শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিজ্ঞাপনে বাধা কোথায়

অপূর্ব আজাদ

স্বাধীনতার আগে ওষুধের ক্ষেত্রে দেশ ছিল প্রায় ৯০ ভাগ পরনির্ভরশীল। দেশে যেসব ওষুধ তৈরি হতো তার মান নিয়েও ছিল হরেক প্রশ্ন। গত সাড়ে চার যুগে বাংলাদেশ ওষুধশিল্পে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ওষুধশিল্পের বিকাশে বাংলাদেশের স্থান সবার শীর্ষে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপেও বাংলাদেশি ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। এটি আগামীতে দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত হবে- এমন সম্ভাবনার কথাও বলছেন অভিজ্ঞজনেরা। তবে হতাশার দিক হলো, ওষুধশিল্পের এই বিকাশের সুফল পাচ্ছে না দেশের সাধারণ মানুষ। আগ্রাসী ওষুধ বাণিজ্যে ক্রেতাস্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে নিষ্ঠুরভাবে। ওষুধের দাম, মান ও কার্যকারিতা গণমাধ্যমে প্রচারের সুযোগ না থাকায় জীবন রক্ষাকারী ওষুধ এখন মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভসহ মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফার বাহন হয়ে পড়েছে। অসুখে-বিসুখে সাধারণ মানুষ ফার্মেসি ও চিকিৎসকদের ওপর নির্ভরশীল। ওষুধ সম্পর্কে রোগী বা অভিভাবকদের জানার কোনো সুযোগ নেই বললেই চলে। অথচ চিকিৎসকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির দ্বারা প্রভাবিত। সোজা কথায়, চিকিৎসক ও ফার্মেসির ওপর ভরসা রেখেই চলছে বাংলাদেশের ওষুধ বাণিজ্য। কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ, বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান এবং দেশের বাজারে ৯৮ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি খাতে নিরবচ্ছিন্ন অবদান রাখার এই শিল্প জনসচেতনতায় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। ওষুধের উপাদান ও কার্যকারিতা নিয়ে কোনো প্রচার না থাকায় সাধারণ ক্রেতারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন ওষুধের পরিবর্তে নিম্নমানের ও নকল ওষুধ ব্যবহার করে আরোগ্যলাভের পরিবর্তে স্বাস্থ্যগত জটিলতায় পড়ছেন। চিকিৎসক ও ফার্মেসির ওপর অন্ধ নির্ভরতার কারণে বাংলাদেশের ওষুধ ও চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে রোগী এবং অভিভাবকদের মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ লোক প্রতিবেশী ভারতসহ অন্যান্য দেশে ছোটে; যা দেশের অর্থনীতির জন্য ডেকে আনছে বিসংবাদ। দেশের ওষুধশিল্পের টেকসই বিকাশের স্বার্থে এই শিল্পের বিষয়ে সাধারণ মানুষের জানা-শোনার সুযোগ সৃষ্টি জরুরি হয়ে উঠেছে। ওষুধ নীতিতে ওষুধের বিজ্ঞাপন প্রচারে যে বাধানিষেধ রয়েছে তা অপসারণের মাধ্যমে  জনগণের জানার অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে যাতে মানহীন নকল-ভেজাল ওষুধ উৎপাদন না হয় সে ব্যাপারে         থাকতে হবে সতর্ক।

           লেখক : প্রকৌশলী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর