বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাবা গোপাল, খারাপ তোমার কপাল

পীর হাবিবুর রহমান

বাবা গোপাল, খারাপ তোমার কপাল

বাবা পার্থ গোপাল বণিক! তুমি কি জানতে না, চোরের দশ দিন আর সাধুর এক দিন। আর তোমার বুদ্ধিমতী বউ একজন চিকিৎসক হয়েও রতন মণি সাহা পাশের ভবনে ৫০ লাখ টাকা ভর্তি বস্তা ছুড়ে ফেলে দিলেন, দুদকের দলকে দরজায় দাঁড় করিয়েই। দুদকের অভিযান পরিচালনাকারী দল সেই টাকার বস্তা কুড়িয়ে এনে খুলে দেখল ৫০ লাখ টাকা। আর ঘরে পাওয়া গেল আরও ৩০ লাখ। ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করার পর বাবা পার্থ গোপাল বণিক বললে, ৫০ লাখ তোমার ১৮ বছরের চাকরি জীবনের সঞ্চয়ের টাকা। আর ৩০ লাখ টাকা তোমার শাশুড়ি দিয়েছেন। তুমি এত অভাগা, সত্য আড়াল করতে গেলে যে ভয়ঙ্কর মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়; সেটি আবার জানিয়ে দিয়েছ। হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও হাস্যরস সৃষ্টি করা গল্প শুনিয়েছ। তুমি কোথাকার রাজকন্যা বিয়ে করেছিলে যে, শাশুড়ি তোমাকে ৩০ লাখ টাকা দিয়েছেন? তোমার শ্যালিকা কোন ধনকুবেরের স্ত্রী যে তোমার শাশুড়ির নামে ভূতের গলির ফ্ল্যাটটি কিনে দিয়েছেন? যেখানে অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের সময় থেকেই তুমি বাস করছ। দেশের বড় বড় শিল্পপতির ঘরেও এত ক্যাশ টাকা থাকে কিনা, আমাদের সন্দেহ আছে। তোমার চেয়ে অনেক গুণ বেশি বেতন, সুযোগ-সুবিধা, চিকিৎসা খরচ, বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পাওয়া চাকরি করেও তো আমি গরিব, এত টাকা একসঙ্গে কোনো দিন দেখিনি। তুমি কি ভুলে গেছ, ওয়ান-ইলেভেনে বনের রাজা ওসমান গনির বিছানার নিচ থেকে কীভাবে টাকার বান্ডিল উদ্ধার হয়েছিল? সাবেক প্রধান বন কর্মকর্তা ওসমান গনির অবৈধ টাকা ও সম্পদ এসেছিল বন থেকে। আর তোমার টাকা যে কারাগার ঘিরে সব অবৈধ ও দুর্নীতির মহোৎসবের ভাগ থেকে এসেছে সেটা তো দিনের মতো পরিষ্কার। ওসমান গনির কী হয়েছে শেষ পর্যন্ত, আমরা তাও ভুলে গেছি।

গত বছর অক্টোবরে ভৈরব থেকে চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসকে গ্রেফতার করা হলে তল্লাশি চালিয়ে তার দুটি ব্যাগ থেকে ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার ক্যাশ টাকা, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিটের রসিদ, ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক, বিভিন্ন ব্যাংকের ৫টি চেক বই, একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা ও ১২ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছিল। বাবা গোপাল! তুমি অভাগা তখন চট্টগ্রামের ডিআইজি প্রিজন। সেখান থেকেই দুদক তোমার অপকর্মের তদন্ত শুরু করেছিল। তারপর তোমাকে সিলেটে বদলি করা হলো। তোমাকে ওএসডিও করা হলো না।  সরল বিশ্বাসী সরকার বুঝল না, তোমার স্বভাব পাল্টানো যাবে না। রবিবার সকাল ১০টায় তোমাকে দুদক কার্যালয়ে তলব করে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর কর্মকর্তারা তোমার বাসায় অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আর সেখানে গিয়ে দেখেন, দরজা বন্ধ করে তোমার স্ত্রী রতন মণি সাহা দরজা না খুলে নানা নাটকীয়তার পর টাকার বস্তা ছুড়ে ফেলেন। কষ্টার্জিত টাকা না হলে, দরজায় বিপদের ঘণ্টা বাজলেই বুঝি এভাবে লাখ লাখ টাকা ছুড়ে ফেলা যায়? অবশেষে দুদক কর্মকর্তারা জেলের রাজা বাবা গোপালের সম্পদ আহরণ করলেন। ঘরেই যার ক্যাশ ৮০ লাখ থাকে অদৃশ্য সম্পদ তার কত হবে বাবা গোপাল!

আজকের পৃথিবী ধর্মসহ নানা ইস্যুতে অশান্ত-অস্থির। মহাত্মা গান্ধীর যে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে ধর্মনিরপেক্ষ উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। গণতন্ত্রের মহান নেত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীসহ সব রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছিল, সেই ভারত আমার একটি প্রিয় দেশ। পাকিস্তান যেখানে সাম্প্রদায়িকতার বিষে বিষাক্ত, সেনাশাসন ও জঙ্গিবাদে ক্ষত-বিক্ষত; সেটি তো আমার জন্মের শত্রু। কিন্তু আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সীমান্তরেখায় গায়ে গা মেখে দাঁড়ানো ভারতের জনগণ ও তাদের নেত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী, আমাদের সুমহান মুক্তিযুদ্ধে যে আশ্রয়, সাহায্য ও সহযোগিতা দিয়েছেন; সেই অবদান বন্ধুর প্রতি, আপনজনদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার বাঁধনে আটকে রাখে। সেই মহান ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ নীতি আজ কট্টর হিন্দুত্ববাদের, উগ্রপন্থিদের তা-বে আক্রান্ত। অন্য ধর্মের মানুষকে জয় শ্রী রাম না বললে হত্যা-নির্যাতন, গরুর মাংস রাখার সন্দেহে আক্রমণ; মহাত্মা গান্ধীর আত্মাকেই কাঁদায় না; তার উত্তরসূরিদের বর্ণাঢ্য অবদানকে আক্রান্ত করে। যে ভারত আমার প্রিয় বন্ধুদেশ, সেই ভারতের এই চিত্রপট দেখলে ভয় লাগে। আমরাও আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামে ও রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানো অশ্রু ও বেদনার বিনিময়ে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পেয়েছিলাম। আমাদের জাতির ঐক্যের প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবার-পরিজনসহ হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে একাত্তরের পরাজিত, স্বাধীন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তিকে পুনর্বাসিত করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের ইতিহাস মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা মুছে দিয়ে সেনাশাসনকবলিত বাংলাদেশে বিসমিল্লাহ আর রাষ্ট্রধর্ম প্রবর্তন করা হয়েছিল।

একাত্তরে আমাদের স্লোগান ছিলÑ বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর। বাঙালি জাতিসত্তা থেকে হোঁচট খাওয়া আমরা বিবেকতাড়িত হয়ে ভাবি না একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে যেমন সব ধর্মের মানুষ অংশগ্রহণ করেছে, শহীদ হয়েছে; তেমনি সম্ভ্রমও হারিয়েছে। আমরা তাই রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র হারিয়ে যারা ইসলামী রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিলেন তাদের সঙ্গে লড়াই করে কার্যত এটিকে অসাম্প্রদায়িক মডারেট মুসলিম কান্ট্রির স্বীকৃতি জুটিয়েছি। দাঙ্গার বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধী যেমন অনশন করেছেন, তেমনি এখানেও বিভিন্ন দাঙ্গায় মানুষ প্রতিরোধ করেছে। সংখ্যালঘুদের মন্দিরে রাজনৈতিক উগ্রপন্থিদের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতার বিষের রাজনীতি অনেকে ছড়ালেও গণরায়ে মানুষ প্রমাণ করেছে, ধর্মপ্রাণ হলেও এখানকার জনগণ ধর্মান্ধ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির পক্ষে গণরায় দিতে রাজি নয়।

একজন প্রিয়া সাহা যেভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে গিয়ে রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে ৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু গুম হওয়ার মিথ্যা অভিযোগ করে আমাদের ব্যথিত করেছেন তেমনি এটি নিয়ে কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিতে চেয়েছেন। সব ধর্মবর্ণের মানুষ যেমন এর বিরোধিতা করেছে; তেমনি ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার বলেছেন, এখানে সম্প্রীতির বন্ধন তাকে মুগ্ধ করেছে। প্রিয়া সাহার অভিযোগ সত্য নয় বলেও জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত।

ভারতে একদল কট্টর হিন্দুত্ববাদী উগ্রপন্থি উন্মত্ত আচরণ করছে। ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ তা গ্রহণ করছে না। সে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে যৌথ চিঠি দিয়েছেন। অপর্ণা সেন বলেছেন, আমি হিন্দু, আমাকে আল্লাহু আকবর বলতে বললে যেমন খারাপ লাগবে; তেমনি এক মুসলমানকে জয় শ্রী রাম বলতে বললে তারও খারাপ লাগবে। পৃথিবীজুড়ে খাবারে মানুষের স্বাধীনতা রয়েছে। ধর্মের নামে এখানে যে হস্তক্ষেপ চলে না, তা মমতা ব্যানার্জি বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আমাদের দেশেও কে শুয়োরের মাংস খাচ্ছে, কে মদপান করছে সেটি তার নিজস্ব ব্যাপার। ধর্ম মানুষের যার যার বিশ্বাসের ব্যাপার। বেঙ্গালুরুতে দেবী শেঠির হাসপাতালে সব ধর্মের মানুষের প্রার্থনার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রাখা আছে। ভারত ও বাংলাদেশের জনগণকে স্বাধীনতার অঙ্গীকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা অনিবার্য হয়ে পড়েছে।

যে কারণে দুদকে আটক বাবা গোপালকে নিয়ে এত কথা বলতে হলো সেটি হচ্ছে- আমরা জন্মের পর থেকেই একটি অসাম্প্রদায়িক পরিবেশে এমনভাবে বেড়ে উঠেছি যে ধর্ম আমাদের সামাজিক আত্মার বন্ধনকে শীতল করতে পারেনি। এই সাম্প্রদায়িকতা, অসাম্প্রদায়িকতা, কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে খ্রিস্টান, কে বৌদ্ধ এ শব্দগুলো চিন্তায় মগজে বা মুখে কখনো আসেনি। আমাদের পাড়ায় অসংখ্য হিন্দু বাড়ি রয়েছে, খ্রিস্টান মিশনও রয়েছে। তেমনি এখনো আমাদের পারিবারিক বন্ধন অনেক গভীরে রয়েছে। আপদে-বিপদে, সামাজিকতায় একসঙ্গে ওঠাবসা, চলাফেরা সবকিছু রয়েছে। ঈদে, বড়দিনে, পৌষসংক্রান্তিতে নিমন্ত্রণে পরস্পরের বাড়িতে আতিথে-য়তা গ্রহণের সংস্কৃতি মলিন হয়নি। ছেলেবেলায় আমাদের পাড়ার হিন্দু বন্ধুদের বাড়ির উঠানে ঢোল-বাদ্য বাজিয়ে কীর্তন করে একদল আসত, তখন বাড়িঘর থেকে মাসিমা, দিদিরা বাতাসা-তিলুয়া, কমলা ছুড়ে দিতেন। এটাকে হরিলুট বলা হতো। যে ধরতে পেত সে-ই নিত। বন্ধুদের সঙ্গে সেসবের ভাগ আমরাও পেতাম।

বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে দিয়েছিলেন। তার কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ এখন উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে অদম্য গতিতে ছুটছে। এই সময় রাজদুর্নীতির একটি হরিলুটও চলছে। দুদকে আটক বাবা গোপাল এত নাটক না করে বললেই পারতে, তুমি এই হরিলুটের সামান্য ভাগ পেয়েছ। আমরাও বলতাম, বাবা গোপাল হরিলুটের সামান্য ভাগ পেয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বালিশ দুর্নীতির হরিলুট উন্মোচিত হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে হরিলুট স্মরণকালের ইতিহাস ভঙ্গ করে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট সৃষ্টি করে ফেলেছে। শেয়ারবাজারে হরিলুট চলতে চলতে এটি প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাত, সেবা খাতসহ এমন কোনো খাত নেই যেখানে দুর্নীতির হরিলুট চলছে না।

রেলের কালো বিড়াল এক মধ্যরাতে বিজিবি গেটে ধরা পড়েছিল, আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। রেল খাত কি এখন দুর্নীতির ঊর্ধ্বে? দেশের রাজনীতিবিদরা গালি খান, দেশের সব আমলারা কি ধোয়া তুলসীপাতা? হরিলুটের ভাগ কি কেউ কেউ পাচ্ছেন না? বাবা গোপালের কপাল খারাপ, দুদকের জালে চুনোপুঁটি ধরা পড়েছে। মানুষ এখন শেখ হাসিনার দুর্নীতিবিরোধী যুদ্ধের সমর্থক হিসেবে দুদকের জালে বোয়াল-রুই ও কাতলাও দেখতে চায়। হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে কারা পাচার করেছে, ব্যাংকের টাকা কারা লুট করে নিয়ে গেছে। সেসব বড় বড় লুটেরা দুদকের জালে দেখতে চায়। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। তার সাহসিকতা ও পদক্ষেপ প্রশংসিত হচ্ছে। দুদকে অনেক সৎ, সাহসী কর্মকর্তা যেমন রয়েছেন তেমনি শর্ষের মধ্যে ভূতও যে থাকে তাও এড়িয়ে গেলে হবে না। দুদকের একজন কর্মকর্তা ডিআইজি মিজান কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে গিয়ে জেলে আছেন। এ রকম আরও দু-চার জনকে চিহ্নিত করে সরিয়ে দেওয়া উচিত। যারা বিভিন্ন খাতের লুটেরার সঙ্গে অফিস স্টাফের মতো সম্পর্ক রাখেন। এরা অনেক সময় নিরপরাধকে ফাঁসিয়ে দেয়, অপরাধীদের মুক্ত করে দেয়। ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও দুদকের অভিযান আরও শক্তিশালী, আরও সাহসী এবং আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হলে যেমন আরও স্বাধীনতা দিতে হবে, তেমনি সৎসাহসী লোকবল বাড়াতে হবে। একের পর এক চুনোপুঁটি ধরলে হবে না, দুর্নীতির বরপুত্রদের জালে আটকাতে হবে। বিভিন্ন জেলা থেকেও দুদক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে দুর্নীতির স্বচ্ছ প্রতিবেদন আনার ব্যবস্থা ও তা খতিয়ে দেখা অনিবার্য হয়ে পড়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে যে রকম বিকৃত চিন্তার প্রতিফলন ঘটান তেমনি অনেকে সুন্দর মত ও সত্য তথ্য উপস্থাপন করেন। ইদানীং কেউ কেউ মতামত দিচ্ছেন- দেশের সব এমপি, দেশের সব সচিব, দেশের সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার যদি শতভাগ সৎ থাকেন; তাহলে দুর্নীতির এ হরিলুট থেমে যাবে। দেশের সেবা অধিদফতর, সংস্থা ও প্রকৌশলীদের কঠিন মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা অনিবার্য হয়ে পড়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী সৎ, দক্ষ ও গতিময় হলেও ভূমি অফিসগুলো দুর্নীতির হরিলুটে আক্রান্ত। আইন মন্ত্রণালয়কে সাবরেজিস্ট্রার অফিস ও সরকারি কৌঁসুলিদের মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখা জরুরি। দেশের সব জেলা সদর হাসপাতালে আচমকা অভিযান পরিচালনা করা জরুরি। বিভিন্ন অধিদফতরের পরিচালক, নির্বাহী প্রকৌশলী, সিভিল সার্জনদের মনিটর করা জরুরি।

ইসলাম ধর্ম কঠোর অনুশাসনের কথা বললেও অনেক মানবিক, উদার দৃষ্টিভঙ্গিও রেখেছে। যেমন হজকে ফরজ করে দিলেও যার সামর্থ্য নেই তার জন্য শিথিল করে দিয়েছে। হজ, জাকাত, রোজা, নামাজ শারীরিক বা আর্থিকভাবে সক্ষমদের জন্যই বাধ্যতামূলক করেছে। এবার সরকারি খরচে ৪ শতাধিক লোককে হজে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা সহায়তার কথা বলে অনেককে নেওয়া হলেও চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত মাত্র দুজন রয়েছেন। এমনকি অনেক সামর্থ্যবানও এ সফরে হজ করতে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রীয় খরচে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাও যাচ্ছেন। তার সঙ্গে নাকি আরও তিনজন রয়েছেন। বলা হয়েছে, সিইসি হজে অনিয়ম হচ্ছে কিনা তা দেখতে সেখানে যাচ্ছেন। কিন্তু তার দায়িত্ব নির্বাচনের অনিয়ম ও ভোটার তালিকা দেখার; হজের অনিয়ম নয়। আর রাষ্ট্রীয় খরচে গরিব, আর্থিকভাবে অসামর্থ্যবান সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, আলেম-ওলামারা গেলেও মেনে নেওয়া যায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা অন্যদের হজে গমন গ্রহণযোগ্য নয়। জনগণের টাকা অপচয় হলে সরকারকে যেমন জবাব দিতে হবে, তেমনি দুর্নীতির নামে যারা হরিলুট করছেন তাদেরও একদিন কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কেউ যদি মনে করেন তাদের বর্তমান সময়টাই চিরস্থায়ী তাহলে ভুল করবেন। তাদের মনে রাখতে হবে- এই দিন দিন নয়, আরও দিন আছে, এই দিন নিয়ে যাবে সেই দিনেরও কাছে। অপরাধীদের জন্য দায়িত্বশীলরা কঠোর হলে হাশরের ময়দান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। ইহকালেই তাদের প্রাপ্য শাস্তি ভোগ করতে হবে।

মাদারীপুরে যুগ্মসচিব সবুর মন্ডল তথাকথিত ভিআইপি হিসেবে তিন ঘণ্টা ফেরি ডিসি ওয়াহিদুল ইসলামকে দিয়ে আটকে দেওয়ায় অ্যাম্বুলেন্সে অসুস্থ শিশু তিতাস অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা গেল। সংবিধান যেখানে জনগণকে ক্ষমতার মালিক করেছে, আমলাদের প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে জনগণের সেবক করেছে; সেখানে একদল আমলা-ডিসি নিজেদের জমিদার মনে করেন। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হলেও জনগণের টাকায় লেখাপড়া করা এসব আমলা অতিরিক্ত বেতন, সুযোগ-সুবিধা লাভ করে আজ সীমালঙ্ঘন করছেন। যুগ্মসচিব থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক সবাই কেন ভিআইপি, কারা ভিভিআইপি আর কারা ভিআইপি এটা সরকারকে এখনই জানানো উচিত। আর তিতাস হত্যার জন্য কে কে দায়ী সংসদীয় কমিটির তদন্তে তাদের বের করে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সময়ের দাবি।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সর্বশেষ খবর