শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ান

মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ান

দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে পানিবন্দী হয়ে অসহায় জীবনযাপন করছে লাখ লাখ মানুষ। এ অবস্থায় সমাজের বিত্তবানদের বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের প্রতি সাহায্যের  হাত বাড়ানো বিবেকের দাবি এবং ইসলামের শিক্ষা। টাকা-পয়সা, খাদ্য, বস্ত্র, পানি, ওষুধসহ যার যা কিছু আছে, তা নিয়েই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়ানোর প্রতিদান সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা নিজেদের ধনসম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের দানের দৃষ্টান্ত হলো যেমন একটি শস্যবীজ বপন করা হলো এবং তা থেকে সাতটি শীষ উৎপন্ন হলো আর প্রতিটি শীষে রয়েছে ১০০টি শস্যকণা। এমনিভাবে আল্লাহ যাকে চান তাকে প্রাচুর্য দান করেন। তিনি প্রাচুর্যময়, জ্ঞানময়।’ সূরা বাকারাহ, আয়াত ২৬১।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করবে, আল্লাহ ততক্ষণ তাকে সাহায্য করতে থাকবেন।’ মুসলিম। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ বলেন, ‘বান্দা যেভাবে ভাইয়ের বিপদে সাহায্যকারী হয়েছে, আল্লাহও তার বিপদে দুনিয়া-আখেরাতে উত্তম সাহায্যকারী হবেন।’

সাধ্যমতো মানবসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানবসেবায় তার ভাইয়ের সঙ্গে চলে, ওই কাজ না করা পর্যন্ত আল্লাহ ৭৫ হাজার ফেরেশতা দিয়ে তাকে ছায়া দান করেন। তারা তার জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে। তার প্রতি কদমে একটি গুনাহ মাফ হয় ও একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।’ আত তারগিব।

বন্যাদুর্গত এলাকায় পানিবাহিত নানা ধরনের রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের অভাবে তারা ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে না। তাই বানভাসি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ তৎপরতা, শুকনা খাদ্যসামগ্রী প্রদান, আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত জরুরি। হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, ‘তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া কর। আকাশের মালিক আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ মুসতাদরাক।

হজরত উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’ বুখারি, মুসলিম। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের সেবা ও উপকারের জন্য আল্লাহতায়ালা কিছু নিবেদিতপ্রাণ সৃষ্টি করেছেন। মানুষ বিপদে পড়লে তাদের শরণাপন্ন হয়। এসব রহমদিল ব্যক্তি আল্লাহর শাস্তি থেকে নিরাপদ থাকবে।’ আত-তারগিব।

যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় বিপদগ্রস্ত ও দুস্থ মানবতার কল্যাণে দান-খয়রাত, জাকাত-সদকা, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসে না; সমাজের অসহায় বিপন্ন, বন্যাদুর্গত নিঃস্ব অর্ধাহারী-অনাহারী নিরন্ন গরিব মানুষের অভাব দূর, ক্ষুধা নিবারণ ও দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টা করে না; ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে অংশ নেয় নাÑ সে কখনই আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবিবের প্রিয়ভাজন হতে পারে না। এ সম্পর্কে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করেন না। বুখারি, মুসলিম। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া করে না, সে আল্লাহর দয়া পায় না।’ বুখারি।

তাই আসুন, আমরা মানুষকে অসহায় বিপদগ্রস্ত দেখে পাশ কেটে চলে যাব না। তার দিকে এগিয়ে যাব। মানুষকে বিপন্ন রেখে তাদের থেকে মুখ ফেরানোর পরিণাম খুবই ভয়াবহ। হজরত লোকমান তাঁর ছেলেকে উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘প্রিয় সন্তান! তুমি মানুষকে দেখে অহংকার কিংবা তাচ্ছিল্যভরে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না।’ হায়! আজ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা আমরা ভুলে যাচ্ছি। তাই তো তরুণ-যুবকরা দুস্থদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে না। আগে বন্যার আভাস পাওয়ামাত্রই ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে যেত আর এবার বন্যা চরমে পৌঁছার পরও ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা খুব একটা চোখে পড়ছে না।

হে আল্লাহ! বানভাসি মানুষের কষ্ট আপনি দূর করে দিন। তাদের দুঃখে আমাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করার তাওফিক দিন।

লেখক : খতিব, মণিপুর বাইতুর রওশন (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর