মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

বৃক্ষরোপণ

আফতাব চৌধুরী

প্রাণের প্রথম সঞ্চার মুহূর্তে অন্ধ ভূমিগর্ভ থেকে সূর্যের প্রথম আহ্বান যে শুনেছিল তার নাম বৃক্ষ অর্থাৎ গাছÑ অরণ্য তারই সৃষ্টি। বিশ্বের প্রাণ চেতনার প্রথম সূচনা এ অরণ্যের অভ্যন্তরে। রবীন্দ্রনাথ তার বৃক্ষবন্দনায় বলেছিলেন, ‘অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহ্বান, প্রাণের প্রথম জাগরণে, তুমি বৃক্ষ আদি প্রাণ।’ বিশ্বের তাবৎ জীব অরণ্যের স্নিগ্ধ ছায়ায় লালিত হচ্ছে ২০০ কোটি বছর ধরে। এ গাছই একদিন লালন-পালন করেছিল বাংলাদেশের সভ্যতা-সংস্কৃ-তিকে। জল, স্থল, অন্তরিক্ষে যে সংগীত প্রথম উচ্চারিত হয়েছিল তা এ বৃক্ষরাজির অবদান। অতীতে বনজ সম্পদ ছিল দেশ ও জাতির প্রাণসম্পদ। প্রাচীনকালে রাজারা পথের পাশে বৃক্ষরোপণ করতেন, আবাসস্থলে বা বাগানবাড়িতে নানা জাতীয় ফল ও ফুলের গাছ রোপণ করতেন এবং বন সংরক্ষণের প্রতি তাদের সতর্ক দৃষ্টি ছিল। গাছগুলো যেন পরিবারেরই একটি অঙ্গ ছিল। তারা ছিল আত্মার আত্মীয়। আজ আধুনিক সভ্যতা তার দানবমূর্তি নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তার কালো ধোঁয়ার বিষাক্ত নিঃশ্বাসে বিধাতার দেওয়া মুক্ত বাতাস আজ দূষিত, লাখো কোটি জীবাণুর আশ্রয়। পদ্মা, মেঘনা আর যমুনাকূলের উদার শ্যামলিমা আজ শিল্পকারখানার উদ্ধত উৎগারে আচ্ছন্ন। এ ধ্বংসলীলার মধ্যে বাংলাদেশের সহজ সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। নিষ্ঠুর বর্তমানের কাছে কবির দাবিÑ ‘দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য লও এ নগর, লও যত লৌহ, কাষ্ঠ ও প্রস্তর হে নব সভ্যতা।’ পরিবেশকে নির্মল রাখছে গাছগাছালি। অক্সিজেন দিয়ে এবং কার্বন-ডাইঅক্সাইড শোষণ করে নীলকণ্ঠ বনভূমি আমাদের সুস্থ দেহে বাঁচিয়ে রাখছে। শিকড়ের সাহায্যে মৃত্তিকাগুলোকে আঁকড়ে ধরে রেখে ভূমিক্ষয় রোধ করছে এবং বন্যার আশঙ্কা দূর করছে। বর্তমানে পৃথিবী জনারণ্যে পরিণত হয়েছে। এ জনতরঙ্গের বসতির ব্যবস্থা হিসেবে নির্দয়ভাবে বনভূমি ধ্বংসের এক মহাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। বন কেটে বসত ও নতুন নগর স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে। বণিকবুদ্ধির তাড়নায় দিশাহারা হয়ে মানুষ এখন বিভ্রান্ত। বৃহদাংশ লোকের বিচার-বুদ্ধি লোপ পেতে চলেছে। সরকারের সংরক্ষিত বনও এদের ক্ষুধিত দৃষ্টিপাত থেকে রেহাই পায় না। গাছপালা কাটার ফলে যে সর্বনাশা বিনষ্ট মানবকুলকে গ্রাস করবে সেদিকে মোহগ্রস্ত মানুষ আদৌ সচেতন নয়। একবিংশ শতাব্দীতে আজ আমরা এসে পৌঁছেছি। এ সভ্যতার অগ্রগতির চরম অনুন্নতির ক্ষণেও বাংলাদেশের কৃষি সম্পূর্ণ প্রকৃতি-নির্ভর। একদিন যে অরণ্যভূমি ছিল শ্যামলে-শ্যামল, পরিবেশ ছিল মনোরম, আজ তা আধুনিক মানুষের স্বার্থের আঘাতে জর্জরিত ও বিবর্ণ। অরণ্যের প্রতি, পরিবেশের প্রতি মানুষের এ অকৃতজ্ঞতার প্রতিশোধ কি প্রকৃতি নেবে না?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর