শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ

আমিনুল ইসলাম মিলন

ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ

ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ। ঘুরে দাঁড়াও ৫৭ হাজার বর্গমাইল। ঘুরে দাঁড়াও পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-ধলেশ্বরী। ঘুরে দাঁড়াও সুবর্ণচর, সোনাগাজী, কবিরহাটসহ সারা বাংলার ধর্ষিত জনপদ। এ মুহূর্তের বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে ঘুরে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই। ষড়যন্ত্র, গুজব, হত্যা, ধর্ষণ, সন্ত্রাসের এক ভীতিকর লীলাভূমিতে যেন পরিণত হয়েছে আমার স্বদেশ। এর কোনোটির সঙ্গেই বাস্তবের বাংলাদেশের মিল নেই। বাস্তবের বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি জনতার শ্রমে-ঘামে-উৎপাদনে মুখর কর্মচঞ্চল এক সৃষ্টিশীল বদ্বীপ। প্রবাসী শ্রমিকের কষ্টার্জিত অর্থে পুষ্ট এ দেশের অর্থনীতি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের এক রোল মডেল। খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় বাংলাদেশের সাফল্যকে বিশ্বের জন্য উদাহরণ হিসেবে প্রচার করছে। ধান, গম ও ভুট্টা উৎপাদনে বিশ্বের গড় উৎপাদন হারকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ। ৮৫ লাখ টন আলু উৎপাদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায়। গড়ে ১০ লাখ টন আম উৎপাদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্জন করেছে বিশ্বে নবম স্থান। কৃষিতে বিশ্বে গড় উৎপাদনশীলতা যেখানে ৩ টন, সেখানে বাংলাদেশের অর্জন ৪.১৫ টন। রপ্তানি খাতেও বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। ২০০৯-১০ অর্থবছরে যেখানে রপ্তানি আয় ছিল ১৬.২৩০ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬.৩৩ বিলিয়ন ডলারে- দ্বিগুণেরও বেশি। অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে শুধু মানুষের চুল ও উইগ রপ্তানি করে গত অর্থবছরে আয় হয় ১৯.৫৭ মিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির এক মহাসোপানে পৌঁছে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই বাংলাদেশের ওপর আজ ভর করেছে এক অশুভ শক্তি। ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও গুজব সৃষ্টি যার মূল অস্ত্র। এমনিতেই বন্যা ও ডেঙ্গুতে জনজীবন বিপর্যস্ত। তার উপরে মাথা কাটা-ছেলেধরা আতঙ্কে মানুষকে অস্থির করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত গুজব ছড়ানো হচ্ছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের চূড়ান্ত পর্বে শিশুর মাথা-রক্ত বলি দিতে হবে- এ গুজব ১৭ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে হৈচৈ। এরই ধারাবাহিকতায় সুনিপুণভাবে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়- ছেলেধরারা মানুষের শিশু চুরি করছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে দুটি অবুঝ শিশু সন্তানের জননী ‘রেণু’ নামক এক মহিলাকে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছে- একজনও এগিয়ে আসেনি ওই হতভাগিনীকে বাঁচাতে। বরং ব্যস্ত ছিল মোবাইল ফোনে ছবি তুলতে। অধঃপতনের কত গভীরে গেলে একটি জাতি এ রকম করতে পারে! গত ২৫ জুলাই রাজধানীর হাতিরঝিল থানার পশ্চিম হাজীপাড়ায় চোর সন্দেহে দেলোয়ার হোসেন নামে এক গার্মেন্টকর্র্মীকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। এ কোন বাংলাদেশে আমরা বাস করছি? আমাদের মানবতা কি একেবারেই হারিয়ে গেল? আমরা কি নিজ হাতে আমাদের দেশটাকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছি না? কারও কি কোনো দায়দায়িত্ব নেই? সব দায় কি কেবল সরকারের? এ জিজ্ঞাসা আজ সবার কাছে। যা ঘটছে তা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। গুজব সৃষ্টি-গুজব ছড়ানো-সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার প্রচার-ক্ষুব্ধ জনতার আইন হাতে নেওয়া-আইনশৃঙ্খলার অবনতি-পরিণতিতে সরকারের ব্যর্থতা দৃশ্যমান করা- এগুলো একই সুতোয় গ্রন্থিত ষড়যন্ত্রমালা। এর মূল খুঁজে বের করতে হবে। কঠোরভাবে নির্মূল করতে হবে সব ষড়যন্ত্র। এজন্য গোটা জাতিকে জেগে উঠতে হবে।

অন্যদিকে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা, শিশুধর্ষণ, সমকামিতা যেন মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়ছে। পাঁচ-ছয় বছরের শিশুও এ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। বিগত সংসদ নির্বাচনের রাতেই নোয়াখালীর সুবর্ণচরে যে কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটে তা শুধু ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সংঘটিত নির্মম-নিষ্ঠুর পাশবিকতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সুবর্ণচরের ঘটনায় শেষ পযর্ন্ত কী বিচার হবে জানি না। এত সাহস দুর্বৃত্তরা কোথায় পায়? কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রুহুল আমিনরা ধরাকে সরা জ্ঞান করে? আঘাত হানতে হবে সেখানেই। নইলে দু-চারটি ঘটনার হয়তো বিচার হবে-শাস্তি হবে- কিন্তু এ ধরনের অপকর্ম বন্ধ হবে না। বরগুনার ঘটনা তারই প্রমাণ। রাজনীতিতে সন্ত্রাস লালনের পথ চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-জঙ্গি তৎপরতা ও মাদক নিয়ন্ত্রণে আইনকে কঠোর ও নিরপেক্ষভাবে প্রয়োগ করতে হবে। যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বা প্রশাসন-কর্মকর্তা অথবা রাজনৈতিক নেতা এর সঙ্গে যুক্ত থাকেন তাহলে তাদেরও মূলোৎপাটন করতে হবে- সে যে-ই হোক এমনকি যদি কোনো সংসদ সদস্যও হন। ধারাবাহিকভাবে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য এটি একটি অগ্নিপরীক্ষা। দলীয় দুর্বলতা আগে না আইনের নিরপেক্ষ ও কঠোর প্রয়োগ আগে তা সুনির্দিষ্ট করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপস মানে নিজেকে নিশ্চিহ্ন করা। সোনাগাজীর নুসরাতের ধর্ষক ও হত্যাকারীর জন্য ১৬ জন আইনজীবী আর বরগুনার মিন্নির জন্য একজন আইনজীবীও নেই- এর পেছনে কোন রহস্য, তা জানতে হবে।

একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে দেখলাম, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গত ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) শুধু নোয়াখালী জেলায় ধর্ষণ এবং ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা মামলা হয়েছে ৬৩টি। এর বাইরে যৌন নিপীড়নের মামলা হয়েছে ৪৯টি। ধর্ষণের অন্তত তিনটি ঘটনায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল। যার দুটি ঘটে সুবর্ণচর উপজেলা ও কবিরহাটে। এ ছাড়া ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সুবর্ণচরের পূর্ববাটা ইউনিয়নে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী (১৩), ১০ মার্চ কোম্পানীগঞ্জের চরকাঁকড়া ইউনিয়নের নবম শ্রেণির ছাত্রী (১৬), ২৭ মার্চ সেনবাগে একটি কমিউনিটি সেন্টারে এক কিশোরী, ৬ এপ্রিল সেনবাগে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী (৯), ১৭ এপ্রিল সেনবাগে স্কুলছাত্রী (১০), ১৮ এপ্রিল একই উপজেলায় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী (১৪), ২৭ এপ্রিল নোয়াখালী সদর উপজেলায় এক মাদ্রাসাছাত্রী (১৪), সুবর্ণচরে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী (১৪) ধর্ষণের শিকার হয়। বেগমগঞ্জে ৩০ মে সাত বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। গত ১ মার্চ রাতে সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুুর ইউনিয়নে এক গৃহবধূকে ঘরে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টা করে স্থানীয় এক ব্যক্তি। ওই রাতেই গ্রাম্য সালিশে অভিযুক্ত আলাউদ্দিনকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পরদিন ওই গৃহবধূ বিষপানে আত্মহত্যা করেন। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সারা দেশে ৬৩০ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন। অন্যদিকে মহিলা অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ছয় মাসে ২ হাজার ৮৩ জন নারী ও শিশু নির্যাতিত হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩১ জন। যার ১০% নোয়াখালী জেলার। নোয়াখালী জেলার একজন সন্তান হিসেবে এটি আমার জন্য ব্যক্তিগতভাবে চরম দুঃখ, ক্ষোভ ও লজ্জার। কোথায় নোয়াখালীর সুশীলসমাজ? সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী-সাংস্কৃতিক কর্মীরা? কোনো জোরালো প্রতিবাদ-প্রতিরোধ তো দৃশ্যমান দেখিনি। কিন্তু আমার প্রিয় নোয়াখালী তো এ রকম ছিল না। বিশেষ করে নোয়াখালী ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ শহর। এক রাস্তার শহর বলে প্রত্যেকেই ছিল প্রত্যেকের মুখ-চেনা-পরিচিত। রাজনৈতিক বিভক্তি ছিল কিন্তু সহাবস্থান ছিল চমৎকার। সামাজিক নিরাপত্তা ছিল উঁচুমানের। চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস ছিল না বললেই হয়। কিন্তু আজ সেই নোয়াখালীর প্রকৃত চিত্র কী- উপর্যুক্ত পরিসংখ্যান তার প্রমাণ বহন করে।

মাত্র ছয় মাসে ৬৩টি গণধর্ষণের ঘটনার পর নোয়াখালীতে রেড অ্যালার্ট জারি করা উচিত ছিল। চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে ছোট-বড় সব অপরাধী গ্রেফতার করা উচিত ছিল। দ্রুত বিচার আইনে তাদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এর কোনোটি করা হয়েছে বলে আমি জানি না। নারী ও শিশুর জীবন-সম্ভ্রম-ইজ্জত-আব্রু রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নোয়াখালীতে গত ছয় মাসে রাষ্ট্র আংশিক হলেও সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ- এ কথা বললে কি খুব অন্যায় বলা হবে?

এ অবস্থা উত্তরণের জন্য পুলিশ ও সিভিল প্রসাশনকে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। আবার স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলে আমাদের দেশের প্রশাসন যে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অনেক ক্ষেত্রে বুড়ো আঙ্গুল দেখায়, সেই অভিজ্ঞতাও আমাদের আছে। সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। স্বাধীনতা-পরবর্তী নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানায় ওসি মোল্লার কথা আজও আমরা ভুলিনি। কিংবা ভুলিনি নোয়াখালীর একসময়ের এডিসি সানোয়ার আলীর কথা। সেই ’৭৪ সালে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের নামে গণবাহিনীর সদস্যদের চেয়ে মুজিববাদী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও নির্যাতনে ওসি মোল্লার উৎসাহ ও ভূমিকা আজও মনে পড়ে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় পুলিশ প্রশাসন, সিভিল প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সমন্বয় করে যৌথভাবে কাজ করতে হয়। এ যূথবদ্ধ প্রয়াস যদি সৎ ও ইতিবাচক হয় তাহলে তা রাষ্ট্রের জন্য সোনায় সোহাগা। আর যদি এটি অসৎ, দুর্নীতিপরায়ণ ও পক্ষপাতদুষ্ট হয় তাহলে রাষ্ট্র-জনগণের সমূহ ক্ষতি। এটি সব গণতান্ত্রিক দেশের জন্যই প্রযোজ্য।

বর্তমান সরকার দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক, সরকারি জমি দখল প্রভৃতির বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি তৎপর। বিগত তিন-চার মাসে পুলিশবাহিনীতে কনস্টেবল পদে ৯ হাজার ৬৮০ জনের নিয়োগ শতভাগ সততার সঙ্গে হয়েছে বলে পুলিশ বিভাগের প্রশংসা করতে হয়। জনগণ চায় সব সরকারি নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধ হোক। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে বালিশ কেনা ও ওঠানো-নামানোয় পাহাড়সম দুর্নীতির বিপক্ষে পুলিশবাহিনীতে এবারের কনস্টেবল নিয়োগ হিমালয়সম সততার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। জাতির প্রত্যাশা- রাষ্ট্রের প্রতিটি নিয়োগে এ রকম নজির গড়ে উঠুক। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নদী দখল ও খাল দখল অবমুক্ত করার সরকারি উদ্যোগ জনগণের বিপুল প্রশংসা অর্জন করছে। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেছে। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, কর্ণফুলীর দুই ধারে প্রায় প্রতিদিনই উচ্ছেদ অভিযান চলছে। গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে অবৈধ দখলদারদের দালান-কোঠাসহ সব স্থাপনা। এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না শেষ দখলদারটি উচ্ছেদ হয়। জনগণ সরকারের কঠোর মনোভাবকে সাধুবাদ জানায়। জনগণ চায় রাজা কঠোর হোক- কঠোর থেকে কঠোরতর। অপরাধীরা শাস্তি পাক-দ- পাক- জনগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলুক। আজ থেকে ২ হাজার ৫০০ বছর আগে কৌটিল্য বলেছেন, যেখান দ- নেই সেখানে রাজ্য নেই। বাংলাদেশের জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে একটি রাজ্যে/রাষ্ট্রে বাস করতে চায়। আর এজন্য জনগণেরও দায়দায়িত্ব আছে। সরকার একা কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই সরকার। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার আসে সরকার যায়। কিন্তু রাষ্ট্র-জনগণ-মাটি-মানুষ একই থাকে। তাই বর্তমানে সৃষ্ট অস্থির সময়ে জনগণকেও জেগে উঠতে হবে। রুখে দাঁড়াতে হবে সব অপশক্তির বিরুদ্ধে। আমরা জেগে থাকব-আমাদের মা-বোনেরা সন্তান বুকে নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাবে- এই হোক আজকের অঙ্গীকার। আর কোনো শিশু যেন ছেলেধরার কবলে না পড়ে, আর যেন কোনো ‘তুবা’ মা-হারা না হয়। আর যেন গণপিটুনিতে কোনো রেণুকে প্রাণ দিতে না হয়- সেদিকে এ সমাজ-রাষ্ট্রকে নজর দিতে হবে। তবে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনের উদ্যোগে জনসচেতনতা সৃষ্টির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা এ উদ্যোগের সার্বিক সাফল্য কামনা করি।

আগামী বছর জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী। অন্যদিকে ২০২২ সালে বাংলাদেশ উদ্যাপন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। তত দিনে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে, অবকাঠামো উন্নয়নে-যোগাযোগব্যবস্থায়-দারিদ্র্য বিমোচনে-অর্থনীতিতে-কৃষিতে- সর্বোপরি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে। কিন্তু বাংলাদেশের এ দ্রুতগতির অগ্রযাত্রা, যা আন্তর্জাতিক পরিম-লে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত- তা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক একটি মহলের মনঃপূত হচ্ছে না। তাই তারা ষড়যন্ত্রে নামবে, এটাই স্বাভাবিক। এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় এ মুহূর্তে প্রয়োজন জাতির ইস্পাতকঠিন ঐক্য। আসুন দেশ মাতৃকার এ কঠিন সময়ে আমরা সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হই। রুখে দিই সব ষড়যন্ত্র-অশুভ শক্তির সব ঘৃণ্য অপচেষ্টা। গ্রামে-গঞ্জে সংগঠিত হই, অহিংস আন্দোলন গড়ে তুলি। সন্ত্রাস-দুর্নীতি, চাঁদাবাজ, মাদক, জঙ্গি তৎপরতা, সাম্প্রদায়িকতা ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হই-প্রতিরোধ গড়ে তুলি। সন্দেহভাজন সব তৎপরতা তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনকে অবহিত করি। ঘুরে দাঁড়াই সব অপশক্তির বিরুদ্ধে। আমাদের সঙ্গে সরকার আছে, আইন আছে। জনগণকে সচেতন করে এগিয়ে যাওয়াই এখন সময়ের দাবি। একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণের যে স্বপ্ন জাতির জনক আমাদের দেখিয়েছেন গত ১০ বছরে জাতির জনকের কন্যার হাত ধরে যে স্বপ্ন বৃক্ষ পল্লবিত-বিকশিত হয়েছে, সে স্বপ্ন আমরা ভেঙে যেতে দেব না- এটাই হোক আজকের অঙ্গীকার। তাই আসুন, ঘুরে দাঁড়াই দৃশ্য-অদৃশ্য সব অপশক্তির বিরুদ্ধে। ঘুরে দাঁড়াই সব নৈরাজ্য-ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে। এখনই সময় ঘুরে দাঁড়ানোর। ঘুরে দাঁড়াও সুবর্ণচর-সোনাগাজী-কবিরহাট-ঘুরে দাঁড়াও নোয়াখালী-বরগুনা। ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ। নুরুলদীনের মতো হাঁক দিয়ে যাই- ‘জাগো বাহে-কোন্ঠে সবায়’।

                লেখক : সাবেক প্রধান তথ্য কর্মকর্তা।

 

 

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর