সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

পরিবহন চাঁদাবাজি

গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

সড়ক পরিবহনের সঙ্গে চাঁদাবাজির সম্পর্ক এতই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত যে, এর একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে কল্পনা করাও কঠিন। বলা যায়, চাঁদাবাজদের হাতে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে দেশের পরিবহন খাত। দেশের রাজনীতিতে পারস্পরিক সমঝোতা ও সহমর্মিতার পরিবেশ আকাশ কুসুম কল্পনা বলে বিবেচিত হলেও পরিবহন খাতের সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক রথী-মহারথীরা একে অপরের সহযোগী হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- গত ১০ বছরে সারা দেশে সড়ক নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হওয়ার সুযোগে বাস-ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানের পাশাপাশি নিবন্ধনহীন ১২ লাখের বেশি ইজিবাইক থেকে চাঁদা তুলছে স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়ন, রাজনৈতিক সংগঠন, পুলিশসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী। রাজধানী থেকে উপজেলা সদর এমনকি ইউনিয়নের কেন্দ্রস্থল পর্যন্ত চলছে চাঁদার হাতবদল। চাঁদা না দিলে গাড়ির চাকা ঘোরে না। চাঁদাই এখন সড়ক পরিবহনের প্রধান চালিকাশক্তি। এক সময় যারা চাঁদা আদায়ের নেতৃত্ব দিতেন ক্ষমতার পালাবদলে তাদের গাড়িই এখন চাঁদাবাজির শিকার। জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক, পৌর এবং উপজেলা সড়ক, ফেরিঘাট, বাস ও ট্রাক টার্মিনাল, মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এখন প্রতিদিন ৪ কোটি টাকার বেশি চাঁদা আদায় হচ্ছে। পরিবহন মালিকদের পরিচালন ব্যয়ের একটি বড় খাত এখন অবৈধ চাঁদার টাকা। এটি কোনো কোনো রুটে জ্বালানি খরচের চেয়েও বেশি হয়ে যায়। ঢাকার চারটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ছাড়াও বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টার, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ শহরতলির পরিবহন সার্ভিসগুলোতে নিয়মিত চাঁদাবাজি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিটি জেলা শহরের বাস টার্মিনাল, ফেরিঘাট, জেলা সড়কের প্রবেশ ও বহির্গমন পথে নিয়মিত চাঁদার টাকা দিতে হয়। বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে বাসযাত্রীদের অন্তত ১০ শতাংশ হারে বেশি ভাড়া গুনতে হয়। মালামাল পরিবহনে যে খরচ লাগে তার অন্তত ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হলো চাঁদা খাত। এ বাড়তি অর্থ যুক্ত হয় পণ্যের দামের সঙ্গে। চাঁদাবাজির অর্থ প্রশাসনের সর্ব পর্যায়ে ভাগবাটোয়ারা হয় এটি একটি ওপেন সিক্রেট। জনপ্রতিনিধি নামের মহাজনরাও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। বরং চাঁদার বড় অংশ জমা হয় তাদের পকেটে। চাঁদাবাজির অশুভ চক্র ভাঙতে সরকারকে দৃঢ় প্রত্যয়ী হতে হবে। টাউট রাজনীতিবিদ ও অসৎ সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে গণপ্রতিরোধ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর