রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মহররমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

মহররমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে গণনার জন্য মাস ১২টি, এর মধ্যে চারটি মাস নিষিদ্ধ, এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।’ সূরা তাওবাহ, আয়াত ৩৬। নিষিদ্ধ চারটি মাস সম্পর্কে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘বছর হলো ১২টি মাসের সমষ্টি, তার মধ্যে চারটি মাস অতিসম্মানিত। তিনটি পরপর লাগোয়া। সে তিনটি হলো জিলকদ, জিলহজ ও মহররম আর চতুর্থটি হলো জমাদিউস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী রজব।’ বুখারি, মুসলিম। ইমাম বাগাভি (রহ.) বলেন, ‘অনেক আগেই আল্লাহতায়ালা এ বিধান লাওহে মাহফুজে লিখে রেখেছেন।’ তাফসিরে বাগাভি। ইমাম আবু জাফর তাবারি (রহ.) বলেন, ‘ইসলাম আগমনের আগেও জাহেলি যুগে এ চারটি মাস নিষিদ্ধ ছিল। এ মাসগুলোকে তারা পবিত্র মনে করে সম্মান করত, যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং ঝগড়া-ফ্যাসাদ থেকে নিজেদের বিরত রাখত।’ তাফসিরে তাবারি।অধিক সম্মানিত মাসগুলোর প্রথম মাস মহররম। এ মাসের ফজিলত অনেক বেশি। যেহেতু এটি পবিত্র মাস তাই এ মাসে যুদ্ধ হারাম। তবে যদি প্রতিপক্ষ কাফির-মুশরিক যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং আক্রমণ করে তাহলে যুদ্ধ করে তাদের ঘায়েল করা বৈধ। এ প্রসঙ্গে মুকাতিল ইবনে হাইয়ান ও ইবনে জুরাইজ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘একদল সাহাবি মহররমে মুশরিকদের একদল লোকের সাক্ষাৎ লাভ করে। তখন মুসলিম পক্ষ প্রতিপক্ষকে নিবৃত্ত রাখতে চাইল, যাতে তারা হারাম মাসে যুদ্ধ না করে। তবে মুশরিক পক্ষ অস্বীকৃতি জানিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হতে প্রতিজ্ঞ হলো এবং হঠাৎ তাদের ওপর চড়াও হলো। তখন মুসলমানরা তাদের প্রতিহত করল এবং যুদ্ধে লিপ্ত হলো। এরপর আল্লাহ তাদের বিজয় দান করেন।’ তাফসিরে ইবনে কাসির, পঞ্চম খন্ড ।হাদিসে মহররম মাসে নফল ইবাদত ও রোজাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের পর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা।’ মুসলিম। এ হাদিসে মহররমকে ‘শাহরুল্লাহ’ তথা আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায়, মহররমের মর্যাদা কত বেশি।  হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। ‘এক ব্যক্তি হজরত আলী (রা.)-কে প্রশ্ন করলেন, রমজানের পর কোন মাসের রোজা রাখার জন্য আপনি আমাকে আদেশ করবেন? আলী (রা.) বললেন, ঠিক এ প্রশ্নটিই এক ব্যক্তি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে করেছিলেন। আমি সেখানে বসে ছিলাম। তিনি প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, তুমি যদি রমজানের পর কোনো মাসকে গুরুত্ব দিয়ে রোজা রাখতে চাও তাহলে মহররমকে গুরুত্ব দাও। কেননা, মহররম হলো আল্লাহর মাস।’ তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ। ‘একবার রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, মাসগুলোর মধ্যে কোনটি শ্রেষ্ঠ? তিনি বললেন, শ্রেষ্ঠ মাস হলো আল্লাহর মাস। যাকে তোমরা মহররম বল।’ নাসায়ি, বায়হাকি।

কোনো কোনো হাদিসে আমরা দেখতে পাই, রমজানের পর শাবানের রোজাকে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। আর এখানে রমজানের পর মহররমকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে ইমাম নববি (রহ.) শরহে মুসলিমে লেখেন, ‘দুটি কারণে এমনটি হতে পারে। প্রথমত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হায়াতে দুনিয়ার শেষের দিকে মহররমের ফজিলত সম্পর্কে জানানো হয়েছে। তাই শুরুতে তিনি এ সম্পর্কে বলেননি। অথবা সফর, অসুস্থতা বা এ ধরনের কোনো কারণে মহররমের সিয়াম থেকে তিনি বিরত ছিলেন।’ শরহে মুসলিম। মহররমে আমাদের বিশেষ করণীয় হলো ইসলামের কল্যাণে নিবেদিত হওয়া। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অধিক দরুদ ও সালাম পেশ করা। নফল নামাজ আদায়। কোরআন তিলাওয়াত। আশুরা এবং অন্য দিনগুলোতেও সিয়াম পালন। কোরআন-হাদিস অধ্যয়নের পাশাপাশি দান-সদকা ইত্যাদির মাধ্যমে এ মাসে আল্লাহর বিশেষ নৈকট্য অর্জন করতে হবে। আল্লামা ইকবাল বলেন, ‘ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালা কি বাদ।’ অন্যায় প্রতিহত করে সত্যকে আঁকড়ে থাকার শিক্ষাও আমরা এ মাসে গ্রহণ করতে পারি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা লাভ ও তাঁর প্রিয় হাবিব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : এমফিল গবেষক।

সর্বশেষ খবর