মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

মাদকের ঘাঁটি বরগুনা

নিয়ন্ত্রকদের আইনের আওতায় আনুন

মাদকের নতুন রুটে পরিণত হয়েছে দেশের উপকূল প্রান্তের জেলা বরগুনা। শান্তি ও সুসংস্কৃতির লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত বরগুনা সাম্প্রতিককালে সন্ত্রাস ও হানাহানির জনপদে পরিণত হয়েছে মাদক ব্যবসার অশুভ প্রতিক্রিয়ায়। টেকনাফ কক্সবাজারের বদলে সাগর প্রান্ত থেকে ইয়াবাসহ হরেকরকম মাদক হাজির হচ্ছে বরগুনায়। গুঞ্জন রয়েছে, একজন সংসদ সদস্যের পুত্র এ মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক। স্থানীয়দের অভিযোগ, বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফ হত্যার পেছনেও ইয়াবাই দায়ী। ইয়াবার কারণে বরগুনায় নানা ধরনের অপরাধ বেড়েছে। এখানে ইয়াবা যেভাবে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে, কদিন পর তা টেকনাফকেও হার মানাবে। কেউ কেউ বরগুনাকে ‘নিউ টেকনাফ’ বলেও আখ্যায়িত করছেন। চলতি বছর ২ এপ্রিল ঢাকায় বরগুনা থেকে আসা লঞ্চ ‘সপ্তবর্ণা-১’ থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের ৮ লাখ ৪৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার চালান মাছধরার ট্রলারে কক্সবাজার থেকে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী ও বরগুনায় আসে। এরপর সেখান থেকে লঞ্চে করে বাহক দিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় ৫২ লাখ। প্রতি বছর ৫ লাখ তরুণ-তরুণী মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকাসক্তের ৪১ ভাগই বেকার এবং এর মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ ভাগ। সোজা কথায়, শতকরা ৫৫ ভাগ মাদকসেবী মাদকের অর্থ জোগাতে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। তারা মাদকের অর্থ জোগাতে পারিবারিক জীবনে অশান্তি সৃষ্টি করে। ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। প্রতি দুজন মাদকাসক্তের একজন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতের সিংহভাগই মাদকাসক্তের শিকার। এ অবস্থায় মাদক আগ্রাসন ঠেকাতে সর্বাত্মক পদক্ষেপের বিকল্প নেই। মাদকের বিরুদ্ধে পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য যারা সংশ্লিষ্ট, তাদের অনেকের মধ্যেই সততার সংকট রয়েছে। এমনকি টেকনাফ ও বরগুনায় মাদক প্রতিরোধের নামে যেসব কমিটি গড়ে উঠেছে, তার ৮০ ভাগ সদস্য নিজেরাই মাদক ব্যবসায় জড়িত বলে মনে করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রতিটি এলাকার জনপ্রতিনিধি আন্তরিক ভূমিকা রাখলে মাদক আগ্রাসনের ইতি ঘটানো সম্ভব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর