বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

পবিত্র হজ এবং কোরবানির শিক্ষা

মুফতি ওলিউল্লাহ পাটোয়ারী

পবিত্র হজ এবং  কোরবানির শিক্ষা

হজ একটি কঠিন ইবাদত, যা সবার পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়। তাই শারীরিক ও অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম ও সামর্থ্যবানদের প্রতিই হজ ফরজ করা হয়েছে। আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর এ ঘরের হজের বিধান মানুষের ওপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার।’ সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৭। মুসলিম মিল্লাতের পিতা হজরত ইবরাহিম ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.)। কোরবানির ঘটনা চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য ১০, ১১, ১২ জিলহজ ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদ্যাপন করা হয়। একই সময়ে হজ পালন করা হয়। মুসলমানদের উৎসবসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। আরবি ‘ঈদ’ শব্দের অর্থ ফিরে আসা, বার বার আসা। এর আরেক অর্থ আনন্দ, খুশি ইত্যাদি। আর ‘আজহা’র শাব্দিক অর্থ রক্ত প্রবাহিত করা। এর আরেক অর্থ ত্যাগ-তিতিক্ষা। ঈদুল আজহাকে কোরবানির ঈদও বলা হয়। কোরবানি আরবি শব্দ। এর অর্থ নিকটবর্তী হওয়া, নৈকট্যলাভ করা। সব শব্দের একসঙ্গে অর্থ করলে দাঁড়ায় প্রাণপ্রিয় বস্তুকে আল্লাহর কাছে উৎসর্গ করার লক্ষ্যে রক্ত প্রবাহিত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্যলাভের প্রত্যাশায় যে দিবস বার বার আমাদের মাঝে খুশি ও আনন্দ দিতে ফিরে আসে তা-ই ঈদুল আজহা। অবিস্মরণীয় ঘটনাকে লক্ষ্য করে ঈদুল আজহা প্রতি বছর উদ্যাপিত হয়। তার সূত্রপাত ঘটেছিল ৩ হাজার ৮০০ বা প্রায় ৪ হাজার বছর আগে। ঈদুল আজহার মৌলিক শিক্ষা হলো তাকওয়া বা আল্লাহ-ভীতি বা আল্লাহ-প্রীতি। শুধু পশু কোরবানি নয়, বরং নিজের মধ্যে যত পশুত্ব, পাশবিকতা ও কুপ্রবৃত্তি আছে সেগুলো কতল করে এমন সংকল্প করা যে, প্রয়োজনে প্রাণাধিক প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করতে সদা প্রস্তুত থাকবে। সূরা হজের ৩৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘এ কোরবানির রক্ত ও গোশত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের মনের অবস্থা বা তাকওয়া।’ জিলহজের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে কোরবানি করা হয়। আল্লাহ রব্বুল আলামিন সব নবী-রসুলকে পরীক্ষা করেছেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর হজরত ইবরাহিম (আ.) সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর প্রাথমিক জীবনে কোনো সন্তান হচ্ছিল না। বর্ণনায় পাওয়া যায় হজরত ইবরাহিম ১৬৫ বছর বেঁচেছিলেন। তাঁর বয়স যখন ৮৫ তিনি আল্লাহর কাছে পুত্রের জন্য দোয়া করেন এবং আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন। ৮৭ বছর বয়সে আল্লাহ তাঁকে একটি পুত্রসন্তান দান করেন। হজরত হাজেরার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন ইসমাইল (আ.)। ইসমাইলের বয়স ১১ মতান্তরে ১৩ মতান্তরে ১৪ বছর হলে কোরবানির নির্দেশ দেওয়া হয়। একে তো দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সন্তানলাভ, তার ওপর কৈশোরে পরিণত হওয়া প্রাণাধিক পুত্রকে কোরবানির নির্দেশ নিঃসন্দেহে ইবরাহিম (আ.)-এর জন্য এটা ছিল বিরাট পরীক্ষা। ‘যখন পিতা-পুত্র আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম তাকে জবাই করার জন্য শায়িত করল, তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহিম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে। আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে জবাই করার জন্য এক জন্তু ফিদিয়া প্রদান করলাম। আর ভবিষ্যতের জন্য ইবরাহিমের সুন্নত স্মরণীয় করে রাখলাম।’ অর্থাৎ যে ফিদিয়া বা বিনিময়ে ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত সেই ফিদিয়ার কোরবানি চলবে। এভাবেই আত্মোৎসর্গের নিদর্শন -স্বরূপ কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানরা আল্লাহর নামে শুধু কোরবানি করবে। আল্লাহ আমাদের সব কাজ তাঁর জন্যই করার তাওফিক দিন।

 

লেখক : খতিব, বায়তুন নূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, দক্ষিণ পীরেরবাগ, অলি মার্কেট ঢাকা।

সর্বশেষ খবর