সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকে শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লব বলে অভিহিত করা হলেও এটি ছিল নিজেদের সঙ্গে সোভিয়েত নেতাদের প্রতারণা। অক্টোবর বিপ্লবের বিপ্লবী কর্মকান্ডে মুখ্য ভূমিকা পালন করে সেনা সদস্যরা। তাদের সমর্থনে লেনিন তথাকথিত শ্রমিক রাজ কায়েম করেন। এ শ্রমিক রাজে সবচেয়ে বিপাকে পড়ে গরিব দুঃখী মানুষ। সোভিয়েত আমলে অনাহারে, দুর্ভিক্ষে, হত্যাকান্ডের শিকার হয়ে কমপক্ষে দুই কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। যেগুলো ছিল সরাসরি হত্যাকা- কিংবা নীরব হত্যাকা-। ঐতিহাসিকরা একমত যে, দুর্ভিক্ষ এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে বিবেচনায় আনা হলে স্তালিন ও তার সহযোগীরা লাখ লাখ লোকের মৃত্যুর জন্যে পরোক্ষ কিংবা প্রত্যক্ষভাবে দায়ী। স্তালিনের শাসনামলে আনুমানিক হিসাবে কমপক্ষে সাড়ে তিন কোটি মানুষ হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। ১৯২৬-৩৭ সালের আদমশুমারিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের জনসংখ্যা বিপুলভাবে হ্রাস পায়। অনুমান করা হয় এর আগের ৭ বছরে হত্যাকা- এবং অনাহারের শিকার হয়ে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি লোকের মৃত্যু হয়। ১৯৩১-৩৪ সালের দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছিল। ফলে অনুমান করা যায়, আদমশুমারিতে জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়া ছিল স্বাভাবিক। ১৯২৬ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সোভিয়েত ইউনিয়নের লোকসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৭০ লাখ, ১৯৩৭ সালের আদমশুমারিতে লোকসংখ্যা দাঁড়ায় আগের লোকসংখ্যার চেয়ে ১ কোটি ৪০ লাখ কম। অনুমান করা হয় ওই সময় প্রায় দেড় কোটি মানুষ অপমৃত্যু বা হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়ায় ওই আদমশুমারিকে চৌর্যবৃত্তির শুমারি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এবং গণনাকারীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়। ১৯৩৯ সালে আবার আদমশুমারি করা হয়। সে আদমশুমারিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের লোকসংখ্যা ১৭ কোটি বলে প্রচার করা হয়। ব্যাপক লোকের মৃত্যুতে জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার সত্যতা ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই স্তালিনের নির্দেশে বাড়তি জনসংখ্যা প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
স্তালিনের আমলে অপশাসনের কারণে ও ভিন্নমতাবলম্বী সন্দেহে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারাতে হয়।