বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

তেনজিংয়ের দেশ দার্জিলিং দর্শন

আতাউর রহমান

তেনজিংয়ের দেশ দার্জিলিং দর্শন

চাকরিজীবনে একদা কোনো এক রৌদ্রকরোজ্জ্বল প্রভাতে স্বদেশের সীমান্তবর্তী তেঁতুলিয়ায় সার্কিট হাউসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রতিবেশী দেশের শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং অভিমুখী ‘টয় ট্রেন’ পাহাড়ের বুক চিরে আঁকাবাঁকা পথে এগোতে দেখে সেই ট্রেনে চড়ে দার্জিলিং যাওয়ার জন্য মনের মধ্যে যে উদগ্র বাসনা জন্মেছিল সেটারই সফল পরিসমাপ্তি ঘটল চাকরি-উত্তর বর্তমান শতাব্দীর প্রথম দশকে সস্ত্রীক দার্জিলিং ভ্রমণের মাধ্যমে। আর নিমন্ত্রণপত্রে সস্ত্রীক শব্দটি লিখতে অনেক সময় অনেকে দন্ত্যস’র সঙ্গে ব-ফলা লাগিয়ে লিখেন ‘স্বস্ত্রীক’; কারণ তারা নাকি এই বার্তা পৌঁছে দিতে চান যে, আজকাল অনেকে অন্যের স্ত্রীকে নিজের স্ত্রী বানিয়ে অনুষ্ঠানে নিয়ে আসেন; সেটা করা চলবে না, সঙ্গে আনতে হলে নিজের স্ত্রীকেই আনতে হবে।

সে যা হোক, শুরুতেই সংক্ষেপে দার্জিলিংয়ের খানিকটা পরিচিতি দেওয়া যাক।

‘কুইন অব হিলস’ অভিধায় অভিহিত ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে অবস্থিত দার্জিলিং হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ শৈলাবাস। আর দার্জিলিং নামটি এসেছে তিব্বতি শব্দ ‘দর্জি’ ও ‘লিং’ থেকে। দর্জি হচ্ছে হিন্দুদের রাজদেবতা ইন্দ্রের ‘বজ্রদ-’ আর লিং হচ্ছে ‘স্থান’ অর্থাৎ ‘দার্জিলিং’ মানে হচ্ছে বজ্রদন্ডের স্থান। ওখানকার মূল অধিবাসীরা হচ্ছেন মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত পাহাড়ি গোর্খা সম্প্রদায়ভুক্ত; আর কিছু আছেন শেরপা, যারা পর্বতে আরোহণের জন্য বিখ্যাত। আশ্চর্যের কিছুই নয় যে, প্রথম এভারেস্ট-বিজয়ী নিউজিল্যান্ডের স্যার এডমন্ড হিলারির গাইড ও সাথী শেরপা তেনজিং ছিলেন আমৃত্যু দার্জিলিংয়েরই অধিবাসী। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাত সহস্র ফুট উচ্চতায় অবস্থিত দার্জিলিংয়ে গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দাঁড়ায় পনেরো ডিগ্রি সেলসিয়াসে এবং শীতকালে সেটা হিমাঙ্কের নিচে চলে যায়; আর তাই দার্জিলিং সফরের সর্বোৎকৃষ্ট সময় হচ্ছে মার্চ থেকে জুনের মাঝামাঝি ও সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। ওই সময়টায় বৈচিত্র্যপ্রেমী পর্যটকরা যেমন গ্রীষ্মে সমতলের গুমোট ও দূষিত আবহাওয়া থেকে সাময়িক পরিত্রাণ পাওয়ার লক্ষ্যে দার্জিলিংয়ে ছুটে যান, তেমনিভাবে নিসর্গবিদ ও আলোকচিত্রশিল্পীরা ছোটেন নৈসর্গিক শোভা অবলোকন এবং সেটাকে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দী করার অভিপ্রায়ে।

তো আমাদের যাত্রার আগে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন থেকে পাসপোর্ট ভিসা লাগানো, তৎপূর্বে প্রতি পাসপোর্টে অন্তত শদেড়েক ডলার এনডোর্সকরণ, সোনালী ব্যাংকে ট্রাভেল-ট্যাক্স প্রদান, মুদ্রা-বিনিময়ের দোকান থেকে কিছু ডলার সংগ্রহকরণ ইত্যাদি ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতেই হলো। অতঃপর আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের ভাষায় প্রৌঢ়-প্রৌঢ়ার বিলম্বিত হানিমুনে বেরিয়ে পড়া গেল। সড়কপথে রাজশাহী হয়ে স্বদেশের সীমান্ত-চৌকি বুড়িমারীতে যতক্ষণে পৌঁছলাম, ততক্ষণে সুয্যিমামা পশ্চিম গগনে অনেকটা হেলে পড়েছেন। সীমান্তের অন্য প্রান্তে অবস্থিত ভারতের সীমান্ত-চৌকি চ্যাংড়াবান্দা, মধ্যিখানে গজ পাঁচেক প্রশস্ত নো-ম্যানস-ল্যান্ড। সীমান্তের উভয় প্রান্তেই প্রচলিত যৎসামান্য দস্তুরির বিনিময়ে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের বেড়াজাল ছিন্ন করা গেল। মজার ব্যাপার হলো, সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ‘ভাই’ সম্বোধন হয়ে গেল ‘দাদা’, ‘আপা’ ও ‘ভাবী’ হয়ে গেল যথাক্রমে ‘দিদি’ ও ‘বৌদি’ আর পানি হয়ে গেল জল। তবে যে যাই বলুক না কেন, ‘পানিপথ’ প্রান্তরের নাম পানিপথই আর ‘জলবায়ু’ শব্দটিও জলবায়ুই চিরকাল থাকবে; ওগুলো ‘জলপথ’ ও পানিবায়ু’ হয়ে যাবে না।

সে যাকগে। চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত-ফাঁড়ি থেকে সাইকেল-ভ্যানে করে অদূরবর্তী ‘বাইপাস’ নামক স্থানে গিয়ে বাসে দেড় ঘণ্টার জার্নিতে সন্ধ্যানাগাদ শিলিগুড়ির মসজিদের মোড় পৌঁছে মধ্যম মানের একটি হোটেলে রাতযাপন করা গেল। আর এই ‘মোড়’ শব্দটা মনে হলো শিলিগুড়িতে খুব প্রচলিত শহরের কোনো স্থাপনার অবস্থান বুঝতে গিয়ে রাস্তার পরিবর্তে ‘অমুক মোড়’ কথাটাই অধিক ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রাতে টুকটাক বাজার করতে গিয়ে এক জায়গায় খোলা আকাশের নিচে খাবার তৈরির এক দোকানে দীর্ঘ লাইন প্রত্যক্ষ করে কৌতূহলবশত লাইনে দাঁড়িয়ে পাও-ভাজির সুস্বাদটি আস্বাদন করা হলো। পরদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্রষ্টার হক আদায় করে হাঁটতে বেরিয়ে সামান্য এগোতেই সামনে পড়ল শহরের রেলস্টেশন ও প্রধান বাস-টার্মিনালের মধ্যে সংযোগকারী মহানন্দা নদীর ওপরে নির্মিত বিরাটকায় ব্রিজ এবং ব্রিজ অতিক্রমকালে নদীটির দুই তীরে ও মধ্যিখানে জেগে ওঠা চড়ায় বহু লোককে লাইন ধরে মহানন্দে প্রাতঃকৃত্য সম্পাদন করতে দেখে নদীটির নামকরণের সার্থকতাও খুঁজে পাওয়া গেল। আর ভোরবেলাকার বিরল পথচারীদের দু-এক জনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল যে, শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত যেতে জিপে শেয়ারে মাত্র তিন ঘণ্টার জার্নি, কিন্তু টয় ট্রেনের জার্নি সত্যিকারের উপভোগ্য বিধায় তাৎক্ষণিক টিকিট পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার।

তা সে যাত্রায় ভাগ্য আমাদের সঙ্গী ছিল। তাই সকালে হোটেল ছেড়ে স্টেশনে পৌঁছে প্রথমে হতাশ ও পরে বুকিং ক্লার্কের মহানুভবতায় আরেকজনের ক্যানসেল করা টয় ট্রেনের দুটো ফার্স্টক্লাস টিকিট তার স্বদেশিদের বাদ দিয়ে আমাদের দেওয়ায় তাকে ধন্যবাদ জানালাম এবং মনে মনে স্রষ্টার শুকরিয়াও আদায় করলাম। এ স্থলে টয় ট্রেনের বিষয়ে খানিকটা বলতে হয়। এটাকে ‘টয় ট্রেন’ তথা খেলনা রেলগাড়ি বলা হয় বোধকরি এ কারণে যে, এটাতে সংযোজিত ছোট্ট ইঞ্জিনটি মাত্র এক গজ প্রশস্ত রেললাইনের ওপর দিয়ে ছোট ছোট তিনটি বগি শ্লথগতিতে টেনে নিয়ে যায়। প্রায় ১০০ বছরের প্রাচীন এই রেলব্যবস্থাকে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ারিং কলাকৌশল বলে পরিগণিত করা হয়ে থাকে এবং ইউনেস্কো থেকেও এটাকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’-এর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে এবং এই মন্থর গতিই হচ্ছে ট্রেনটার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। গতির কারণেই দুই পাশের মনোরম দৃশ্যকে মন ভরে উপভোগ করা যায়, যেটা জিপ বা বাসে জার্নির বেলায় সম্ভব হয় না। তবে টয় ট্রেনের এই শম্বুকগতি লক্ষ্য করে আমাদের দেশে ট্রেনের ধীরগতিসংক্রান্ত সেই মুখরোচক গল্পটি আমার মনে পড়ে গিয়েছিল। একদা বাংলাদেশ রেলওয়ের এক স্টেশনমাস্টার তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন, স্যার, আরও একজন কৃষক অভিযোগ করেছে যে আমাদের লোকাল ট্রেনগুলো এতটাই শ্লথগতিতে যায় যে যাত্রীরা ট্রেনের জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে রেললাইনের ধারে চারণরত তার গাভীদের দুধ দুয়ে নিচ্ছে।

টয় ট্রেনে কিংবা বাসে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার। মধ্যখানে ৪-৫টি স্টেশন বর্তমান, যেগুলোর মধ্যে দার্জিলিং থেকে ৩০ কিলোমিটার আগে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কার্সিয়াং স্টেশন ও তৎসংলগ্ন শহর অনেকটা বিখ্যাত। এ জায়গার শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ ও স্বাস্থ্যকর আবহাওয়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বরেণ্য ব্যক্তিকে টেনেছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার অনেক বিখ্যাত গান ও কবিতা নাকি ওখানে বসে লিখেছেন। এমনকি বলা হয়ে থাকে যে, আমাদের রম্যসাহিত্যিকদের অগ্রদূত মার্ক টোয়েনও ১৮৮৫ সালে কার্সিয়াংয়ে বেশ কিছুদিন অবস্থান করে গেছেন। তা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত শিলিগুড়ি থেকে সকাল ৮টায় রওনা দিয়ে টয় ট্রেন পাহাড়ের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আঁকাবাঁকা পথে ৭ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত দার্জিলিংয়ে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পৌঁছা গেল। পথিমধ্যস্থ চায়ের বাগান, পাহাড়ি বনাঞ্চল, ছোট ছোট পাহাড়ি নদী ও ঝরনাধারা, বিরাট বিরাট প্রস্তরখ-, পাহাড়ি বাড়িঘর, দীর্ঘকায় বৃক্ষরাজি, রোডেনড্রন-ম্যাগনেলিয়া-গ্ল্যাডিওলাস-টাইগার লিলি- গোলাপ, ডালিয়া ইত্যাদি ফুলের সমারোহ, নানান কিসিমের ফ্লোরা ও ফোনা এসব দেখতে দেখতে সময় যে কখন ফুরিয়ে গেল টেরই পাওয়া গেল না। স্বভাবতই সৃষ্টির মহিমা দেখলে বিশ্বস্রষ্টার প্রতি মস্তক আপনাআপনিই নত হয়ে আসে।

ট্রেন দার্জিলিং রেলস্টেশনে পৌঁছাতেই নেপালি চেহারার একজন, যাকে হোটেল মালিক পরে পারিতোষিক দিলেন, এগিয়ে এলো এবং সে-ই আমাদের নিকটবর্তী ও দার্জিলিংয়ের প্রাণকেন্দ্র দ্য মল-সংলগ্ন একটি হোটেলে নিয়ে তুলল। হোটেলটির ভাড়া, আমার বিবেচনায় ছিল যথেষ্ট যুক্তিসংগত, তন্মধ্যে আবার দুবেলা খাবার ও সকালের নাশতা অন্তর্ভুক্ত। দার্জিলিংয়ের হোটেলগুলোয় এটাই নাকি নিয়ম। শহরটা পাহাড়ের পাদদেশে স্তরে স্তরে সাজানো এবং পাহাড়ে চলাফেরা করায় অনভ্যস্ত পর্যটকদের সুবিধার্থেই বোধকরি এরূপ নিয়ম প্রচলিত হয়েছে; নতুবা দুনিয়ার সর্বত্র সচরাচর বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্টই থাকে ভাড়ার অন্তর্ভুক্ত। তা রাতে হোটেলের ডাইনিং রুমে ডিনার খেতে গিয়ে আমার মনে পড়ে গিয়েছিল শিবরাম চক্রবর্তী সৃষ্ট হাসির চরিত্র দুই ভাই হর্ষবর্ধন ও গোবর্ধনের গল্প : হর্ষবর্ধন ও গোবর্ধন একটি হোটেলে দুই বেলা পেটচুক্তি খাবার খায়, জনপ্রতি হার ৫ টাকা। তাদের খাওয়ার পরিমাণ দেখে কিছুদিন পর হোটেলের ম্যানেজার বললেন, তোমাদের বেলায় ৫ টাকায় কুলোচ্ছে না, আগামীকাল থেকে জনপ্রতি ১০ টাকা করে দিতে হবে। এটা শুনে দুই ভাই হাতজোড় করে নিবেদন করল, ‘দোহাই কর্তা, এ কাজটা করবেন না। ৫ টাকা উশুল করতেই আমাদের প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে; ১০ টাকা উশুল করতে হলে আমরা আর প্রাণে বাঁচব না’ হা-হা-হা!

যা হোক, পরদিন সকালে বাড়তি কিছু অর্থের বিনিময়ে আমাদের অন্য আরও অনেকের সঙ্গে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হলো দুটো দর্শনীয় স্থানে-  একটির নাম রক গার্ডেন ও অন্যটি গঙ্গামায়া পার্ক। সেগুলোতে প্রাকৃতিক প্রস্রবন প্রবাহিত ও চতুষ্পার্শ্বে নৈসর্গিক শোভামন্ডিত অপরূপ দৃশ্য। এটা উপলব্ধির ব্যাপার, বর্ণনার নয়। সত্যি বলতে কি, দুনিয়ার বহু দর্শনীয় স্থান সফর করেছি, একাত্তরে পাকিস্তানের শৈল-শহর মারিতেও গিয়েছি; কিন্তু এত সুন্দর দৃশ্য আর কোথাও আমার নজরে পড়েনি। নিজেকে নির্মল আনন্দদানের প্রায় সব প্রাকৃতিক উপাদানই স্থানগুলোয় আছে, সেই সঙ্গে যোগ দেওয়া হয়েছে মনুষ্যসৃষ্ট কিছু বাড়তি উপকরণ, যেমন কৃত্রিম কূজন ও পর্যটক দম্পতিকে রাজা-রানীর পোশাক পরিয়ে মুহূর্তটিকে আলোকচিত্রে ধারণ। পবিত্র ধর্মগ্রন্থে আছে, মানুষ হচ্ছে পৃথিবীর স্রষ্টার খলিফা তথা প্রতিনিধি, আর প্রতিনিধির কাজই হচ্ছে ক্ষেত্রবিশেষে তার প্রভুর অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্তকরণ কিংবা সৌন্দর্যকে বর্ধিতকরণ।

সেদিন সন্ধ্যায় আমরা জনাকীর্ণ দ্য মল থেকে কিছু ‘গিফট’ ও সেখানকার একটি বুকশপ থেকে দুটি মূল্যবান হিউমারের বই কিনে নিয়ে এলাম। রাত সাড়ে ৩টায় যেতে হবে টাইগার হিলে সূর্যোদয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার বরফাচ্ছাদিত শৃঙ্গ দেখতে। কেয়ামতের সুস্পষ্ট নিদর্শন নাকি হবে এই যে, সূর্য পুবদিকের পরিবর্তে পশ্চিম দিক হতে উদিত হবে। সৌভাগ্যবশত সেদিন সূর্য যথারীতি পুব দিক থেকে উদিত হয়েছিল এবং টাইগার হিলে লাল টুকটুকে সূর্য যথাসময়ে আবির্ভূত হলে পর দূরে কাঞ্চনজঙ্ঘার তুষারাবৃত গিরিশৃঙ্গ যে অপরূপ মনোরম শোভা ধারণ করেছিল, সেটা বর্ণনার ভাষা আমার নেই, তবে আজ পর্যন্ত মনের মণিকোঠায় সে দৃশ্য বহন করে চলেছি।

টাইগার হিল থেকে ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়েই আমরা হোটেল থেকে চেক আউট করে ফেললাম। অতঃপর বেরিয়ে নিচে নামতেই শিলিগুড়ির জন্য শেয়ারের জিপ গাড়ি পাওয়া গেল। সেই গাড়িতে চরে মাত্র ৩ ঘণ্টায় শিলিগুড়ি পৌঁছে গেলাম। ফেরার পথে রাস্তায় তেমন কিছুই নজরে পড়েনি; শুধু দুই জায়গায় দুটো মজার বিলবোর্ডে নজর আটকে গেল, যেগুলোর একটিতে লেখা ছিল-  Be slower on earth than faster to eternity   (অতি বেগে গাড়ি চালিয়ে অনন্তের দিকে তাড়াতাড়ি যাওয়ার চেয়ে দুনিয়ায় আস্তে যান) এবং অন্যটিতে লেখা ছিল-  Traffic rules are absurd. If you go to the left, they say you are right. ইংরেজি right শব্দটির দুটো অর্থ ‘ডান দিক’ ও ‘সঠিক’। স্পষ্টতই এখানে শব্দটিকে দ্বিবিধ অর্থে ব্যবহার করে হিউমার করা হয়েছে।

শিলিগুড়িতে পৌঁছার ৩ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা নিজেদের আবিষ্কার করলাম স্বদেশের মাটিতে। হোম, সুইট হোম! নাথিং ইজ লাইক হোম!!

 

লেখক : রম্যসাহিত্যিক।

ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক।

সর্বশেষ খবর