থেকে রিয়াদুস সালেহিন। মুমিনরা উদার মনের অধিকারী হবে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটিই দেখতে চেয়েছেন। নিচের হাদিসটি তারই প্রমাণ। আবুল আহওয়াস আল-জুশামি (র.) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তার পিতা বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল! আপনি কি মনে করেন, যদি আমি কোনো ব্যক্তির কাছে যাই এবং সে আমার মেহমানদারির হক আদায় না করে এবং পরে সে যদি আমার কাছে আসে তখন কি আমি তার মেহমানদারি করব না, প্রতিশোধ নেব? তিনি বলেন, তুমি তার মেহমানদারি করবে। তিরমিজি। অর্থাৎ কেউ অসংগত আচরণ করেছে বলে তাকে তা ফিরিয়ে দিতে হবে এমনটি কাম্য নয়। এ ধরনের মনোভাব সামাজিক সংহতির ক্ষতিসাধন করে বলে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে পথ থেকে আমাদের দূরে থাকতে বলেছেন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর