রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

হজরত আলীকে দেওয়া নবীজির উপদেশ

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

হজরত আলীকে দেওয়া নবীজির উপদেশ

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচাতো ভাই হজরত আলী (রা.)। নবুয়তি পাওয়ার পর ছোট্ট আলীই প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। তারপর মৃত্যু পর্যন্ত হজরতের সঙ্গে ছিলেন ছায়ার মতো। হজরত আলী সম্পর্কে নবী বলেছেন, ‘মুসা (আ.)-এর জন্য হারুন (আ.) যেমন, আমার জন্য আলীও তেমন।’ আরেকটি হাদিসে নবীজি বলেছেন, ‘আমি যার মাওলা, আলীও তার মাওলা।’ মাওলা আলীকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় সময় বিশেষ বিশেষ নসিহত করতেন। আল্লামা আবুল ফজল আবদুর রহমান জালালুদ্দিন আস সুয়ুতি (রহ.) ওয়াসিয়্যাতুন নবী (সা.) গ্রন্থে উপদেশগুলো সংকলন করেন। পাঠক! আসুন জেনে নিই আলীকে দেওয়া নবীজির মূল্যবান কয়েকটি নসিহত।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে আলী! মুমিনের হালত হলো সালাতি জিন্দেগি যাপন করা, রাতের সালাতে যত্নবান হওয়া, মানবতার কল্যাণে অর্থ ব্যয় করা। মুনাফিকের আলামত হলো লোক দেখানো সালাত পড়া, লোক দেখানো জিকির করা, লোক দেখানো ভালো কাজ করা। জালেমের আলামত হলো শক্তির দাপটে দুর্বলের অধিকার কেড়ে নেওয়া, লোকজনের সম্পদকে নিজের সম্পদ মনে করা, হালাল-হারামের পরোয়া না করা। হে আলী! জ্ঞানীর আলামত হলো দুনিয়াকে তুচ্ছ মনে করা, সবকিছু সয়ে নেওয়ার গুণ অর্জন করা, বিপদে-মুসবিতে ধৈর্য অবলম্বন করা। ধৈর্যশীলের আলামত হলো ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানো, বঞ্চিতকারীকে দান করা, জুলুমকারীকে অভিশাপ না দেওয়া। তওবাকারীর আলামত হলো কখনই আর পাপের পথে পা না বাড়ানো, রিজিকে হারাম না মেশানো, ধৈর্যের সঙ্গে জ্ঞানের পেছনে লেগে থাকা। হে আলী! সৌভাগ্যবান মানুষের আলামত হলো হালাল খাওয়া, জ্ঞানীদের সঙ্গে সম্পর্ক করা, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতের সঙ্গে আদায় করা। মুখলিস বান্দার আলামত হলো আল্লাহর ইবাদতে সে সবার আগে থাকে, আল্লাহর নাফরমানি করে না, মন্দের সঙ্গেও ভালো আচরণ করে। মুত্তাকির আলামত হলো অসৎসঙ্গ ছেড়ে দেয়, মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকে, গোনাহের ভয়ে সন্দেহজনক হালালও এড়িয়ে চলে। আলী! হিংসুকের আলামত হলো সামনে প্রশংসা করে, পেছনে নিন্দা করে, কেউ বিপদে পড়লে তার আনন্দ বেড়ে যায়। অলসের আলামত হলো আল্লাহর ইবাদতে সে অলসতা করে, সালাত দেরি করে আদায় করে, সময় ও অর্থের লাগামহীন অপচয় করে। বেকুবের আলামত হলো ফরজ ইবাদতে আলসেমি করে, জিকির ছাড়া বেহুদা কথা ও কাজে সময় ব্যয় করে, মানুষের ভুলচুক খুঁজে বেড়ায়। আলী! কপালপোড়া মানুষের আলামত হলো হারাম খাওয়া, জ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা, জামাতের সঙ্গে সালাত আদায় না করা। খারাপ মানুষের আলামত হলো আল্লাহর ইবাদত করতে ভুলে যায়, আল্লাহর বান্দাদের কষ্ট দেয়, উপকারীর অপকার করে। ফাসেকের আলামত হলো দুর্বলের সঙ্গে শক্তি দেখায়, অল্পে তুষ্ট হয় না, উপদেশ শোনে কিন্তু মেনে চলে না।’ এমনিভাবে আরও অনেক নসিহত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলীকে দিয়েছেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে আলী! আমার এ নসিহতগুলো তুমি যদি জীবনে চর্চা কর, তবে তোমার দুনিয়ার জীবন সুখে-সমৃদ্ধে ভরে উঠবে, তোমার মৃত্যু হবে শহীদ অবস্থায়, আর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তোমাকে ফকিহ ও আলেমের মর্যাদা দিয়ে ওঠাবেন।’ কিয়ামতের দিন ফকিহ ও আলেমদের মর্যাদা সম্পর্কে অন্য হাদিসে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে আমার উম্মতেরা! শোনো, কিয়মতের দিন নবীদের পরে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত হবে উম্মতে মুহাম্মাদীর নিষ্ঠাবান আলেমরা। তাদের এমন এমন মর্যাদা দেওয়া হবে, অন্য নবীরা মনে করবেন, এরাও বুঝি কোনো সম্প্রদায়ের নবী হবেন। কেউ কেউ জানতে চাইবেন, হে আল্লাহ! এমন চমৎকার ঈর্ষণীয় মর্যাদা যাদের দিয়েছেন, তারা কোন সম্প্রদায়ের নবী? আল্লাহর পক্ষ থেকে জবাব আসবে, ওরা কোনো সম্প্রদায়ের নবী নয়, ওরা হলো আখেরি নবীর  আলেম-ওলামা সম্প্রদায়।’ হে আল্লাহ! এ নসিহতগুলো মেনে চলার তাওফিক আমাদের দান করুন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব

চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর