বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

দায়িত্ব পালনের স্বাধীনতা নেই বলে যত সমস্যা

মইনুল হোসেন

দায়িত্ব পালনের স্বাধীনতা নেই বলে যত সমস্যা

দেশটি আমাদের সবার হলেও দেশের ভালো-মন্দের ব্যাপারে অন্য কারও মতামত বর্তমান সরকারের কাছে যে মূল্যহীন তা বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও পর্যবেক্ষকরা ভালো করে জানেন ও বোঝেন। কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শোনানোর জন্যও সরকারে কেউ নেই। সরকার নিজেদের এবং দলীয় লোকদের স্বার্থরক্ষা নিয়ে ব্যস্ত।

কিন্তু এই অসহিষ্ণুতার অর্থ তো এমন হতে পারে না যে, আইনের চোখে যে পলাতক নয় বা যার বিরুদ্ধে দেশ থেকে যাওয়া-আসার ব্যাপারে কোনো আইনি বাধা-নিষেধ নেই এমন লোককেও বিদেশে যাওয়া-আসা করতে হলে ইমিগ্রেশন বিভাগে বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাদের পাসপোর্টের কোনো ব্যবহারিক মূল্য থাকবে না। আইনগত কোনো বাধার কথাও কর্মকর্তাদের উল্লেখ করতে হবে না।

শাসনতন্ত্রের ৩৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : ‘... নিষ্ঠুর অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দ- দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না।’ ৩৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : ‘জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা নিষেধ সাপেক্ষে ... বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’

সরকারের নেকনজরে নেই এমন অনেককেই সুপ্রিম কোর্ট থেকে আদেশ এনে এবং সেই আদেশ দেখিয়ে তাদের বিদেশে যাওয়া-আসা করতে হবে। ইমিগ্রেশন বিভাগের নিজস্ব কোনো আইনগত বক্তব্য না থাকলেও বিষয়টি নাগরিকদের জন্য অবৈধ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক হয়রানিভিন্ন কিছু নয়। বহির্গমন বিভাগের কর্মকর্তারা অদৃশ্য ‘বিশেষ কর্তৃপক্ষের’ কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও অপরাধী না হয়েও তাদের অপরাধীর মতো অপেক্ষা করতে হয়।

মোট কথা, আইন-কানুন মেনে দায়িত্ব পালনের স্বাধীনতা নেই বলে ক্ষমতার বাড়াবাড়ি প্রতিটি ক্ষেত্রে হচ্ছে। সবাইকে ভয়ভীতির মাধ্যমে অনুগত রাখা হয়েছে। এখন অরাজক পরিস্থিতির বিপদ সরকারের জন্যও আসছে।

বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতিদের কাছেও বোধগম্য নয়, কেন তাদের নির্দেশ লাগবে বিদেশে যাওয়া বা আসার জন্য। এজন্যই বাংলাদেশকে মগের মুল্লুুক বলা হতো।  কেউ রিট আবেদন করলে সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেবল সুপ্রিম কোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই মর্মে কারণ জানতে চাইতে পারে যে, কেন রিট আবেদনকারীকে দেশের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রথম -বার তাকে যেতে দেওয়া হবে না। এরূপ কারণ দেখিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট ডিভিশন থেকে উক্তরূপ নির্দেশ পাওয়া যেতে পারে। তবু তার টিকিট কাজে লাগল না। বিদেশের অন্যান্য ব্যবস্থাও পন্ড হলো।

কারণ দর্শানোর নোটিসের পরই কেবল সুপ্রিম কোর্ট আলোচ্য বিদেশ যাওয়া-আসাসংক্রান্ত অস্থায়ী নির্দেশনা দিতে পারে। অথচ এ রকম কারণ দর্শানোর একাধিক রুলের কোনো জবাব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুপ্রিম কোর্ট আজ পর্যন্ত পায়নি। অর্থাৎ কারণ দেখানোর মতো কোনো কিছু নেই। নিশ্চয়ই উপর থেকে রাজনৈতিক কোনো নির্দেশ আছে যা প্রকাশ করার মতো নয়। এভাবে হয়রানি করে হয়তো দেখানো হচ্ছে যে এ দেশে সরকারের বাইরে কারও মানমর্যাদা তাদের কাছে কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। কিন্তু প্রতিটি নাগরিকের অধিকার তো শাসনতন্ত্র-প্রদত্ত। শাসনতন্ত্র তো মর্যাদা পাওয়ার অধিকার রাখে। আমরা ভোটাধিকার হারিয়েছি। জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহি নেই। আইনের শাসনের সুরক্ষা নেই। ব্যক্তির শাসনতান্ত্রিক অধিকারগুলোও অস্বীকৃত হয়েই চলেছে।

জীবনে বাঁচার অধিকারই বা কতটা আছে জানি না। বন্যায় ও ডেঙ্গু রোগে প্রতিদিন বহু লোককে অসহায়ভাবে জীবন হারাতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখন বলছে ডেঙ্গু রোগের ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছে। যাদের সতর্ক থাকার কথা তারা কেন ব্যর্থ হয়েছে তাও তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জানার বিষয় ছিল। হাই কোর্ট ডিভিশনের এতদসংক্রান্ত মামলা থেকে জানা যাচ্ছে, ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধের জন্য মশা নিধনের ওষুধও নেই। আসল কথা হলো, কারও কোনো জবাবদিহি নেই, দায়িত্ব পালন নিয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে না।

কোনো এক ভিআইপির জন্য মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটে তিন ঘণ্টা দেরিতে ফেরি ছাড়তে হলো। মুমূর্ষু স্কুলছাত্রটিকে বাঁচানোর জন্য কর্তৃপক্ষের কেউ দয়ামায়া দেখাননি। আত্মীয়স্বজনের বিশেষ অনুরোধ কিংবা কান্নাকাটিতেও কোনো কাজ হয়নি। ডিসি সাহেবকে অমান্য করা যাবে না। ছাত্রটির বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে। এখন অনেক কমিটি হবে। পুলিশি মামলাও হবে। নতুন করে অনেককে হয়রানিও করা হবে। কিন্তু ভিআইপিদের দাপট কমবে না। সরকার তো ভিআইপি আর ভিভিআইপিদেরই।  ছেলেটির মুমূর্ষু অবস্থার কথা জানা না থাকলেও তিন ঘণ্টা ফেরি ছাড়তে দেরি হলে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে কত দুর্ভোগ পোহাতে হয় তা নিয়েও কারও কোনো উদ্বেগ ছিল না। দেশ শাসন তো এভাবেই চলে আসছে।

কোনো একজন ভিআইপিকে দোষ দিয়ে লাভ হবে না।  ভিআইপি-ব্যবস্থা হলো ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা দেখানোর ব্যবস্থা। অন্যান্য দেশে ভিআইপিদের যাওয়া-আসা টের পাওয়া যায় না। মানুষের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি তো দূরে থাকুক। জাপানে কয়েক বছর আগে এক মন্ত্রীর জন্য ট্রেন ছাড়তে সামান্য বিলম্ব হয়। আমার যত দূর মনে পড়ে সেজন্য ওই মন্ত্রীকে বিদায় নিতে হয়েছিল জনমতের চাপে। আমাদের দেশে ভিআইপি-ব্যবস্থা ক্ষমতা প্রদর্শনের এক চমৎকার ব্যবস্থা। মানুষের জন্য অসুবিধা করতে না পারলে তিনি কীসের ভিআইপি! একজন যুগ্মসচিবও বিরাট ভিআইপি! তার সুবিধার জন্য দীর্ঘ তিন ঘণ্টা ফেরি ছাড়া সম্ভব হয়নি। অবসান ঘটাতে হবে ভিআইপিদের দাম্ভিকতার। তারা যে জনগণের সেবক সে কথা তাদের স্মরণে রাখতে হচ্ছে না।

ফেরিঘাটের কর্মচারীদের কাছে কর্তাব্যক্তিদের নির্দেশই আইন। নিজেদের দায়িত্বে কাজ করার সাহস তাদের জন্য রাখা হয়নি। সমগ্র জাতিই যেন সাহস হারিয়ে ফেলেছে।

সম্প্রতি বরগুনার মিন্নির স্বামীর হত্যাকান্ডটি ঘটে প্রকাশ্যে, জনসমক্ষে। ভিডিওতে দেখা গেছে, মেয়েটি কত অসহায়ভাবে তার স্বামীকে রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। পরে খুনের সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে মিন্নিকেও মূল খুনিদের সঙ্গে এক করে দেখা হচ্ছে। তার কাছ থেকে আদায় করা স্বীকারোক্তি সে অস্বীকার করেছে। পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে তার ওপর নির্যাতনের কথাও সে বলেছে। আইনত মেয়ে হিসেবে মিন্নির জামিন দেওয়া যেত। আর যা-ই হোক মিন্নি সরাসরি খুনের সঙ্গে জড়িত নয়, তা তো পুলিশকেও মানতে হচ্ছে। তার পরও সে জামিন পাচ্ছে না।

এটা তো অস্বীকার করা যাবে না যে, সরকারবিরোধী কার্যক্রমে ভয় পাওয়ার মতো কোনো বিরোধী দলের অস্তিত্ব রাখা হয়নি। নিজেদের অযোগ্যতা, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ও ভুলভ্রান্তি ছাড়া ক্ষমতায় থাকার ব্যাপারে বর্তমান সরকারের কোনো প্রকার অস্বস্তিতে ভোগার কোনো কারণ নেই। নিজেদের ছায়াকেই সরকার ভয় করে চলছে।

সাফল্যের ব্যাপারে এত গুণগান করা হলেও সরকারের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ চারদিকে ষড়যন্ত্র দেখছেন। এমনকি তারা ডেঙ্গু রোগের ব্যাপারে সরকারের প্রস্তুতির চরম ব্যর্থতার মধ্যেও বিরোধী রাজনীতির ষড়যন্ত্র খুঁজছেন। ভয়াবহ বন্যার ক্ষয়ক্ষতির মোকাবিলায় সবার সহযোগিতা চেয়ে আবেদন জানাতে সরকারের অসুবিধা হচ্ছে না। কিন্তু জনগণের সরকার গঠনে যে জনগণের ভোটের প্রয়োজন সে কথা মনে রাখা হয়নি।

সরকার শুধু পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া কোনো সাফল্য দেখাতে পারছে না। পুলিশি ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য পুলিশের কর্মকর্তারাই যথেষ্ট। মন্ত্রীরা কথা বলবেন নিজেদের যোগ্যতা ও সাফল্য নিয়ে। চারদিকের সংকট থেকে উত্তরণে তাদের বিদ্যা-বুদ্ধি কতটা কাজে লাগছে, তা দেখানোর দায়িত্ব সরকারের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীর। সরকারের ব্যর্থতা সরকারেরই।

সরকার কীভাবে নিজেদের বুদ্ধি-বিবেচনামতে দেশব্যাপী নৈরাজ্যিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর আশা করছে সে সম্পর্কে জনগণ আশ্বস্ত হওয়ার মতো কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সরকার কার কর্তৃত্বে চলছে কিংবা কারও অবর্তমানে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা তা-ও বোঝা যাচ্ছে না। সমস্যা তো বেড়েই চলেছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই কিছু লোক ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। দেশব্যাপী অরাজকতা বেড়েই চলেছে।

আমরা এও বুঝতে পারছি না যে, বিমানবন্দরের বহির্গমন বিভাগে কিছু পরিচিত যাত্রীকে অযথা হয়রানি করে অথবা তাদের ব্যাপারে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকার কীভাবে লাভবান হচ্ছে এবং কীভাবে সংকট মোকাবিলার কাজটি সহজ করছে। মনে হচ্ছে কিছু লোক অন্যদের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করাতেই আনন্দ পায়।

ইমিগ্রেশন বিভাগের অযথা বাধা সৃষ্টির ব্যাপারটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং অন্য জায়গার দায়িত্বশীল বহির্গমন কর্মকর্তাদের জন্যও কম বিব্রতকর নয়। তাদের দক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে আস্থার সঙ্গে গ্রহণ করা হচ্ছে না। সবকিছু সঠিক থাকলেও অন্যত্র থেকে ‘কর্তৃপক্ষের’ অনুমোদন নিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও যথেষ্ট নয়। এটাও চাওয়া হয় হয়রানির মাত্রা বৃদ্ধির জন্য। আবার শুধু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ না থাকায় উড়োজাহাজ থেকে মালামাল নামিয়ে যাত্রীকে যেতে না দেওয়ার দৃষ্টান্তও রয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রয়োজনীয়তার কথা তো আইনে নেই। মাননীয় বিচারপতিদের বিশ্বাস করানো যায় না যে শাসনতন্ত্রের পরিষ্কার বিধান থাকা সত্ত্বেও অনেকেই এমন বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে আছেন।

সুপ্রিম কোর্টের আদেশ থাকলে শেষ পর্যন্ত বিমানযাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু ভোগান্তির কারণ ‘বিশেষ কর্তৃপক্ষের’ সন্তুষ্টিজনিত বিড়ম্বনা। সুপ্রিম কোর্টের  নির্দেশ থাকলে শেষ পর্যন্ত ক্লিয়ারেন্স আসে। দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য বা দেশে আসার জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথা তো কোনো আইনে নেই।

সরকার যারা পরিচালনা করছেন তারা উচ্চপদে আসীন হওয়ার কারণে নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। কিন্তু এর দ্বারা নিশ্চয় এটা বোঝায় না যে, সরকারের বাইরে যারা আছেন তারা কোনো সম্মানীয় ব্যক্তি নন। শুধু পদ-পদবির ভিত্তিতে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য সবকিছু সহজ হতে হবে। তারাই ভিআইপি। দেশ তাদের।

প্রতিটি নাগরিকের প্রতি সম্মানজনক ব্যবহার করার শাসনতান্ত্রিক নির্দেশ রয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর। প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদা বা dignity  রক্ষা করা শাসনতান্ত্রিক মৌলিক অধিকারের অংশ। কিন্তু বাস্তবে মনে হচ্ছে ভিআইপিদের জন্যই সব সুযোগ-সুবিধা। আমরা জনগণ কিছুই নই। সবাই অনুগ্রহের পাত্র। এ ধরনের চিন্তাভাবনা স্বাধীন দেশের প্রশাসনিক চিন্তাভাবনা হতে পারে না।

কারও বিরুদ্ধে মামলার গন্ধ থাকলে তো বিপদ থা -কবেই। ব্যক্তিগত মানহানির মামলা হলেও বুঝতে হবে ইমিগ্রেশনে সমস্যা সৃষ্টি করবেই। মনে হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্তিসংগত বিচার-বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। আমরা তো এ রকম ছিলাম না। আমাদের লোকেরা অনেক শিক্ষিত ও সচেতন ছিলেন। তার পরও সর্বত্র চলছে অশিক্ষা-কুশিক্ষা আর সংকীর্ণ মনমানসিকতার বাড়াবাড়ি। সুন্দর, সভ্য সমাজ গড়ার পথ এটা নয়। এ পথ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

সার্বিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন না এলে সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব ঘুচবে না। আমাদের সৎসাহসের মৃত্যু ঘটে চলেছে।

অপরাধীদের মতো ক্লিয়ারেন্স পেতে অপেক্ষায় থাকার জন্য বহির্গমন কর্মকর্তাদের দোষারোপ করা যাবে না। তারা সর্বোচ্চ সৌজন্যবোধের পরিচয় দেন। কিন্তু তাদের তো ক্লিয়ারেন্স ছাড়া কিছু করার নেই। তাদের হাত-পা বাঁধা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকারি কর্মকর্তাদের হাত-পা বেঁধে রাখায় নিজেদের দায়িত্ব নিজেরা সঠিকভাবে পালন করতে পারছেন না। আইন-কানুন না মেনে চলতে গিয়ে সরকার এখন অচল ও ব্যর্থতায় হাবুডুবু  খাচ্ছে।

দেশ ছেড়ে বিদেশ যাওয়ার সময় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের কিছু দেখার মতো থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু একজন নাগরিককে দেশে আসার ব্যাপারে সমস্যা সৃষ্টি করার কী কারণ থাকতে পারে, তা বোধগম্য নয়। তাহলে কি নাগরিক হিসেবে আমরা নিজ দেশেও আসতে পারব না? তাকে বিদেশে ফেরত পাঠানো হবে? কিন্তু তা তো সম্ভব হবে না। তবু সমস্যা সৃষ্টি করা হবে। কিছু কর্মকর্তার উদ্ভট মনমানসিকতার মধ্যে আমাদের বাস করতে হচ্ছে।

দেশটি যে জনগণের তা অস্বীকার করতে চাইলেই অস্বীকার করা যাবে না। মানমর্যাদা ও অধিকার নিয়েই স্বাধীনভাবে বসবাস করার সুযোগ সবাই মিলেই সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের আইনের শাসনের শৃঙ্খলায় আসতে হবে।

আইন-কানুন এমনকি শাসনতন্ত্র না মানার এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে দেশ শাসিত হচ্ছে বলেই সঠিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের প্রশ্ন উঠছে না। অন্যদের শত্রু হিসেবে দেখে দেশ শাসন করা যায় না। আইনের শাসন মেনে চললে সরকারের প্রতিটি ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের সচেতনতা বৃদ্ধি পেত। দেশে সুস্থ শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠত। সবাই আইনের সুরক্ষার নিশ্চয়তা পেত। জনগণও আইন মেনে চলার সুফল বুঝত। আইন-কানুনের নিশ্চয়তা না থাকায় অপরাধীরা মনে করে শেষ পর্যন্ত তাদের রক্ষা পেতে অসুবিধা হবে না। শুধু কিছু সময়ের ব্যাপার।

লেখক : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ।

সর্বশেষ খবর