বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডেঙ্গুর প্রকোপ, দোষ কার?

অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল মজিদ ভূঁঁইয়া

ঢাকা শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে আমরা সবাই ওয়াকিবহাল। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা তো বসবাসের জন্য অযোগ্য সিটির তালিকায় ঢাকাকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে। সিঙ্গাপুরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিশ্বের জন্য মডেল আর সেখানেই কিনা ডেঙ্গুর প্রকোপ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি! তাহলে বোঝা যায়, অন্য আরও অনেক কিছুই ডেঙ্গুর প্রকোপের পেছনে কাজ করে। এডিস মশা নিধনের জন্য ওষুধ ছিটালেই যে সব সমাধান হয়ে যাবে এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। মাহাথির মোহাম্মদের দেশ মালয়েশিয়ায়ও এডিস মশা নিধনের জন্য ওষুধ কম ছিটানো হয়নি। অথচ সেখানেও চলতি বছর ০.১৯% ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে অর্থাৎ বাংলাদেশের চেয়ে ০.১৮% বেশি। এ ছাড়া যথাক্রমে কম্বোডিয়ায় ০.০২%, ফিলিপাইনে ০.০৯%, ভিয়েতনামে ০.০৮%, লাওসে ০.১১% ও নিউ কেলিডোনিয়ায় ১.৩৩% ডেঙ্গুর আক্রমণ ঘটেছে। থাইল্যান্ডে (মোট জনসংখ্যা ৬ কোটি প্লাস) চলতি বছরে লাখো মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে শতাধিক। বাংলাদেশে (মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি প্লাস) এযাবৎ প্রায় ৬০ হাজার আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৫০-৬০ জনের। মালয়েশিয়ায় (মোট জনসংখ্যা ৩ কোটি প্লাস) লাখো মানুষ আক্রান্ত, মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১০০ জনের, ফিলিপাইনে (মোট জনসংখ্যা ১০ কোটি প্লাস) কয়েক লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৪ শতাধিক মানুষের। বর্ণিত দেশগুলোয় দলমত-ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সাধারণ মানুষ কেউ কাউকে দোষারোপ করছে না বা কেউ নিজের দায়িত্ব পালন না করে অন্যের ঘাড়ে দায়িত্ব চাপানোর চেষ্টা করছে না, বরং সবাই একত্রে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে চলেছে, দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এখানে চলছে দায়িত্ব এড়ানোর তুমুল প্রতিযোগিতা, চলছে একে অন্যকে নসিহত করার পাল্টাপাল্টি হীনমন্যতা অথচ নিজের কী করা উচিত বা নিজে ডেঙ্গু মোকাবিলা করার জন্য কতটুকু দায়িত্ব পালন করেছে তার খতিয়ান না দিয়ে অন্যের কাজের তহবিল ঘেঁটে বেড়াচ্ছে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে। অভিযোগ উঠেছে, ঢাকার মশার ওষুধ অকার্যকর তাই কাজ হয়নি, মশাও মরেনি; তাই ঝাঁকে ঝাঁকে এডিস মশা মানুষকে কামড়ে দিয়েছে আর তাই ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সিঙ্গাপুরের মশার ওষুধ নিশ্চয়ই কার্যকর ছিল, সেখানে ন্যায্যভাবে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে এও নিশ্চিত, তাহলে সেখানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হলো কী করে? পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জাতের এডিস মশা রয়েছে, তাদের আচার-আচরণ, ডিম দেওয়ার প্রয়োজনে এডিস মশা মানুষের রক্ত সংগ্রহ করবে নাকি পশুর রক্ত সংগ্রহ করবে সে পার্থক্য, অপ্রতিকূল পরিবেশে মশার বংশ বিস্তারের স্থান পরিবর্তনের কৌশল অবলম্বন, এডিস মশার আচার-আচরণ যেমন রক্ত সংগ্রহের সময়ানুবর্তিতা পরিবর্তন ইত্যাদি কারণ থাকতে পারে। বাংলাদেশও সেই ব্যতিক্রমের ঊর্ধ্বে নয়। বাতাসের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে চলে গেলে এডিস মশার কামড়ানোর মাত্রা অনেক কমে যায়। যেজন্য শীতকালে অর্থাৎ নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এডিস মশার কামড়ের মাত্রা অনেক কমে যায়। যেজন্য উক্ত সময়ে ডেঙ্গুর আক্রমণও অনেক কম হয়। প্রতি বছর মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর আক্রমণ ঘটে এবং জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর- এ তিন মাসে ডেঙ্গুর আক্রমণ সবচেয়ে বেশি ঘটে। কেননা, বাতাসের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা ওই তিন মাসে সবচেয়ে বেশি থাকে। মশা নিধনের ওষুধ বেশি বেশি প্রয়োগ করলেও তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। মশার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের জন্য উপকারী অন্যান্য কীটপতঙ্গও ধ্বংস হয়ে যাবে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হবে। সেজন্য বিজ্ঞানীরা মশার বংশ বিস্তারের স্থান নির্মূলের পরামর্শ দেন, এতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরে বিল্ডিং ও স্থাপনাগুলো আরও বেশি ঘনত্বপূর্ণ। এসবের ভিতরে এডিস মশার লাখো-কোটি বংশ বিস্তারের স্থান লুকিয়ে আছে, যা নাগালের বাইরে; যেগুলো নির্র্মূল করা আসলেই দুরূহ। কিছু কিছু মশা ওষুধ প্রয়োগের পর পরিবেশের ভিতরে স্থায়ী আসন করে নেয়। যেমন ডিডিটি প্রাণিকুলের জীবনচক্রে ঢুকে যায় এবং বংশানুক্রমিকভাবে প্রাণিকুলের ভিতরে ডিডিটির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে, যাকে বলা হয় বায়োমেগনিফিকেশন। যে কারণে কীটপতঙ্গ দমনে অত্যন্ত কার্যকর ওষুধ হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ডিডিটির ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে, তবে বিশেষ অপরিহার্য কারণে তাদের অনুমতিসাপেক্ষে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। রোগজীবাণু নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নিজ থেকে অ্যান্টিবায়োটিক অকেজোকারী পদার্থ তৈরি করে। ঠিক তেমনি মশাও নিজেদের রক্ষার জন্য নিজ থেকেই এক ধরনের পদার্থ তৈরি করে, যা কীটনাশককে অকেজো করে দেয়। দৃশ্যমান ও নাগালের ভিতরের বংশ বিস্তারের স্থান ধ্বংস করা সহজ। তবে অপ্রতিকূল অবস্থায় নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মশা কৌশল পাল্টিয়ে ফেলে, এখন এডিস মশা গাছ এমনকি নারিকেল গাছ, তাল গাছের ভিতরে জমে থাকা পানিতে বংশ বিস্তার করে। বার্ডফ্লু ঠেকানোর জন্য মিলিয়ন-বিলিয়ন মুরগি নিধন করা হয়, তা পরিবেশের ভারসাম্য ক্ষতি করে না, কিন্তু গাছপালা নিধন তো সম্ভব নয়, এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। বংশ বিস্তারের জন্য এডিস মশার সবচেয়ে পছন্দের দুটি জায়গা হলো যথাক্রমে ডাবের খোসা ও টায়ারের মধ্যে জমে থাকা পানি। এই দিক বিবেচনায় ঢাকা শহরের হাজারো ডাব বিক্রেতা ও হাজারো ওয়ার্কশপ কর্মীকে স্বাস্থ্য শিক্ষা জ্ঞানদান করা যেতে পারে। সংক্রামক ব্যাধির সবচেয়ে কার্যকর পথ হলো ভ্যাকসিন। যেমন ভ্যাকসিন দ্বারা সারা পৃথিবী থেকে গুটিবসন্ত নির্মূল করা হয়েছে। ম্যালেরিয়ায় প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে, যার শতকরা ৯০ ভাগের বেশি আফ্রিকার মানুষ। ১৮৯৭ সালে রোনাল্ড রস ম্যালেরিয়ার জীবনচক্র আবিষ্কার করেন। গত ১২২ বছরেও বিজ্ঞানীরা ম্যালেরিয়ার কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারছেন না। এইডসের কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কারও সম্ভব হচ্ছে না, যদিও পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ৮ লাখ মানুষ এইডসে মৃত্যুবরণ করে। ডেঙ্গুর কার্যকর ভ্যাকসিনও আবিষ্কার সম্ভব হচ্ছে না। অদূর ভবিষ্যতে আবিষ্কার হবে তার সম্ভাবনাও কম। যদিও পরীক্ষামূলকভাবে ডেঙ্গু ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হচ্ছে কিন্তু তার কার্যকারিতা হতাশাজনক। টেকনিক্যাল কারণ অর্থাৎ ম্যালেরিয়া, এইডস ও ডেঙ্গু এ তিনটি জীবাণু থেকে ভ্যাকসিন তৈরির উপাদান বের করা সম্ভব হচ্ছে না, যেজন্য ভ্যাকসিন তৈরি করা যাচ্ছে না। তবে ম্যালেরিয়া ও এইডস নিয়েই মানুষ বসবাস করছে এবং আগামীতে ডেঙ্গু নিয়েও বসবাস করবে। জাতীয় দুর্যোগের সময় দেশপ্রেমের প্রমাণ পাওয়া যায় অথচ আমরা অনেকেই নিজেরা কিছু না করে অন্যদের উপদেশ দিয়ে চলেছি, অন্যদের আসামি করে চলেছি। জাতীয় দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের প্রয়াস চালাচ্ছি কিন্তু জনগণ তো এখন সব বোঝে। উপদেশ আর নসিহতের পেছনে যে সময় ব্যয় করা হয়েছে সে সময়টুকু ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রমে ব্যয় করলে ঢাকাবাসীর অনেক লাভ হতো। উল্লিখিত ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর আক্রমণ সবচেয়ে কম। তবে এতে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু ডেঙ্গুর কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে কাজেই একে প্রতিরোধ করতে হবে। প্লেগের কথা মানুষ ভুলে গেছে। জলবসন্ত নির্মূল হয়ে গেছে, পোলিও নির্র্মূল হওয়ার পথে। কলেরা মহামারী বিলুপ্তপ্রায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৮-১৯ সালে ফ্লো মহামারীতে বিশ্বে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। গত ১০০ বছরে ফ্লো ভাইরাস বহুবার তাদের বিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু মানুষের সতর্কতার কাছে পরাজয়বরণ করেছে, বিশ্বমহামারী আর ঘটাতে সক্ষম হয়নি।

জীবাণুরা মহামারী আকারে মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, কিন্তু পরিশেষে মানুষই জয়লাভ করে। তবে প্রতিটি যুদ্ধের আগে মানুষ যেমন প্রস্তুতি গ্রহণ করে তেমনি জীবাণুুরাও মহামারী ঘটানোর আগে প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং জীবাণুদের সেই প্রস্তুতি পর্বকে সময়মতো শনাক্ত করতে পারলে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। ডেঙ্গু এবার বড় ধরনের আক্রমণ করেছে বিশেষ করে ঢাকায়। ব্যাপক আক্রমণের আগে ডেঙ্গু ভাইরাসের অবশ্যই প্রস্তুতি পর্ব ছিল। কিন্তু সেই প্রস্তুতি পর্ব সময়মতো শনাক্ত ও তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কতটুকু সচেষ্ট ছিলেন তা বিশ্লেষণ করে দেখা যেতে পারে। অনেক রোগেরই ভৌগোলিক সীমারেখা থাকে যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামে ম্যালেরিয়া কিন্তু ঢাকায় ম্যালেরিয়া নেই। ইয়েলো ফিভার আফ্রিকায় রয়েছে কিন্তু বাংলাদেশ, ভারত বা চীনে নেই। তবে অদূর ভবিষ্যতে ইয়েলো ফিভার যে বাংলাদেশে আসবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই, কেননা আফ্রিকার ইয়েলো ফিভার আক্রান্ত দেশের লোকেরা হামেশা বাংলাদেশে যাতায়াত করে চলেছে, যার মধ্যে কারও কারও শরীরে ইয়েলো ফিভার ভাইরাস থাকতে পারে এবং যেহেতু ওই ভাইরাসের বাহক এডিস মশা ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র বিরাজমান কাজেই ভবিষ্যতে ইয়েলো ফিভার চক্র শুরু হতে পারে এবং এর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সার্ভিল্যান্স করা যুক্তিযুক্ত হবে। কেননা ঘরে একবার ঢুকে গেলে বের করা কঠিন হবে। দেশে অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে, প্রতি দলেরই অসংখ্য কর্মীবাহিনী রয়েছে, অনেক দলের পাড়া-মহল্লা পর্যন্ত কর্মীবাহিনী রয়েছে। তারা তাদের লোকজনকে নির্দেশ দিতে পারেন যাতে প্রতিটি গ্রামে/মহল্লায় তারা যেন এডিস মশার বংশ বিস্তারের স্থানগুলো নির্মূল করেন। পারস্পরিক দোষারোপের প্রতিযোগিতা না করে বরং এডিস মশার বংশ বিস্তার বিনাশের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে কেউ বাধা দেবে না, বরং কোন দল বা গোষ্ঠী বা গ্রুপ কতটা এলাকায় এডিস মশার বংশ বিস্তারের স্থান ধ্বংস করল তার খতিয়ান দেখে জনগণ তাদের মূল্যায়ন ঠিকই করবে। এটাই হলো জনসমক্ষে দেশপ্রেমের নজির স্থাপন করার উত্তম উপায়। মনে রাখতে হবে, বংশ বিস্তার বিনাশ পদ্ধতি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি, বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি, ভ্যাকসিনের পরই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। কেননা বংশ বিস্তার নেই তো এডিস মশাও নেই, আর এডিস মশা নেই তো তার কামড়ও নেই, আর ডেঙ্গুও নেই। মাত্র এক দিন এ অভিযান পরিচালনা করলে দেশের সব শহরের ডেঙ্গুর উৎসস্থল ধ্বংস করা সম্ভব বলে মনে করি। সেটাই হবে দেশপ্রেমের উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। ডেঙ্গুও একসময় মানুষের জীবনের অংশ হয়ে যাবে এবং মানুষ জয়লাভ করবে। ভয়ের কিছু নেই। দোষারোপের কিছু নেই, রাজনীতিরও কিছু নেই।

লেখক : কমিউনিটি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। পরিচালক, বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতাল (বারডেমের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান) ও সাবেক পরিচালক (প্রশাসন), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর