শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

নামাজের উপকারিতা

প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান

ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। প্রথমটি হচ্ছে ইমান, দ্বিতীয় নামাজ, তৃতীয় জাকাত, চতুর্থ রোজা এবং পঞ্চমটি হজ। গুরুত্বের দিক দিয়ে ইমানের পরই নামাজের অবস্থান। ইসলামে প্রধান ইবাদত নামাজ। এ ইবাদত প্রতিদিনই করতে হয়। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথা ভোরে সূর্য ওঠার আগে ফজরের নামাজ, দুপুরে জোহরের নামাজ, বিকালে আসরের নামাজ, সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ ও রাতে এশার নামাজ আদায় করতে হয়। এ নামাজগুলো প্রতিদিন সঠিক সময়ের মধ্যে আদায় করা বাধ্যতামূলক। মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক প্রতিদিন এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে যাতে পরকালে বেহেশতে যাওয়া যায়। প্রতিদিন এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে শুধু যে পরকালেই এর উপকার পাওয়া যায় তা নয়, ইহকালেরও নানাবিধ উপকার এ থেকে পাওয়া যায়।

আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নামাজ প্রতিষ্ঠা কর। নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ সূরা আনকাবুত, আয়াত ৪৫। এর ফলে নামাজি অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে রক্ষা পায়, যা তার বেহেশতে যাওয়ার পথ সুগম করে দেয়। তবে এর জন্য নামাজিকে যথাযথভাবে নামাজ আদায় হবে। যথাযথভাবে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে কোরআনে বলা হয়েছে-

ক. তোমরা নামাজের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী (আসরের) নামাজের এবং আল্লাহর উদ্দেশে বিনীতভাবে দাঁড়াও। সূরা বাকারাহ, আয়াত ২৩৮। খ. তোমাদের বন্ধু হচ্ছেন আল্লাহ, তাঁর রসুল এবং বিশ্বাসীরা যারা বিনত হয়ে নামাজ কায়েম করে ও জাকাত দেয়। সূরা মায়িদাহ, আয়াত ৫৫। গ. সফল ওইসব বিশ্বাসী যারা তাদের নামাজে বিনয়ী। সূরা মুমিনুন, আয়াত ১-২।

সূরা মুমিনুনের ২ নম্বর আয়াতের ‘খাশিউন’ শব্দের বাংলা ‘বিনয়ী’। বলা হয়েছে, খাশিউন শব্দটি আরবি ‘খুশু’ থেকে এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে বিনয়, মনোযোগ, নম্রতা। অর্থাৎ তারাই সফল যারা মনোযোগ ও বিনয়সহকারে নামাজ আদায় করে। যেসব মুসলমান নামাজ আদায়ের পরও অসৎ ও নীতিহীন, তারা মনোযোগ ও বিনয়সহকারে নামাজ আদায় করে না। এখানে উল্লেখ্য, যথাযথভাবে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তুমি যখন নামাজে দাঁড়াবে, তখন মনে মনে এরূপ ধারণা করবে যে, আমি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়েছি, যদিও আমি তাকে দেখছি না, কিন্তু তিনি আমাকে দেখছেন।’ ইবাদতের মধ্যে নামাজ হচ্ছে শীর্ষস্থানীয়। হাশরের ময়দানে নামাজের হিসাব নেওয়া সম্পর্কে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ যে জিনিসের হিসাব প্রথম নেবেন তা হচ্ছে নামাজ।’ আবু দাউদ।

নামাজের হিসাবে পার হতে না পারলে তাকে দোজখে যেতে হবে। বেনামাজি সম্পর্কে আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের কীসে জাহান্নামে ফেলেছে? তারা বলবে, আমরা নামাজি ছিলাম না।’ অর্থাৎ বেহেশতে যেতে হলে ইমানদার ব্যক্তিকে নামাজি হতে হবে এবং যথা -যথভাবে নামাজ আদায় করতে হবে। এজন্য নামাজকে বলা হয় বেহেশতের চাবি। যথাযথভাবে নামাজ আদায়ের দ্বারা পরকালে বেহেশতে যাওয়া যাবে। এটাই হচ্ছে নামাজের পরকালের মহাউপকারিতা।

মুসলমানরা পরকালীন উপকার তথা বেহেশতে যাওয়ার জন্যই নামাজ আদায় করে। কিন্তু এ নামাজ আদায় থেকে দেখা যায় ইহকালেও নানাবিধ উপকার যেমন পরিচ্ছন্নতা, সামাজিকতা, ব্যায়াম ইত্যাদি উপকার পাওয়া যায়। নামাজ আদায়ের আগে অজু করতে হয়। অজু ছাড়া নামাজ হয় না। অজু হচ্ছে নামাজের প্রস্তুতি। এ ব্যাপারে আল্লাহ বিশ্বাসীদের বলেন,

‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যখন নামাজের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেবে এবং তোমাদের মাথা হাত দিয়ে মুছে নেবে (মাসেহ করবে) এবং দুই পা গোড়ালি পর্যন্ত ধুয়ে নেবে।’ সূরা মায়িদাহ, আয়াত ৬।

শুধু যে নামাজের জন্য অজু তথা হাত-পা ইত্যাদি ধুতে হয় তা নয়, নামাজের স্থান ও পোশাকও পবিত্র হতে হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের জন্য মুসলমানদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়। সুস্বাস্থ্যের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য। অর্থাৎ নামাজ সুস্বাস্থ্যের জন্য অনুকূল।

নামাজের সময় মুসলমানরা নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে যায়। ফলে পরস্পর দেখাশোনা, খোঁজখবর নেওয়ার সুযোগ হয়। তাই তাদের মধ্যে একতা, মমতা, সহমর্মিতা বাড়ে। জামাতে দাঁড়ানোর সময় গরিব-ধনী, আমির-ফকিরের কোনো ভেদাভেদ থাকে না। এখানে সবাই আল্লাহর সন্তুষ্টির একই উদ্দেশ্যে পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়। এতে সামাজিক স্থিতিশীলতা, শান্তি বাড়ে ও বজায় থাকে এবং সামাজিক বন্ধনও দৃঢ় হয়। নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখে বিধায় সমাজে তাদের দ্বারা অশান্তি সৃষ্টি হয় না। এর ফলে সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা ভালো থাকে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা ইমান আনে আল্লাহর ওপর আল্লাহর স্মরণে তাদের হৃদয় প্রশান্ত হয়।’ সূরা রাদ, আয়াত ২৮।

ইমানদাররা আল্লাহকে স্মরণ করলে শুধু যে তাদের মনে শান্তি আসে তা নয়, এর প্রভাবে তাদের পরিবারে ও সমাজে শান্তি আসে। আর আল্লাহকে স্মরণ করার সর্বোত্তম পথ হচ্ছে নামাজ। অর্থাৎ নামাজ কায়েম থাকলে ব্যক্তিগত শান্তি, পারিবারিক শান্তি ও সামাজিক শান্তি বিরাজমান থাকে।

নামাজের দ্বারা মানসিক ও শারীরিক উভয় ব্যায়ামই সাধিত হয়। নামাজের দ্বারা শরীরের সব অঙ্গের নড়াচড়ার ফলে এগুলো সক্ষম থাকে এবং স্বাস্থ্য রক্ষিত হয়। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় বিধায় নামাজিদের হৃদয় প্রশান্ত থাকে। তাই নামাজিদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং তারা মানসিক অসুখ যেমন হতাশা, বিষণ্নতা, অস্থিরতা, অহেতুক ভয় ইত্যাদি থেকে নিরাপদ থাকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর