সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

মুফতি মাও. আবদুস সোবহান বিক্রমপুরী

তাহাজ্জুদ নামাজ হলো সমস্ত আম্বিয়ার সুন্নাত। আল্লাহর মাহবুব বান্দাগণের অভ্যাস। আর আল্লাহর সঙ্গে বান্দার গভীর সম্পর্ক স্থাপন তথা নৈকট্য ও সন্তোষ অর্জনের অন্যতম পন্থা। তাহাজ্জুদের ফজিলত প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ কায়েম করুন। এটা আপনার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন মাকামে মাহমুদ তথা প্রশংসিত স্থানে।’ (সূরা বাণী ইসরাইল, আয়াত : ৭৯।) তিনি আরও বলেন, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে আকাক্সক্ষা ও আশঙ্কার সঙ্গে তাদের প্রতিপালককে ডাকে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে তারা দান করে।’ (সূরা সেজদা, আয়াত : ১৬)

তাহাজ্জুদ নামাজ নফসের রিয়াজাত ও তরবিয়াতের এক বিশেষ মাধ্যম। কারণ প্রভুর প্রেমে গভীর রাতে সুখশয্যা ত্যাগ করেই আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হতে হয়। এ নামাজ মন ও চরিত্রকে নির্মল করে, পবিত্র করে এবং সত্যপথে অবিচল রাখে। পবিত্র কোরআনের সূরা মুজাম্মিলে এর উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই রাতে ঘুম থেকে ওঠা নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কোরআন পাঠ বা জিকির করা খুবই কার্যকর।’ (সূরা মুজাম্মিল, আয়াত : ৬) অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘আর আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সেজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।’ (সূরা ফোরকান, আয়াত : ৬৪)

প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র হাদিস শরিফেও তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য উল্লে­খ করা হয়েছে। মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার সুনানে আহমদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি। ‘আফজালুস সালাতি বাদাল মাফরুদাতি সালাতুল লাইলি’। অর্থাৎ ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নামাজ হলো ‘তাহাজ্জুদের নামাজ।’ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্ল­াহ প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন। যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে তখন তিনি বলতে থাকেন কে আছ যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছ যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দান করব। কে আছ যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

শরহে সুন্নাহর বরাত দিয়ে মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার বর্ণনা করেন, হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ খুশি হন। এক. যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের জন্য ওঠেন এবং নামাজ পড়েন। দুই. যারা নামাজের জন্য সারিবদ্ধভাবে কাতারে দাঁড়ান। তিন. মুজাহিদ যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান।’ অনুরূপ অন্য আরেকটি হাদিস রয়েছে, হজরত জাবির (রা.) বলেন, আমি রসুলুল্ল­াহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘রাতের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত আছে যদি কোনো মুসলমান তা লাভ করে এবং আল্লাহর কাছে ইহ ও পরকালের কোনো কল্যাণ চায় আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে তা দান করবেন। (মুসলিম)

লেখক : খতিব, উঁচাবাড়ী বাইতুস সুজুদ জামে মসজিদ,

পোস্তগোলা, ঢাকা। 

 

সর্বশেষ খবর