রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিআরটিসি বিড়ম্বনা

সংশোধনের অযোগ্য যে প্রতিষ্ঠান

রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার কারণে কার্যত দেউলিয়া প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সরকারের গত এক দশকে নতুন বাস-ট্রাক কেনার জন্য বিআরটিসিকে দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। বিআরটিসির যাত্রীবাহী বাসের বহর দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪০০টিতে। তারপরও এটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়নি। দুর্নীতি-লুটপাটে বিপর্যস্ত এ প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সংস্থাটির কোনো কোনো ডিপোতে ১৪ মাস পর্যন্ত বেতন বন্ধ রয়েছে। রাজধানীর জোয়ারসাহারা ডিপোতে বকেয়া বেতনের দাবিতে দুই দফা তালা দিয়েছে কর্মীরা। এমনকি চেয়ারম্যানের অফিসেও তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ থাকায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বিআরটিসির অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়াকে সরিয়ে দিয়েছেন। নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব হাতে নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চলমান অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে তিনি সম্ভাব্য সব কিছু করবেন। তিনি যতদিন দায়িত্বে আছেন ততদিন বিআরটিসির কর্মীরা না খেয়ে থাকবে না। স্মর্তব্য, অব্যবস্থাপনা ও ধারাবাহিক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বিপুলসংখ্যক যাত্রীবাহী বাসের বহর নিয়েও লোকসানের ঘানি টানছে বিআরটিসি। এরই মধ্যে ভারতীয় ঋণের টাকায় ভারত থেকে কেনা হচ্ছে একের পর এক বাস। কিন্তু এ সংস্থার চোর মহাচোরদের কারণে বছর না যেতেই সেগুলো অচল হয়ে পড়ে থাকছে ডিপোতে। লুটপাট আর অব্যবস্থাপনার এ সংস্থাকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য বর্তমান সরকারের আমলে ১৬০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করা হলেও তা রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ই শুধু নিশ্চিত করেছে। দুর্নীতি অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার জন্য বিআরটিসির চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দেওয়া হলেও তাতে এ সংস্থার কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে তা আশা করাও কঠিন। কারণ গত চার যুগে বিআরটিসি ও লুটপাট সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে এবং এ সংস্থায় লুটেরাদের সংখ্যা এতই বেশি যে তা দু-একজন দূরের কথা দু-এক শত জনকে অপসারণ করে সুফল অর্জিত হবে না। বরং জনগণের অর্থ অপচয় বন্ধে বিআরটিসি নামের শ্বেতহস্তিটি বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবাই হবে সবচেয়ে সঠিক পদক্ষেপ। বিআরটিসি বিড়ম্বনার হাত থেকে সরকারও রক্ষা পাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর