সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কাশ্মীরের জনগণ ও ৩৭০ ধারা

তুষার কণা খোন্দকার

কাশ্মীরের জনগণ ও ৩৭০ ধারা

এশিয়ায় প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত-পাকিস্তান তাদের জন্মলগ্ন থেকে পরস্পর ঝগড়ায় মত্ত এটি আমাদের কাছে গা সওয়া পুরনো তথ্য। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নিত্যদিনের ঝগড়া-ঝাটি নিয়ে আমরা অন্য প্রতিবেশীরা এতকাল তেমন একটা মাথা ঘামাতাম না। যতদিন প্রতিবেশী দুই দেশ পারমাণবিক বোমার মালিক ছিল না ততদিন ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে গুলি বিনিময় হচ্ছে না কি দুই দেশের মধ্যে ক্রিকেট খেলা নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে সেটা নিয়ে কারও কৌত‚হল ছিল না। ভারত-পাকিস্তান দুই দেশ পারমাণবিক বোমার মালিক হওয়ার পরে দুই দেশের সম্পর্কের টানাপড়েন আমাদের সবার মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সত্যি কথা বলতে কী, এই দুই ঝগড়াটে প্রতিবেশী দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন অন্য প্রতিবেশীদের বাঁচা মরার প্রশ্ন। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাধিয়ে বসলে কে কার ওপর পারমাণবিক বোমা মেরে বসবে সেই আতঙ্কে আমাদের বুক কাঁপে। দুই দেশ বুদ্ধিভ্রংশ হয়ে পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের মতো মরণঘাতী ভয়ঙ্কর কাজ করে ফেললে এত ঘনবসতির দেশ দুটিতে তাৎক্ষণিক বোমার ঘায়ে কয়েক কোটি মানুষ মারা যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। বোমার ঘায়ে তাৎক্ষণিক মৃত্যুর ঘটনা হবে পৃথিবীর দীর্ঘতম মৃত্যুর মিছিলের সূচনা। পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ফলে চারপাশে রেডিয়েশনের প্রভাব ছড়িয়ে পড়বে। রেডিয়েশনের প্রভাবে যুগের পর যুগ আমরা সবাই তিলে তিলে মরতে থাকব।

ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের টানাপড়েনের কেন্দ্রবিন্দু কাশ্মীর। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হয়ে দুই দেশ পাকিস্তান এবং ভারত স্বাধীন হওয়ার সময় সা¤প্রদায়িক দাঙ্গায় হিন্দু-মুসলমান-শিখ স¤প্রদায়ের চরম হানাহানি এবং রক্তপাত ঘটেছে। ১৯৪০-১৯৫০ দশকের ভয়ঙ্কর দাঙ্গার ঘা এত বছরে শুকিয়ে গিয়ে পাকিস্তান এবং ভারতের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আদতে সেটি ঘটতে পারছে না কারণ ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের মধ্যে কাশ্মীর এমন একটি দগদগে ঘা যা কোনোদিন শুকাবে বলে মনে হচ্ছে না। কাশ্মীর সমস্যাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ঘটে যাওয়া অসংখ্য খন্ডযুদ্ধ বাদ দিলে বড় দাগে যুদ্ধ হয়েছে তিনটি। এই তিন যুদ্ধে প্রতিবেশী দুই দেশ কেউ লাভবান হয়েছে বলে দাবি করতে পারবে না। এদিকে কাশ্মীরের লাগোয়া অংশ আকসাই এখন চীনের দখলে। ১৯৬০ সালে আকসাই নিয়ে চীনের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ হয়েছিল। সেই যুদ্ধে চীন ভারতের কাছ থেকে আকসাই দখল করে নিয়ে সেটিকে চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে ফেলেছে। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করা সংক্রান্ত বিলের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাদের পার্লামেন্টে বললেন তিনি পাকিস্তানের দখলে থাকা আজাদ কাশ্মীর এবং চীনের দখলে থাকা আকসাই পুনরুদ্ধার করবেন। অমিত শাহ আজাদ কাশ্মীর এবং আকসাই পুনরুদ্ধার করার সিদ্ধান্ত জানালেন কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য তিনি কোন পথ অবলম্বন করবেন সেটি আমরা জানি না। অমিত শাহ যদি আলোচনার টেবিলে বসে কথাবার্তা বলে আজাদ কাশ্মীর এবং আকসাই ভারতের দখলে নিয়ে আসতে পারেন তাতে আমাদের ক্ষতি নেই। কিন্তু অমিত শাহের প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নের পথ যদি যুদ্ধংদেহি হয় তাহলে সেটি এশিয়ার এ অঞ্চলের শত কোটি মানুষের জীবন বিধ্বস্ত করে দেবে।

২০১৯ সালের আগস্ট মাসের পাঁচ তারিখে ভারতজুড়ে কাশ্মীর নিয়ে নতুন করে তুলকালাম শুরু হওয়ার কারণে কাশ্মীর ইস্যু এখন মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারায় কাশ্মীরবাসীর জন্য বিশেষ কিছু বিধি-ব্যবস্থা রাখা ছিল যা ভারতের অন্য রাজ্য থেকে আলাদা। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের আওতায় কাশ্মীর ভারতের রাজ্য হওয়া সত্ত্বেও কাশ্মীরের নিজস্ব সংবিধান, একটি পতাকা এবং কাশ্মীরের অভ্যন্তরে শাসন করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন তৈরির ক্ষমতা তাদের ছিল। এসব বিশেষ সুবিধা ভোগ করার কারণে কাশ্মীরকে অন্য রাজ্য থেকে আলাদা হয়ে থাকতে হয়েছে। ৩৭০ ধারা বাতিলের পাশাপাশি ভারতীয় সংবিধানের আরও কিছু ধারা যা ৩৭০ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল সেগুলো ২০১৯ সালের পাঁচই আগস্ট ভারতের রাষ্ট্রপতির আদেশবলে বাতিল করা হয়েছে। কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ সুবিধা বাতিল করার ফলে কাশ্মীরের জনগণ শান্ত থাকবে নাকি ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠবে সেটি এত আগে বলা মুশকিল। ৩৭০ ধারা বাতিলের পরে কয়েক সপ্তাহ কেটে গেছে। কাশ্মীর এখনো দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন। টেলিফোন এবং ইন্টারনেট সেবা না থাকায় কাশ্মীরবাসী স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসতে পারছে না। টেলিফোন এবং ইন্টারনেট চালু হলে কিংবা কারফিউ, ১৪৪ ধারা উঠে গিয়ে কাশ্মীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে নাকি কাশ্মীরের জনগণ ৩৭০ ধারা বহাল রাখার জন্য প্রাণপাত আন্দোলন শুরু করবে সেটি দেখার জন্য আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের ফলে  ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তান ভারতের ওপর বেশ নাখোশ হয়ে ওঠেছে। পাকিস্তান-ভারতের কাশ্মীর সীমান্ত এখন তেঁতে আছে। গণমাধ্যমের খবরে জানতে পারি ভারত-পাকিস্তানের লাইন অব কন্ট্রোল জুড়ে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রতিদিন গুলি বিনিময় চলছে। গুলি বিনিময়ে দুই দেশের সীমান্তের সৈন্য মারা পড়ছে কি না জানি না তবে সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা আলোচনায় এলে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে কী এই ৩৭০ ধারা। একটি স্বাধীন দেশ ভারতের অঙ্গরাজ্য কাশ্মীর কেন আর একটি স্বাধীন দেশের মতো আলাদা পতাকার অধিকারী হবে? কেন ভারতের কাশ্মীর রাজ্য ভারতের ফেডারেল ব্যবস্থার আওতায় থেকে আলাদা আর একটি সংবিধানের মালিক হবে? কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া সত্তে¡ও ভারতের অন্য রাজ্যের মানুষ আইনি বাধার মুখে কাশ্মীরে এক খন্ড জমি কিনতে পারবে না কেন? কাশ্মীরে জমি কেনা-বেচার কড়াকড়ি থাকার কারণে এ রাজ্যে গত ৭০ বছরে শিল্পায়ন হয়নি। সব দিক বিবেচনা করে যে কোনো বুদ্ধিমান মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে, ৩৭০ ধারা কাশ্মীরবাসীর জন্য আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ? ১৯৪৮ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার শুধু কাশ্মীরিদের জন্য সংবিধানে ৩৭০ ধারা যুক্ত করে কাশ্মীরবাসীকে কী এমন সুবিধা দিতে চেয়েছিল সেই প্রশ্নের জবাব পাওয়ার জন্য আমাদের কাশ্মীরের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাতে হবে। কাশ্মীরের জনগোষ্ঠীর বড় অংশ মুসলমান হলেও হিন্দু, শিখ এবং বৌদ্ধরাও বংশপরম্পরায় কাশ্মীরে বসবাস করে আসছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার সময় ভারত দুই ভাগ হয়ে পাকিস্তান এবং ভারত দুই রাষ্ট্রের জন্ম। সেই সময় কাশ্মীরসহ ভারতে ৫৬০টি ছোট ছোট রাজ্য রাজা-মহারাজা-নওয়াবদের শাসনে ছিল। ব্রিটিশ শাসকদের অধীনে এসব প্রিন্সলি স্টেট সীমিত স্বাধীনতা ভোগ করত। কাশ্মীর ছিল মহারাজা হরি সিংয়ের রাজ্য। কৌত‚হলী পাঠক জওয়াহের লাল নেহেরুর আত্মজীবনী পড়লে কাশ্মীরের রাজা হরি সিংয়ের স্বভাব খাসলত সম্পর্কে বেশ মজাদার তথ্য জানতে পারবেন। ১৯৪৭ সালে রাজামহারাজা শাসিত অন্যান্য রাজ্য অবস্থান অনুযায়ী ভারত কিংবা পাকিস্তানের সঙ্গে মিশে গেছে। মহারাজা হরি সিং তার কাশ্মীর রাজ্যকে স্বাধীন দেশ হিসেবে রেখে দেওয়ার আব্দার করলে ভারত তাতে বাগড়া দেয়নি। কাজেই কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিংয়ের ইচ্ছা অনুযায়ী কাশ্মীর স্বাধীন দেশ হিসেবে রয়ে গিয়েছিল। দ্বিজাতিতত্তে¡র ভিত্তিতে ভারত ভাগ হলেও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য কাশ্মীর কেন ভারতের অংশ হলো সে প্রশ্নের জবাব মাওলানা আজাদ তার আত্মজীবনী ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম গ্রন্থে দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন, জওয়াহের লাল নেহেরুর পূর্বপুরুষের আবাস কাশ্মীর পাকিস্তানের অংশ হবে এটি কাশ্মীরী ব্রাহ্মণ পদ্ধতি জওয়াহের লাল নেহেরু ব্যক্তিগত আবেগের বশবর্তী হয়ে মেনে নিতে পারেননি। নেহেরুর ব্যক্তিগত আবেগ পূরণের জন্য হরি সিং সাহসী হয়ে বলেছিল আমি পাকিস্তান কিংবা ভারত কারও সঙ্গে না গিয়ে স্বাধীন থাকতে চাই। হরি সিং ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাস থেকে শুরু করে সে বছর অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত স্বাধীন ছিলেন। ১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসে পাকিস্তানের পশতুন মিলিশিয়া বাহিনী কাশ্মীর আক্রমণ করে বসল। সেই যুদ্ধের তান্ডবে মহারাজা হরি সিং দিশা না পেয়ে দিল্লিতে জওয়াহের লাল নেহেরুর কাছে সাহায্যের আবেদন করলেন। সাহায্যের আবেদনে নেহেরু সাড়া দিলেন তবে সেটি শর্তসাপেক্ষ। হরি সিং এবং নেহেরুর মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল সেটি ইন্সট্রুমেন্ট অব অ্যাক্সেসন টু ইন্ডিয়া। চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে কাশ্মীর ভারতের অঙ্গরাজ্য হয়ে গেল। হরি সিং-এর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির প্রতি সম্মান জানানোর জন্য ভারতের সংবিধানে ৩৭০ ধারা যোগ করা হলো। অর্থাৎ ভারতের সংবিধানে ৩৭০ ধারা কাশ্মীরের জনগণের স্বার্থে যুক্ত হয়নি। ৩৭০ ধারা ছিল কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিংয়ের আহত অহংবোধের গায়ে মলমের পরশ। কাজেই ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ার কারণে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এটা ভাবার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।

ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করার কারণে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমরান খান তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছেন। তিনি ধাঁই করে ভারতের সঙ্গে কুটনৈতিক সম্পর্ক কেটে দিলেন। ভারত পাকিস্তানের মধ্যে চলমান ব্যবসা-বাণিজ্য রহিত করেছেন। ভারত পাকিস্তানের মধ্যে চালু হওয়া ট্রেন যোগাযোগও বন্ধ করে দিয়েছেন। ইমরান খান মুজফফরাবাদে আজাদ কাশ্মীর (পাকিস্তান অধিকৃত) গণপরিষদে জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে বললেন, যতদিন কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হবে ততদিন তিনি দুনিয়াজুড়ে কাশ্মীরি জনগণের পক্ষে দূতিয়ালি করে ফিরবেন। ইমরান খানের এমন অদ্ভুত কথা শুনে মনে হচ্ছিল জম্মু, কাশ্মীর এবং লাদাখ ভারতের নয় বরং পাকিস্তানের অংশ এবং ইমরান খান ঐ অঞ্চলের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। ইমরান খানের হাস্যকর অতি উৎসাহ এবং অর্থহীন আবেগী কথাবার্তা আমরা হেসে উড়িয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু আমরা জানি পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং পাকিস্তান উভয়ই পারমাণবিক বোমার অধিকারী। অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের অধিকারী দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্তান উভয়ের রাজনীতি আদিম এবং মধ্যযুগীয় ধর্মীয় উন্মাদনায় ঠাসা। উভয় দেশের রাজনীতিবিদরা কে কত ধার্মিক তা জানি না তবে দুই দেশের রাজনীতি ধর্মকে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খাচ্ছে। পাকিস্তান চিরকালই আধা আধুনিক আধা তালেবান। এদিকে ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতায় উগ্র হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি। নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ-রাজনাথ সিং গং ধর্মান্ধতায় তালেবানিদের চেয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। মোদি গং গদিতে বসার পরে ভারতের মুসলমানরা স্বস্তিতে নেই। যেই শাসনব্যবস্থায় গরু খাওয়ার অপরাধে শত শত মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় এবং সেসব নরহত্যার কোনো বিচার হয় না সেই শাসনব্যবস্থাকে তালেবানি শাসনব্যবস্থার চেয়ে ভালো বলার সুযোগ নেই। তালেবানিরা আফগানিস্তানে প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তি ভেঙে চুরমার করে ভাবে তারা আদি ইসলাম কায়েম করেছে। ভারতে গত নির্বাচনের সময় হিন্দুত্ববাদী নেতা অমিত শাহ কলকাতায় এসে তালেবানি কায়দায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে ভারতে আদি হিন্দুত্ব কায়েমের মহড়া দিলেন। ভবিষ্যতে এরা সতীদাহ চালু করবে; বিধবা বিয়ে বন্ধ করে আদি হিন্দুত্বে ফিরে যাবে। রাজা রামমোহন রায়ের সতীদাহ রোধ কিংবা বিদ্যাসাগরের বিধবা বিয়ে চালু করাকে আদি হিন্দুত্বের বিনাশ বলে মনে করে। সেই কারণে অমিত শাহ কলকাতায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে উল্লাস করেছে। বর্তমানে যুদ্ধংদেহি দুই শত্রু ভারত-পাকিস্তান ধর্মান্ধদের শাসনে আছে বলে আমি দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যাওয়া নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি। কাশ্মীর সমস্যাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি আমাদের সবার জন্য মরণঘাতী। আশা করি নরেন্দ্র মোদি এবং ইমরান খান দুজন রাজনীতিক হিসেবে নয় বরং মানুষ হিসেবে সভ্যতার সংকট অনুধাবন করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।

লেখক : কথাসাহিত্যিক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর