শিরোনাম
শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

হিজরি সন ও মহররমের তাৎপর্য

মাওলানা মুহম্মাদ জিয়াউদ্দিন

হিজরি ১৪৪১ সন শুরু হয়েছে। হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। একে ইবাদতের মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ যেদিন থেকে হিজরি সনের সূচনা বলে ধরা হয় তার ১৬ বছর পর প্রকৃত অর্থে এ সন চালু হয়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময়কে মনে রেখে এ সনকে হিজরি সন বলে নামকরণ করা হয়। দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে ১৬ হিজরিতে প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) ইরাকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ওমর (রা.)-এর কাছে পত্র লিখে অভিহিত করেন, ‘আপনার পক্ষ থেকে পরামর্শ কিংবা নির্দেশসংবলিত যেসব চিঠি আমাদের কাছে পৌঁছে তাতে দিন, মাস, কাল, তারিখ ইত্যাদি না থাকায় কোন চিঠি কোন দিনের তা নিরূপণ করা আমাদের জন্য সম্ভব হয় না। এর ফলে আপনার নির্দেশ বাস্তবায়নে সমস্যা হয়। অনেক সময় আমরা চিঠির ধারাবাহিকতা না পেয়ে বিব্রতবোধ করি।’ ওই চিঠি পেয়ে হজরত ওমর (রা.) এ বিষয়ে পরামর্শসভার আহ্বান করেন এবং কীভাবে একটি ইসলামী তারিখ প্রবর্তন করা যায় সে বিষয়ে বিশিষ্ট সাহাবা ও জ্ঞানীগুণীদের পরামর্শ চান। পরামর্শসভায় হজরত ওসমান (রা.), হজরত আলী (রা.)সহ বিশিষ্ট সাহাবিরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের পরামর্শ ও মতামতের ভিত্তিতে হজরত ওমর (রা.) ইসলামী সন প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। তবে কোন মাস থেকে ইসলামী পঞ্জিকার সূচনা করা হবে তা নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি হয়। কেউ মত পোষণ করেন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম মাস রবিউল আওয়াল থেকে বর্ষ শুরু করার। কেউ কেউ মত দেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের মাস থেকে বর্ষ শুরু করা যায়। অন্যদের মতে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের মাস থেকে বর্ষ গণনা করা হোক। এভাবে বিভিন্ন মত আলোচিত হওয়ার পর হজরত ওমর (রা.) হিজরতের বছরকে ইসলামী সনের সূচনা বছর হিসেবে ধরে ওই বছরের মহররম থেকে নতুন হিজরি পঞ্জিকা চালুর সিদ্ধান্ত নেন। হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম একটি বরকতময় মাস। মানব ইতিহাসে এ মাসটি বিভিন্ন কারণে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। কোরআনে এ মাসটিকে ‘শাহরুল্লাহ’ তথা আল্লাহর মাস বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে; যা এ মাসকে মহিমান্বিত করেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘চারটি মাস রয়েছে যেগুলো সম্মানিত। তার অন্যতম একটি হলো মহররম।’ সূরা তাওবা, আয়াত ৩৬।

মহিমান্বিত মহররমেই রয়েছে ফজিলতপূর্ণ ‘আশুরা’। হিজরি সন প্রবর্তনের বেশ পরে মহররমের দশম তারিখে ঐতিহাসিক ‘কারবালা’ সংঘটিত হয়েছিল। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই দিন (আশুরার) ও এই মাসে রমজানের রোজার চেয়ে অন্য কোনো রোজাকে এত গুরুত্ব দিতে দেখিনি।’ মিশকাত।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমার বিশ্বাস, আশুরার রোজার বিনিময়ে আল্লাহ বিগত এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ তিরমিজি। সোজা কথায়, হিজরি সনের প্রথম মাস মহররমের ধর্মীয় তাৎপর্যও তুলনাহীন। আল্লাহ আমাদের আশুরায় রোজা পালনসহ এ মাসে ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর