বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

মানুষের হেদায়াত ও বরকতময় কাবাঘর

মুহম্মাদ জিয়াউদ্দিন

পৃথিবীতে মানুষের ইবাদতের জন্য সর্বপ্রথম যে ঘরখানা নির্মাণ করা হয় তা হচ্ছে কাবা। এ ব্যাপারে আল কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়াত ও বরকতময়।’ কাবাঘর নির্মাণের পর কয়েকবার পুনর্নির্মাণের বর্ণনা পাওয়া যায়। এর মধ্যে হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক কাবাঘর পুনর্নির্মিত হওয়ার কথা কোরআনে সবিশেষ উল্লেখ করা হয়েছে। ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর আদেশে তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে সঙ্গে নিয়ে কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করেন। আল কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘স্মরণ কর, যখন ইবরাহিম ও ইসমাইল কাবাঘরের ভিত্তি স্থাপন করছিল। তারা দোয়া করে, প্রভু! আমাদের এ কাজ কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী সর্বজ্ঞ।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১২৭। বর্ণনায় এসেছে, এ সময় ইবরাহিম (আ.) একটি একটি করে পাথর গাঁথছিলেন আর ইসমাইল (আ.) তাঁর হাতে পাথর তুলে দিয়ে তাঁকে সহযোগিতা করছিলেন। পাথর গাঁথতে গাঁথতে দেয়াল যখন কিছুটা উঁচু হলো, তখন তিনি পায়ের নিচে একটি পাথর দেন। সে পাথরটিই বর্তমানে মাকামে ইবরাহিম নামে প্রসিদ্ধ। কোরআনে এর উল্লেখ রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এতে মাকামে ইবরাহিমের মতো প্রকৃষ্ট উদাহরণ রয়েছে।’ সূরা নিসা, আয়াত ৯৭। পাথর গাঁথার সময় তাঁরা চারপাশে ঘুরে ঘুরে পাথর লাগাচ্ছিলেন আর এ দোয়া করছিলেন, ‘হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাদের পক্ষ থেকে এই আমলকে কবুল কর। নিশ্চয় তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’

আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-কে কাবাঘর নির্মাণের আদেশ করে তাঁকে শিরক না করার এবং তাওয়াফকারী ও ইবাদতকারীদের জন্য একে পবিত্র রাখার আদেশ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘ওই সময়টির কথা স্মরণ কর, যখন আমি ইবরাহিমকে কাবাঘরের স্থান নির্দেশ করে দিলাম যে, আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না, আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখবে।’ সূরা হজ, আয়াত ২৬। কোরআনের উপরোক্ত বক্তব্যে অনুভব করা যায়, কাবাঘর নির্মাণের প্রথম লক্ষ্যই হচ্ছে মানবজাতিকে এ আহ্বান জানানোÑ তারা যেন শিরকের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসে এবং কেবল এক আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করে। কোরআনে কাবাকে একটি বরকতপূর্ণ ঘর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যার দ্বারা বোঝা যায়, এ ঘর পৃথিবীবাসীর জন্য বরকতলাভের একটি উৎস। এ ঘরের অভিমুখী হয়ে আল্লাহর ইবাদত করলে আল্লাহ বরকত নাজিল করবেন। এ ছাড়া কাবাঘরকে জগৎসমূহের জন্য হেদায়াত বলা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, জগদ্বাসীকে এ ঘর সরল পথ দেখাবে। নাজাতের পথে ডাকবে। শিরকমুক্ত জীবন গঠন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। মূলত তাওহিদ বা  একাত্মবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য ইবরাহিম (আ.) যে সীমাহীন আত্মত্যাগ করেছিলেন, এ আত্মত্যাগকে আল্লাহ কবুল করে কাবাঘরের মাধ্যমে তাঁর তাওহিদের দাওয়াতকে কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী সমগ্র বিশ্বের মানুষের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর