বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

কলঙ্কিত ২১ আগস্ট

গ্রেনেড হামলাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করুন

২১ আগস্ট দেশের ইতিহাসের একটি কলঙ্কিত দিন। হত্যা ও ষড়যন্ত্রের যে রাজনীতি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছিল তার পরিণতিতে একের পর এক অঘটন ঘটেছে। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর ’৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলে চার জাতীয় নেতার খুনের ঘটনা, ৭ নভেম্বর সেনা কর্মকর্তাদের নিধন এবং ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে জিয়াউর রহমানের হত্যাও ছিল হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির পরিণতি। ’৯০ সালে দৃশ্যত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেও নিষ্ক্রান্ত হয়নি ষড়যন্ত্রের হোতারা। ’৯৬ সালের নির্বাচনে ’৭৫-পরবর্তী ধারার রাজনীতির পরাজয় হয়। ক্ষমতায় আসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ দল। কিন্তু ২০০১-এর নির্বাচনের আগে ও পরে বিস্তৃত হয় ষড়যন্ত্রের থাবা। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশে আইয়ামে জাহেলিয়ার পুনরায় আবির্ভাবের কসরত চলে। শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টারের মতো শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা হত্যার শিকার হন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর মতো যশস্বী সংসদবেত্তা অল্পের জন্য বেঁচে যান ঘাতকের হামলা থেকে। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর প্রকাশ্য সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হত্যার চেষ্টা চলে। এ ঘটনায় বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ নেতা-কর্মী নিহত হন। এ হত্যাকান্ডে ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং আরও বেশি ক্ষমতাধররা যে জড়িত তা স্পষ্ট হয়ে যায় ক্ষমতাসীনদের ঠাকুর ঘরে কে রে? কর্তা আমি কলা খাই না জাতীয় কর্মকান্ডে। গ্রেনেড হামলার অপনায়ক মন্ত্রী, গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং তাদের নির্দেশদাতা বিশেষ ভবনের অধীশ্বর ও ক্ষমতার অধীশ্বরীকে আড়াল দিতে জজ মিয়া নাটকেরও অবতারণা করা হয়। ক্ষমতা চিরস্থায়ী ও একাত্তরের পরাজিত শক্তির পুনরুত্থান নিশ্চিত করতেই মুক্তিযুদ্ধের পতাকাবাহীদের নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াসে কারা জড়িত ছিল তা আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট। কারণ, ২১ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনার পর তা ধামাচাপা দিতে মামলার আলামত লোপাট করার চেষ্টা চালানো হয়। যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠিত হয় তার দায়িত্ব দেওয়া হয় একজন ভাড়াটে ব্যক্তিকে; যার কাজ ছিল কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন গাওয়া। তবে মেঘ দিয়ে যেমন সূর্য ঢাকা যায় না তেমনি ২১ আগস্টের দুর্বৃত্তদের চেহারা লুকানো সম্ভব হয়নি। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে গত বছর ১৯ জনের মৃত্যুদন্ড ও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করেছে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে আসামিপক্ষ। আমরা আশা করব, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। নেপথ্য নায়কদের চেহারা উন্মোচনে এ মামলার রায় প্রাসঙ্গিক বলে বিবেচিত হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর