রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কারবালা স্মরণে

মওলানা রকিব উদ্দিন

কারবালা স্মরণে

মহররম মাসের ১০ তারিখ ইসলামী ইতিহাসে ‘এওমে আশুরা’ নামে পরিচিত। হজরত আদম (আ.) এর যুগ থেকে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে এ আশুরা। মহান আল্লাহ পাকের বিধান ও হুজুর পাক (সা.)-এর আদর্শ সমুন্নত রাখতে তাঁরই দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) ৬১ হিজরিতে কারবালার ময়দানে শাহাদাতবরণ করেন। সত্যের পক্ষে, মিথ্যার বিরুদ্ধে আওলাদে রসুলের এ আত্মত্যাগ মুসলিমদের কাছে ‘এওমে আশুরা’-কে করে তুলেছে আরও বেশি স্মরণীয় ও বরণীয়।

একটু পিছনের দিকে তাকালে বোঝা যায়, মক্কার  লোকেরা প্রিয় নবী হুজুর পাক (সা.)-এর সঙ্গে আদর্শগত দ্বন্দ্ব ছিল না ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ তিনি তাদের আল্লাহর একাত্মবাদের দিকে এবং সত্য ধর্ম ইসলামের দিকে আহ্বান করেননি। আদর করে যারা ‘আল-আমিন ডাকত, তারাই নবুয়তি দাওয়াত পেয়ে নবীজির প্রতি এতই বিরূপ, নিষ্ঠুর ব্যবহার করল শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নির্দেশে প্রিয় জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যায় প্রিয় নবীর আহাল, সাহাবিসহ যুগে যুগে কালে কালে কেয়ামত পর্যন্ত নবীর আওলাদে পাক ও প্রকৃত অনুসারীদের মাঝে। নবুয়তের প্রতিচ্ছবি বেলায়ত প্রতিষ্ঠায় অলিয়ে কেরাম, কাগতিয়া আলিয়া গাউছুল আজম দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা আওলাদে মোস্তাফা, খলিফায়ে রসুল, হজরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম (রা.) সেই দ্বন্দ্ব কলহ-কণ্টকময় প্রতিকূলতা পেরিয়ে নূর নবীজির বাতেনি নূর ও ফয়েজে কোরআন পথহারা যুবকদের কাছে পৌঁছানোর সুকঠিন দায়িত্ব পালন করে গেছেন। দরবার শরিফে এই ধারাবাহিকতা বর্তমানে অব্যাহত রয়েছে তারই একমাত্র খলিফা মোর্শেদে আজম (ম.জি.আ.) এর মাধ্যমে। এ মনীষীর প্রবর্তিত মুনিরীয়া তরিকতে রয়েছে আহলে বায়াত এর ওপর দৈনিক ১২৫ বার দরুদ পাঠ। তাছাড়া এই তরিকতের অনুসারীদের ১১১১ বার দরুদ শরিফ পাঠ অবশ্য করণীয়। এভাবে মানুষ নবী প্রেমের সুধা লাভ করে। প্রকৃত নবী প্রেমের মাধ্যমেই দেশ, রাষ্ট্র, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। হিজরি ৬১ সনে কারবালা নামক স্থানে যে বিখ্যাত ঘটনার সংঘটন; তা মূলত আদর্শিক। অর্থগত বা পেশাগত নয়, স্বেচ্ছাচারী, স্বৈরাচারী জালেম এজিদ প্রচন্ড লোভ, হীন মানসিকতার অধিকারী। অপরদিকে হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ছিলেন ধর্মপরায়ণ, ন্যায়নিষ্ঠ, সৎ, বিনয়ী ও মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী। ইরাকের কুফাবাসীদের কাছ থেকে তথা মজলুম জনতার পক্ষ থেকে আহ্বান, আবেদন আসে সহায়তার। তাই বিশ্ববাসীর মুক্তির দূত প্রিয় নবীর আওলাদ ইমাম হোসাইন (রা.) মানবতার কল্যাণে, ন্যায় প্রতিষ্ঠায় এবং নির্যাতিত মানুষের মুক্তির জন্য মদিনা থেকে কুফা অভিমুখে রওনা দেন। পথিমধ্যে ফোরাত তীরে কারবালা নামক স্থানে ইয়াজিদ বাহিনীর সঙ্গে ন্যায়ের পক্ষে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে মোকাবিলায় লিপ্ত হন। হজরত ইমাম হোসাইনের সঙ্গে থাকা ছেলেমেয়েসহ পরিবারের সদস্যবৃন্দ, ৪২ জন পদাতিক এবং ৩২ জন আরোহীর ক্ষুদ্র একটি দল যাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে ৪ হাজার সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে। প্রস্তাবও এলো আপসের, কিন্তু অন্যায় ও অসত্যের সঙ্গে আপসের প্রশ্ন তো নয় বরং দ্বিখন্ডিত মস্তকে তিনি শহীদ হন সপরিবার-সদলবলে। কুফাবাসী বিশ্বাসঘাতকতা করল ইমাম হোসেনের সঙ্গে। একদিকে আদর্শের যুদ্ধে আপসহীন ইমাম হোসাইন (রা.) এজিদের সঙ্গে বিনা আপসে প্রাণ বিলিয়ে দেন। অন্যদিকে বিশ্বাসঘাতক একদল কুফাবাসীর মোনাফেকির চেহারাও স্পষ্ট হলো তাঁর কাছে।

অতএব, দেখা যায়, আদর্শের সংগ্রামে আল্লাহর নবীর আহালগণ, অনুসারীগণ কখনো পিছপা হন না। দ্বিতীয়ত পদে পদে বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হন, হবেন জেনেও অন্যকে সহায়তার জন্য তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েন।

তৃতীয়ত, নিজেদের জীবন, ধন-পরিজন বিসর্জন দেওয়ার ঝুঁকি নিয়ে তারা মজলুম মানবতার কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করে দেন। অতএব, কারবালায় ইমাম হোসাইন (রা.) এর মৃত্যু ঘটেনি, প্রকৃত মৃত্যু ঘটেছে পাপীষ্ঠ এজিদের। যত দিন পৃথিবী থাকবে ঘৃণা, নিন্দা, ধিক্কার আর অভিশাপ চলতে থাকবে এজিদ ও তার বাহিনীর ওপর, পক্ষান্তরে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-কে দরুদের মাধ্যমে স্মরণ রাখবে মুসলিম জাতি (আহলে বায়তের দরুদ শরিফ)। অতএব, আজীবন সত্য ও আদর্শ, ন্যায় ও সততার বিজয় উদ্ভাসিত হবে। কারবালার মর্মস্পর্শী ঘটনার মাধ্যমে সারা জাহানকে আল্লাহ সেই শিক্ষা দিয়েছেন। ওই আলোকিত শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্ব মুসলিম মিল্লাতের কল্যাণ সাধনের নিমিত্তে এই দরবারে সুদীর্ঘ ৬৬ বছর ধরে ঐতিহাসিক এই মাহফিলের আয়োজন করা হচ্ছে। এই ঐতিহাসিক মাহফিল ৬৭ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। যা চট্টলাবাসীর গৌরবের বিষয়। নবী প্রেম ব্যতীত ইসলামের নামে অরাজকতা বিশৃঙ্খলা দূর করা সম্ভব নয়।

সেই জন্য আল্লামা ইকবাল বলেছেন, “ইসলাম জিন্দা হুতাহে, হার কারবালা কি বাদ” ৯ মহররম দিবাগত রাত চট্টগ্রাম বায়েজিদস্থ গাউছুল আজম সিটি এলাকায় কাগতিয়া আলিয়া গাউছুল আজম দরবার শরিফ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শাহাদতে কারবালার স্মরণে ‘পবিত্র আশুরা মাহফিল’। এই পবিত্র মাহফিলে উপস্থিত হয়ে আহালে বায়তের ভালোবাসা হৃদয় ধারণ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর