বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
ইতিহাস

মোহনলাল

মোহনলাল ছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার অন্যতম বিশ্বস্ত সভাসদ। তিনি দেওয়ান মোহনলাল নামে পরিচিত ছিলেন। ইতিহাসবিদদের মতে তিনি জাতিতে কাশ্মীরী এবং হিন্দু কায়স্থ পরিবারের সন্তান ছিলেন। ১৭৫৬ সালের এপ্রিলে নবাবের আসনে বসেই সিরাজউদ্দৌলা যে দুজন দক্ষ কর্মকর্তার ওপর আস্থা স্থাপন করেছিলেন তারা হলেন মীর মদন ও মোহনলাল। নবাবের দেওয়ানখানার পেশকার নিযুক্ত করে তাকে মহারাজা উপাধি ও মনসবদারি দান করা হয়। তাকে বিহারের পূর্ণিয়ার শাসনভারও অর্পণ করেন নবাব। নবাবদরবারে তার প্রতিপত্তিতে সিরাজের শত্রুরা আতঙ্কিত হয় এবং মোহনলালকে বিষপ্রয়োগে হত্যার চক্রান্তও হয়েছিল। এ কথা নবাবের দরবারে আগত ফরাসি দূত মঁসিয়ে ল তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন।

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশী যুদ্ধের সময় মোহনলাল সিরাজের প্রতি অবিচল বিশ্বস্ততায় যুদ্ধ করেছিলেন। গোলাম হোসেন রচিত ‘সয়ার-উল-মুতাখেরিন’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, মীর মদনের মৃত্যুর পরও মোহনলালের একক চেষ্টায় যুদ্ধের গতি সিরাজের অনুকূলে ছিল। কিন্তু অদূরদর্শিতা ও মানসিক দুর্বলতাহেতু তরুণ নবাব সিরাজ বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরের প্ররোচনায় যুদ্ধ বন্ধ রাখার আদেশ দেন। ফলত নবাব বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় ও শোচনীয় পরাজয় ঘটে। মোহনলালের যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটে এমনটা অনেকে মনে করেন। ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকারের মতে মোহনলাল যুদ্ধে আহত হন। যুদ্ধের পর তার বড় ছেলে (পূর্ণিয়ার নায়েব নাজিম) শ্রীমন্ত লাল মিরনের হাতে মারা যান। ছোট ছেলে হুক্কা লাল পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন।

মোহনলালের পলাতক জীবন সম্পর্কে বিশেষ বিতর্ক আছে। ইতিহাসবিদ নিখিলনাথ রায় ও সোনিয়া আমিন বলেন, ‘মোহনলালের বোন ছিলেন সিরাজের প্রণয়িনী এবং তিনি তাদের শিশুপুত্রকে নিয়ে মুর্শিদাবাদ ত্যাগ করে ময়মনসিংহে আশ্রয় নেন। তারপর তার অজ্ঞাতবাস পর্বের নানা কিংবদন্তি ছড়িয়ে আছে বাংলায়। অনেক ইতিহাসবিদ অনুমান করেন, তার জন্মস্থান হুগলী জেলার গুপ্তিপাড়া, সেখানে বৃন্দাবনচন্দ্র মন্দিরে তিনি আত্মগোপন করে থাকেন যুদ্ধোত্তর পর্বে। নদীয়ার কালীগঞ্জের নিকটবর্তী জুড়ানপুর শাক্তপীঠেও তার অবস্থানের কাহিনি প্রচলিত আছে কিংবদন্তি মোতাবেক।

জাফর খান

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর