শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

অভিশাপের নাম যৌতুক

জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে

যৌতুক এক অভিশাপের নাম এবং একবিংশ শতাব্দীর এই অগ্রসর যুগেও জাতির ঘাড়ে তা বিষনিঃশ্বাস ফেলছে। বাংলাদেশে যৌতুকের শিকার হয়ে প্রতি বছর নিগৃহীত হচ্ছে শত শত নারী। প্রাণ হারানোর ঘটনাও কম নয়। যৌতুক নিরোধে দেশে কড়া আইন থাকলেও তা এ অভিশাপকে সমাজদেহ থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। ঢাকার আদালতের নিবন্ধন হিসাব অনুযায়ী, গত ১৭ বছরে ঢাকায় ৩৭৪ জন নারীকে যৌতুকের জন্য হত্যা করা হয়। এ হিসাবে প্রতি বছর ঢাকায় যৌতুকের জন্য গড়ে ২২ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যানুযায়ী, যৌতুকের কারণে গত জুলাইয়ে হত্যা করা হয় তিনজন নারীকে। আর এ কারণে নির্যাতনের শিকার হন আরও সাত নারী। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে যৌতুকের কারণে মোট নির্যাতনের শিকার হন ১৪২ জন। এর মধ্যে ৭১ জন নারীকে হত্যা করা হয় আর ৬৯ জনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এ ছাড়া যৌতুকের কারণে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন আরও দুজন। এর আগে যৌতুকের কারণে ২০১৭, ২০১৬ ও ২০১৫ সালে যথাক্রমে ২৫৬, ২০৬ ও ২০২ জন নির্যাতনের শিকার হন। যৌতুকের কারণে ২০০৮ থেকে ২০১৮-  এই এক দশকে ১ হাজার ৯২৪ জন নারীকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। যৌতুকে হত্যা ও নির্যাতনের এসব তথ্য-উপাত্ত নিশ্চিতভাবে মোট ঘটনার আংশিক চিত্র মাত্র। লোকলজ্জার ভয়ে নির্যাতনের ঘটনা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাইরে প্রকাশ পায় না। বিশেষত যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের যেসব ঘটনা ঘটে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংসার টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তা নীরবে সহ্য করা হয়। দেশে যৌতুক নিরোধ আইন অনুযায়ী, বিয়েতে যৌতুক দাবি, গ্রহণ বা প্রদানের পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে সহায়তা করার অপরাধে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বহু ক্ষেত্রে যৌতুকসংক্রান্ত অভিযোগ আমলে নেয় না। অনেক সময় যৌতুকের ভুয়া অভিযোগে প্রতিপক্ষকে জব্দ করার প্রবণতাও চলে। নিরপরাধ ব্যক্তিদের মামলায় জড়ানোর চেষ্টা যৌতুকের প্রকৃত ঘটনাগুলোকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। যৌতুক বন্ধে আইনের চেয়েও দরকার সামাজিক সচেতনতা; যৌতুকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে যার বিকল্প নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর