রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

কোরবানি করতে হবে আল্লাহর জন্য

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

কোরবানি করতে হবে আল্লাহর জন্য

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা কোরবানি দেন না তাদের সম্পর্কে আল্লাহর রসুল অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কোরবানি করল না সে ঈদগাহের কাছেও যেন না আসে।’ ইবনে মাজাহ।

লাখ লাখ টাকা খরচ করে আমরা কোরবানি করি। পশু জবাই করি। শুধু নিয়ত শুদ্ধ না হওয়ার কারণে অনেকের ব্যয়বহুল এই কোরবানি বিফলে যায়। আবার অল্প টাকা খরচ করেও কেউ কেউ শুদ্ধ নিয়তের কারণে কবুল কোরবানির সওয়াব পায়। আল্লাহর দরবারে তার আমলটি গ্রহণযোগ্য হয়। এজন্য কোরবানির পশু কেনার আগে নিজের নিয়ত শুদ্ধ করতে হবে। এরপর কোরবানি করতে হবে। কারণ, আমরা যেসব পশু কোরবানি করি সেগুলোর রক্ত-মাংস আল্লাহর কাছে পৌঁছে না। পৌঁছে শুধু অন্তরের নিয়ত। আল কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘এগুলোর (কোরবানির পশুর) মাংস ও রক্ত আল্লাহর ­কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে তোমাদের মনের তাকওয়া। তিনি তাদের তোমাদের জন্য এমনভাবে অনুগত করে দিয়েছেন যাতে তাঁর দেওয়া পথনির্দেশনার ভিত্তিতে তোমরা তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। আর হে নবী! সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দিয়ে দিন।’ সূরা হজ, আয়াত ৩৭। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, পশু জবাই করার সময় যেন আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয়। আল্লাহর নাম উচ্চারণ ছাড়া জবাই করলে সেই কোরবানি সহি হবে না। সেই পশুর মাংস খাওয়া যাবে না। আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানি নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেওয়া চতুষ্পদ জন্তু জবাই করার সময় আল্ল­াহর নাম উচ্চারণ করে।’ সূরা হজ, আয়াত ৩৪। মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘এবং কোরবানির পশুগুলোকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শন করেছি, এতে তোমাদের জন্য মঙ্গল রয়েছে। অতএব, তাদের ওপর আল্ল­াহর নাম উচ্চারণ কর যখন তারা কাতার বেঁধে সারি সারি দাঁড়ায়। তারপর যখন তারা ঠা-া হয় (অর্থাৎ জবাই করার পর প্রাণ বের হয়ে যায়) তখন তা নিজেরাও খাও এবং যেসব দরিদ্র লোক ভিক্ষা করে না এবং যারা ভিক্ষা করে তাদের খাওয়াও। এরূপে আমি পশুদের তোমাদের অধীন করেছি যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ সূরা হজ, আয়াত ৩৬। এ আয়াত দ্বারা বোঝা গেল, কোরবানির পশুর মাংস অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। যারা মাংস চাইতে আসবে তাদের যেমন দিতে হবে তেমনি যারা চাইতে আসবে না অথচ অভাবী তাদেরও দিতে হবে। আমি আপনি যেখানে থাকি তার আশপাশে এবং সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা শিক্ষিত তবে দরিদ্র। নিজের সম্মান রক্ষার জন্য বা লোকলজ্জার ভয়ে তারা মাংস চাইতে কারও বাসায় যায় না। কোথাও গিয়ে লাইনে দাঁড়ায় না। তাদেরও মাংস দিতে হবে। আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে। পশু কোরবানি করার জন্য যেসব লোককে আমরা পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে রাখি, তাদের মাংস দিয়ে পারিশ্রমিক দেওয়া যাবে না। আলাদাভাবে টাকা দিতে হবে। হজরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নিজের কোরবানির পশুর পাশে থাকতে এবং পশুর সব মাংস, চামড়া ও জিন বণ্টন করে দিতে বলেছেন এবং (কসাইকে) পারিশ্রমিক হিসেবে পশুর মাংস থেকে না দিতে আদেশ করেছেন। বুখারি। অর্থাৎ আলাদাভাবে পারিশ্রমিক দিতে বলেছেন।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

 

সর্বশেষ খবর