মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটে স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি অবশেষে তাদের বিজ্ঞোচিত তদন্ত রিপোর্ট পেশ করেছে। পর্বতের এই মূষিকপ্রসবে যেমনটি ভাবা হয়েছিল তেমন রিপোর্টই এসেছে তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে। তদন্ত কমিটির মহামহিমরা তিতাস হত্যায় যুগ্ম সচিব মহোদয়ের কোনো দায় খুঁজে পাননি। দায়মুক্তি পেয়েছেন মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মহোদয়ও। তবে যেমনটি ভাবা হয়েছিল দুই ভিআইপির টিকিটি ছোঁয়া না হলেও তদন্তের চিরন্তন নিয়ম রক্ষা করে যত দোষ নন্দ ঘোষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিতাসের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী তিন কর্মকর্তা-কর্মচারী হলেন ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম হোসেন, ঘাটের প্রান্তিক সহকারী খোকন মিয়া এবং উচ্চমান সহকারী ফিরোজ আলম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর ফেরি ছাড়ায় তিতাসের মৃত্যু হওয়ার পেছনে এই তিনজন দায় এড়াতে পারেন না। কমিটি এ ধরনের ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি রোধে সাত দফা সুপারিশ করার কৃতিত্বও দেখিয়েছে। সুপারিশগুলোর মধ্যে আছে ঘাট থেকে ফেরি ছাড়া ও পৌঁছানোর সময় মাস্টারকে অবশ্যই স্থায়ী লগবুক বা রেজিস্টারে সময় লিখে সই করতে হবে। ফেরিঘাটে ফেরির র্যাম্প উঠিয়ে কোনো ব্যক্তির জন্য কোনোভাবেই অপেক্ষা করা যাবে না। নীতিমালা অনুযায়ী ভিআইপি সুবিধা চেয়ে কেউ ফেরি পারাপার হতে চাইলে তাকে অবশ্যই তার সরকারি ভ্রমণ বিবরণী আগে থেকেই ফেরি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হবে। তবে জরুরি প্রয়োজনে আগে যোগাযোগসাপেক্ষে ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এ নিয়ম শিথিল করা যেতে পারে। অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স বা গাড়িকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ফেরি পারাপারের ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিটি ঘাট ও ফেরিতে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে গাড়ি ও ফেরি পারাপারের বিষয় পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ফেরিঘাট ও ফেরিতে কর্মরত সবার নাম ট্যাগসহ নির্দিষ্ট পোশাক পরতে হবে। ফেরিঘাট ও ফেরিতে জরুরি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোবাইল ফোন নম্বর প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। তিতাসের মৃত্যুর ঘটনার পর দেশের উচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কাউকে ভিআইপির মর্যাদা দেওয়া যাবে না। ভবিষ্যতে ভিআইপি নামক মহামহিমদের কারণে তিতাসের মতো অসহায়দের জীবনহানি হলে সংশ্লিষ্টদের দায়মুক্তির ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটির রিপোর্টটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে এমন আশাই করা যায়। যারা নিজেদের সর্বোচ্চ মেধা খাটিয়ে এমন একটি ‘বাহ! বেশ বেশ’ জাতীয় প্রতিবেদন পেশ করেছেন তারা সমীহ পাওয়ার দাবিদার।