সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কারবালার শিক্ষা

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

কারবালার শিক্ষা

প্রতি বছর মহররম মাসের দশ তারিখ (আশুরা) এলেই আমরা  কারবালার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করি। ফোরাত নদীর তীরে  প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদরের নাতি হজরত হোসাইন (রা.) এবং তার পরিবারের সদস্যদের  নির্মম শাহাদাতবরণের ঘটনা শুনে ব্যথিত হই। আহত হই। মর্মাহত হই। তবে কারবালার ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি না। রসুল (সা.)  ইন্তেকালের পর হজরত আবু বকর, হজরত ওমর এবং হজরত ওসমান (রা.) পর্যায়ক্রমে মুসলমানদের খলিফা (রাষ্ট্রপতি) হন। হজরত ওসমান (রা.) শহীদ হওয়ার পর মদিনার জনগণ হজরত আলী (রা.)-কে খলিফা হিসেবে মেনে নেয়। অপরদিকে হজরত ওসমান হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করে সিরিয়ায় হজরত মুআবিয়া (রা.) বিদ্রোহ করেন এবং নিজে খলিফা হন। তিনি একটানা প্রায় ২০ বছর শাসন করেন। তার শাসনামলে শক্তিশালী মুসলিম সেনাবাহিনী গড়ে ওঠে। শাসন ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়। বিশ্বব্যাপী ইসলামের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটে। মুআবিয়ার (রা.) ইন্তেকালের পর সিরিয়ার বেশির ভাগ জনগণ ইয়াজিদকে শাসক হিসেবে মেনে নেয়। তবে কুফা নগরীর লোকেরা তাকে শাসক হিসেবে মানেনি। বরং তার মদিনায় হজরত হোসাইন (রা.)-কে চিঠি লিখে তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে এবং তাকে অনুরোধ করে তিনি যেন এসে কুফার ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তাই হজরত হোসাইন পরিবারসহ কুফার উদ্দেশে রওনা করলেন। ইয়াজিদ যখন জানতে পারলেন, হজরত হোসাইন (রা.) কুফায় আসছেন তখন দ্রুত নিজ সেনাপতি ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদকে সেনাবাহিনীসহ কুফার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার উদ্দেশে পাঠালেন। ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ এসে কুফার তখনকার শাসককে বরখাস্ত করে নিজে ক্ষমতা গ্রহণ করলেন এবং হজরত হোসাইন (রা.) ও তাঁর পরিবারকে কারবালা প্রান্তরে ঘেরাও করলেন। হজরত হোসাইন (রা.)-কে প্রস্তাব দিলেন ইয়াজিদের আনুগত্য মেনে নিতে। জনগণের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে জোরপূর্বক কুফার শাসন ক্ষমতা দখল করায় হজরত হোসাইন (রা.) কোনোভাবেই ইয়াজিদের আনুগত্য মানলেন না। তাই তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের ইয়াজিদের সেনাবাহিনী ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে নির্মমভাবে শহীদ করে দেয়। হজরত হোসাইন (রা.)  খালি হাতে হলেও আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন। হজরত হোসাইন (রা.) যদিও নির্দয়ভাবে শহীদ হয়েছেন। ত্যাগ ও আত্মত্যাগের মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তবু তিনি কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীর সব মুসলমানের অন্তরে পূর্ণ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা সঙ্গে বেঁচে থাকবেন। আর ইয়াজিদ ও তার বাহিনী বাহ্যিকভাবে বিজয় লাভ করেও মানুষের ক্ষোভ ও ঘৃণার সঙ্গে ইতিহাস হয়ে থাকবেন। প্রিয় নবীর আদরের নাতিকে হত্যা করার কলঙ্কের বোঝা বয়ে বেড়াবেন। উল্লেখ্য, হজরত হোসাইন (রা.)-কে সপরিবারে হত্যার আদেশ ইয়াজিদ সরাসরি দেননি। তিনি বলেছিলেন হজরত হোসাইন যেন কুফায় প্রবেশ করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে। সেনাবাহিনী নিজ থেকেই হত্যাকা- ঘটিয়েছে। তবু হত্যার দায় থেকে তিনি মুক্ত নন। কারণ তিনি হত্যাকারীদের বিচার করেননি। হজরত হোসাইন (রা.)-কে হত্যায় যারা অংশ নিয়েছিল তারা সবাই পরবর্তীতে কারও না কারও হাতে খুন হয়েছে।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর