শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রিয় নবীর সুন্নাহতেই রয়েছে কল্যাণ ও মুক্তি

মাওলানা মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

প্রিয় নবীর সুন্নাহতেই রয়েছে কল্যাণ ও মুক্তি

‘সুন্নাহ’ মুসলিম সমাজে একটি সুপরিচিত পরিভাষা। সুন্নাহর আভিধানিক অর্থ সম্পর্কে মিসবাহুল মুনীর গ্রন্থকার বলেন, সুন্নাহ শব্দটির আরবি আভিধানিক অর্থ পথ ও পদ্ধতি, আদর্শ ও রীতিনীতি। আল মুফরাদাত গ্রন্থের প্রণেতা বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত- এ কথার অর্থ তাঁর আদর্শ যা তিনি পালন করতেন। মহান আল্লাহর সুন্নাত- এ কথার অর্থ তাঁর সুমহান পথ ও পদ্ধতি, তাঁর হিকমত ও তাঁর আনুগত্যের নিয়মকানুন ও পদ্ধতি। ‘সুন্নাহ’ এ অর্থেই আল কোরআন ও হাদিসে বার বার ব্যবহৃত হয়েছে।

ওলামায়ে কিরাম বলেন, ইসলামী শরিয়তে যখন সাধারণভাবে সুন্নাহ শব্দটি ব্যবহার করা হবে, তখন এর অর্থ দাঁড়াবে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ, নিষেধ, কথা, কাজ, সম্মতি ইত্যাদি। সুন্নাহ বিশ্লেষক আলেমরা বলেন, বিশেষ করে যেসব বিষয় কোরআনে বর্ণিত নয়, কেবল রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত ও নির্দেশিত, শরিয়তের সেসব বিষয়কে সুন্নাহ বলে। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাত লাভ করতে হলে জীবনের সব ক্ষেত্রে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর অনুসরণ করতে হবে। তাঁর আদর্শের পরিপন্থী যাবতীয় আইন-বিধি, নীতি-আদর্শ, পথ-মত, জাহেলিয়া ও নাফসানিয়াত পরিহার করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল কোরআন ও হাদিসে অনেক শক্তপোক্ত দলিল বিদ্যমান রয়েছে।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে রসুল! আপনি বলুন যদি তোমরা আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াময়।’ সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৩১। তিনি আরও বলেন, ‘রসুল তোমাদের যা আদেশ দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে তোমরা বিরত থাকো।’ সূরা হাশর, আয়াত ৭। ‘যে রসুলের আনুগত্য করল, সে যেন আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হলো, আমি আপনাকে তাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে প্রেরণ করিনি।’ সূরা নিসা, আয়াত ৮০। ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ সূরা আহজাব, আয়াত ২১।

এমনিভাবে আল কোরআনে সুন্নাহর অনুকরণ-অনুসরণের জন্য অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোরআন এ কথাও বলেছে, কেউ যদি সুন্নাহর অনুসরণ না করে, তবে তার ইমান যথাযথ হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমার পালনকর্তার কসম! সে লোক ইমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে (রসুল) ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনোরকম সংকীর্ণতা করবে না এবং তা সন্তুষ্টিচিত্তে মেনে নেবে।’ সূরা নিসা, আয়াত ৬৫। তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসুল কোনো কাজের আদেশ করলে কোনো ইমানদার পুরুষ ও ইমানদার নারীর সে বিষয়ে অন্য কোনো এখতিয়ার থাকে না। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।’ সূরা আহজাব, আয়াত ৩৬।

ইহকালীন ও পরকালীন নাজাত, কল্যাণ ও জান্নাতের পথ শুধু কোরআন ও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং খোলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবায়ে কিরামের আদর্শেও রয়েছে বিশ্বাসীদের জন্য পথনির্দেশিকা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ সেভাবেই অনুসরণ করতে হবে যেভাবে সাহাবায়ে কিরাম বিশেষ করে মুহাজির ও আনসাররা অনুসরণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুহাজির ও আনসাররা অগ্রগামী দল। আর যারা যথাযথভাবে তাদের অনুসারী, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে এমন জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত। তারা সেখানে অনন্তকাল থাকবে। এটাই হলো মহান সফলতা।’ সূরা তওবা, আয়াত ১০০। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ আঁকড়ে থাকার ব্যাপারে তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমি তোমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দুটি জিনিস আঁকড়ে থাকবে, ততক্ষণ পথভ্রষ্ট হবে না। সে দুটি হলো আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ।’ মুয়াত্তা ইমাম মালিক।

খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ সম্পর্কে হজরত ইরবাজ বিন সারিয়াহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে বসলেন। তিনি আমাদের এমন মর্মস্পর্শী ভাষায় উপদেশ দিলেন যাতে চক্ষু সজল হয়ে গেল এবং হৃদয় ভীত-বিহ্বল হয়ে পড়ল। এমন সময় একজন বলে উঠল, হে আল্লাহর রসুল! মনে হচ্ছে এটা যেন আপনার বিদায়ী ভাষণ। অতএব আপনি আমাদের আরও বেশি উপদেশ দিন। তখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি তোমাদের আল্লাহভীতির উপদেশ দিচ্ছি। আমি তোমাদের আমিরের আদেশ শুনতে ও মান্য করতে উপদেশ দিচ্ছি যদি তিনি একজন হাবশি গোলামও হন। কেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা অতিসত্বর বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাহকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহকেই আঁকড়ে ধরবে। তাকে কঠিনভাবে ধরবে এবং মাড়ির দাঁতগুলো দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে।’ মুসলিম, আবু দাউদ।

লেখক : এমফিল গবেষক মুফাসসিরে কোরআন, বেতার ও টিভির ইসলামবিষয়ক উপস্থাপক।

 

সর্বশেষ খবর