মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

জননিরাপত্তা রক্ষায় ডিএমপি

মো. আছাদুজ্জামান মিয়া : বিপিএম (বার), পিপিএম

জননিরাপত্তা রক্ষায় ডিএমপি

জনশৃঙ্খলা রক্ষা : সবারই জানা জাতীয় বিভিন্ন দিবস/কর্মসূচি যেমনÑ ইংরেজি নববর্ষ, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা, বিশ্ব ইজতেমা, বইমেলা, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বাংলা নববর্ষ, মে দিবস, মাহে রমজান, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, তাজিয়া মিছিল, দুর্গাপূজা, বুদ্ধপূর্ণিমা, বিজয় দিবস, বড়দিন, ফোক ফেস্ট, লিট ফেস্ট, থা -র্টিফার্স্ট নাইটসহ সব জাতীয় উৎসব অনুষ্ঠানে নিñিদ্র নিরাপত্তা প্রদান করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। উৎসবমুখর পরিবেশে লাখ লাখ নারী-পুরুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিটি উৎসব প্রাণের মেলায় পরিণত হয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন, ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন ইভেন্টে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক গৃহীত নিরাপত্তাব্যবস্থা বিশ্বমানের হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক সভা : ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জঙ্গিবাদসৃষ্ট সমস্যা নিয়ন্ত্রণ তথা নিরসনের লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে নিজ নিজ দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসার প্রেক্ষাপট নির্মাণের লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবকদের সমন্বয়ে জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছি।

থানার সেবার মানোন্নয়ন : পুলিশি কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু থানায় সেবার মানোন্নয়নের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। অহেতুক গ্রেফতার এবং মোবাইল গাড়িতে তুলে হয়রানি করা, কার্যবিধি ৫৪ ধারায় গ্রেফতার এবং ডিএমপি অর্ডিন্যান্সে গ্রেফতার করার ঘটনা কমে আসছে। থানা পর্যায়ে ব্যাপকভিত্তিক ডিজিটাইজেশনের কার্যক্রমও চলমান আছে। তদন্ত কার্যক্রমের সুষ্ঠু ও গতিশীল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ক্রিমিনাল ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CDMS)-এর প্রাত্যহিক হালনাগাদ কার্যক্রম তদারকি করা হচ্ছে। ডিএমপির সব থানায় পর্যায়ক্রমে স্থাপিত হচ্ছে নারী ও শিশুবান্ধব হেল্প ডেস্ক।থানায় সাধারণ ডায়েরি ফরম (জিডি ফরম) সরবরাহ : থানায় সাধারণ ডায়েরি প্রক্রিয়া সহজতরকরণ এবং সাধারণ ডায়েরি করতে নাগরিকদের হয়রানি না হওয়ার লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিটি থানায় নির্দিষ্ট ফরম্যাট অনুযায়ী সাধারণ ডায়েরি ফরম বই আকারে সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে সেবাপ্রত্যাশীরা খুব সহজেই থানায় ছাপানো ফরমে সাধারণ ডায়েরি করতে পারছেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক নাগরিকদের প্রত্যাশিত সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে যা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। 

অপরাধপ্রবণতা হ্রাস : জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে চৎড়ধপঃরাব জনবান্ধব টেকসই পুলিশি সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘টিম ডিএমপি’-এর অহর্নিশি প্রয়াসের প্রত্যক্ষ ফলস্বরূপ ঢাকা মহানগরীতে অপরাধ-প্রবণতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। অপরাধ বিভাগে ১৬টি জোনকে পুনর্বিন্যস্ত করে ২৪টি জোন গঠন এবং জোনভিত্তিক এডিসি ও এসি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদায়নপূর্বক মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের তদারকি বৃদ্ধির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের কার্যকরভাবে চেকপোস্ট, মোবাইল পেট্রল, ব্লক রেইড কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে অপরাধীদের নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। ফলে ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রিত রয়েছে।

মামলার যথাযথ তদন্ত নিষ্পত্তি : ঢাকা মহানগরীতে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর তদন্ত অগ্রগতি পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে অসংখ্য মামলার বস্তুনিষ্ঠ ও মানসম্পন্ন তদন্ত যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অপরাধ ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ, তদারকি, পর্যালোচনার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ, সার্বক্ষণিক ও নিবিড় তদারকির কারণে অনেক চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন এবং আসামিদের গ্রেফতার করা সহজতর ও সম্ভবপর হয়েছে।

মাদক নির্মূল ও মাদকের বিস্তার রোধ এবং মাদকসেবীদের পুনর্বাসন : বাংলাদেশ পুলিশের প্রাধিকারভুক্ত কার্যক্রমসমূহের মধ্যে মাদক নির্মূল ও মাদকের বিস্তার রোধ অন্যতম। বর্তমান মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদক, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির অঙ্গীকার ঘোষণা করেছেন। ওই ঘোষণা বাস্তবায়ন ও ফলপ্রসূ করার নিমিত্ত দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ ও নিবিড় তদারকির কারণে বিপুলসংখ্যক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরী এলাকায় ‘সুপথে ফেরা’ কর্মসূচির মাধ্যমে মাদকসেবীদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বনানী সাততলা বস্তিতে মাদক আখড়া ভেঙে গড়ে তোলা হয়েছে ডে-কেয়ার সেন্টার।অবৈধ অস্ত্র-বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার ও মামলা : অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্যের ব্যবহার রোধ ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তার কর্মপরিকল্পনা ও কৌশল অনুযায়ী ব্লক রেইড পরিচালনা, বিশেষ অভিযান পরিচালনা ও নানামুখী পদক্ষেপের কারণে অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য।

চোরাই গাড়ি উদ্ধার : চোরাই গাড়ি উদ্ধারের ক্ষেত্রে তার দিকনির্দেশনা ও নানামুখী পদক্ষেপের কারণে ২০১৮ সালে উদ্ধার করা হয়েছে ১২৬টি প্রাইভেট কার, ১৩টি মাইক্রোবাস, ২৭৬টি মোটরসাইকেল, ৫০টি সিএনজি, ২৪টি ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান, ৪৬টি জিপ-পিকআপ, ১টি ট্যাক্সি ক্যাব, ৭টি টেম্পো ও ২৪টি বাস সর্বমোট ৫৬৭টি চোরাই গাড়ি।

লেখক : পুলিশ কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর