সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

হালাল জীবিকা উপার্জন ইবাদত

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

হালাল জীবিকা উপার্জন ইবাদত

জীবিকার প্রয়োজনে অর্থ উপার্জন মানবজীবনের জন্য অপরিহার্য। বেকার জীবন অভিশপ্ত। হাত পা গুটিয়ে থাকা পাপ। যেনতেন প্রকারে এবং যাচাই-বাছাই ছাড়া অর্থ উপার্জন দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনকে কলুষিত করে দেয়। কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী জীবিকার জন্য শ্রম দেওয়া ও প্রয়াস অব্যাহত রাখা জরুরি। নিজের হাতের কামাই সর্বোত্তম। প্রতিটি নবী-রসুল নিজের হাতে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসারের ব্যয়ভার নির্বাহ করতেন। হারাম ও মাকরুহ (সন্দেহযুক্ত) জীবিকা বর্জন করা মুমিনের কর্তব্য। মহান আল্লাহ রিজিকের মালিক। তিনি পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীকে রিজিক দিয়ে থাকেন। রিজিক অন্বেষণে ব্রতী হওয়া আল্লাহর হুকুম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নামাজ শেষ হয়ে গেলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) তালাশ কর। তোমরা আল্লাহর কাছে রিজিক কামনা কর, তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর (সূরা জুমুআ, ৬২:১০; সূরা আনকাবুত, ২৯:১৭)।

উপার্জন বৈধ ও হালালপন্থায় হওয়া সামাজিক শৃঙ্খলা, পারিবারিক শুদ্ধাচার,পরিচ্ছন্ন ও উন্নতজীবনের জন্য অপরিহার্য পূর্বশর্ত। মহানবী (সা.) এটাকে ফরজ আখ্যা দিয়েছেন। ইমান, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত প্রথম স্তরের ফরজ। দ্বিতীয় স্তরের ফরজ হলো হালাল জীবিকা উপার্জন। তিনি বলেন, ‘হালাল জীবিকার সন্ধান করা অন্যান্য ফরজের সঙ্গে আরেকটি ফরজ’ (মিশকাত)।

বৈধ ও শরিয়ত অনুমোদিত পন্থায় শ্রম বিনিয়োগ করে অর্থ উপার্জন সওয়াবের কাজ। পরিশ্রমজনিত প্রতিটি ঘর্মবিন্দুতে পাপ মোচন হয়ে যায়। অবৈধ ও হারাম উপার্জনকারীর দোয়া আল্লাহতায়ালার দরবারে কবুল হয় না। মহানবী (সা.) ভিক্ষাবৃত্তি পরিহার করে পরিশ্রম করে রুজি জোগাড় করার শিক্ষা দিয়েছেন সাহাবিদের। আমাদের মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর প্রতিটি কাজের জন্য আল্লাহতায়ালার দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি প্রতিটি মুহূর্তে বান্দার কর্মপ্রয়াস মনিটর করছেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে দেহ হারাম দ্বারা প্রতিপালিত হয়, ওটা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। হারাম মাল দ্বারা গঠিত দেহ জাহান্নামের উপযুক্ত’ (মিশকাত)। হারাম উপায়ে অর্জিত অর্থ দান-খয়রাত করলে সওয়াব পাওয়া যায় না, নিজের জন্য ব্যয় করলে বরকত হয় না এবং উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেলে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মহানবী (সা.)-এর ভাষ্যানুযায়ী এমন এক যুগ আসবে, মানুষ পরোয়া করবে না-কী উপায়ে মাল লাভ করল; হালাল পথে না হারাম পথে। শরিয়তের নীতিমালার আলোকে যদি কেউ অর্থ উপার্জন করে তা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে।

লেখক : সাবেক অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ওমর গণি এমইএস ডিগ্রি কলেজ, চট্টগ্রাম; খতিব, হজরত ওসমান (রা.) জামে মসজিদ, হালিশহর এ ব্লক, চট্টগ্রাম।

সর্বশেষ খবর